|
|
|
|
|
স্পিনের পুনর্জন্মে
২-০ এগোলেন ধোনি রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • হায়দরাবাদ |
|
যা ছিল মাঝে অস্তমিত, তা আবার সম্মানের সিংহাসনে।
যে দেশের ভূমিপুত্র বিষেণ বেদী, এরাপল্লি প্রসন্ন, ইংল্যান্ড সিরিজ শেষে সে দেশ থেকেই ধীরে-ধীরে অন্তর্হিত হচ্ছিল স্পিন। ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞদের মনে প্রশ্ন ঘুরছিল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা সত্যিই ভারতীয় স্পিনের বংশরক্ষার যোগ্য তো? অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা চলে না মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়ার। দুই মহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানে যতটা দূরত্ব, ঠিক ততটাই বৈপরীত্য স্পিন খেলার মানসিকতায়। ইংরেজরা ভারতের ঘরের মাঠে অশ্বিনদের থেঁতলে দিয়ে যেতে পারে। বর্তমান ব্যাগি গ্রিন-রা পারে না। স্পিনের সামনে ফ্রন্টফুটে আসতে তারা ভয় পায়। অশ্বিনের এক-একটা ডেলিভারিকে মনে হয় বল তো নয়, গ্রেনেড!
মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া আর কিছু পারুক না-পারুক, ভারতীয় স্পিনের পুণর্জন্মটা অন্তত ঘটিয়ে দিয়ে গেল। যার হাত ধরে নিজাম-নগরীতে টেস্টে সোনার সমাপ্তি। চিপকে কুড়িটার মধ্যে কুড়িটা উইকেটই স্পিনাররা নিয়েছিলেন। হায়দরাবাদের হিসেবটা পনেরো (যার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিনের পাঁচ, জাডেজার তিন)। চিপকে তবু সওয়া চার দিন লেগেছিল, স্পিনের ত্র্যহস্পর্শে উপ্পলে লাগল সাড়ে তিন দিন। মঙ্গলবার অজিদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ চোখের পলকে, মাত্র দু’টো ঘণ্টায়। |
|
ছুটছে অশ্বিনের অশ্বমেধের ঘোড়া। |
হাতঘড়ি বলছে, সকাল এগারোটা চল্লিশ। ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে স্টাম্পটা তুলে নিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। দেখে বোঝার উপায় নেই, সকাল থেকে এক-একটা উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী রকম লম্ফঝম্প শুরু করে দিচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক! ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর এমন আচরণ সহজাত নয়। কিন্তু প্রেক্ষাপটটাই এমন যে, ধোনিক্ওে আবেগ ছুঁয়ে যেতে বাধ্য।
অস্ট্রেলিয়া পারবে না, জানা ছিল। হাতে আট উইকেট আর ঘাড়ে ১৯২ রানের বোঝা নিয়ে শেষ দু’দিনে টেস্ট বাঁচাতে গেলে যে কাঠিন্যের দরকার পড়ে, এই অস্ট্রেলিয়ার সেটা নেই। কিন্তু তা বলে এত তাড়াতাড়ি ধ্বংস হবে, ভাবা যায়নি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অপেক্ষা করছিলেন, কখন বলটা একটু নরম হবে। যাতে লাভ হবে স্পিনারদের। স্বাভাবিক ধারণা হল, বল শক্ত থাকলে, স্পিনটা বেশি হয়। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছিল না। ভারত অধিনায়কেরও বুঝতে সময় লেগেছে। তবে অল্প সময়ের অপেক্ষা। একটু পরেই জাডেজা এবং অশ্বিনদুইয়ে মিলে বাইশ গজে এমন এক ঘূর্ণিঝড় তুললেন যে, তার সামনে পড়ে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং লাইন আপের একটাই স্থায়ী ঠিকানা মিললহায়দরাবাদের হুসেন সাগর! সলিলসমাধি!
ক্লার্ক যে বলটায় আউট হলেন, বাঁ-হাতি স্পিনারের সেটা স্বপ্নের ডেলিভারি। নিঃসন্দেহে ‘বল অব দ্য ডে’। লেগ-মিডলে পরে বলটা যে টার্ন করে অফ স্টাম্প ধাওয়া করবে, বুঝতে পারেননি ক্লার্ক। পা বাড়িয়ে খেলে দেবেন, ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁকে স্তম্ভিত করে জাডেজার অফ স্টাম্প নিয়ে বেরিয়ে গেল! বাকিদের ক্ষেত্রে এতটা খাটাখাটনির দরকার পড়েনি। উপমহাদেশে চতুর্থ দিনের উইকেট যেমন ব্যবহার করে, উপ্পলের বাইশ গজও একই করেছে। মাঝে এক সময় পাঁচ মিনিটে গড়ে দু’টো করে উইকেট পড়ল, ২২ রানের মধ্যে উধাও সাত-সাতটা উইকেট। লাঞ্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল না, তার আগেই অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিহ্ন! হার ইনিংস ও ১৩৫ রানে। ’৯৮-এর ইডেনে আজহারের ভারতের (জয় ছিল ইনিংস ও ২১৯ রানে) পর এটা দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবধান। |
|
মহানায়কের অভিনন্দন অধিনায়ককে। একই দিনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুকুটে দুই পালক। |
আজহার অক্ষত রইলেন, কিন্তু সৌরভের রেকর্ডটা ভেঙে গেল। এত দিন দেশের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ৪৯ টেস্টে জয়ের সংখ্যা ২১। চার টেস্ট কম খেলে সংখ্যাটা আজ ধোনি পেরিয়ে গেলেন। স্পিনের-পুনরুত্থানে। যার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে ফোনে, টুইটারে, প্রেসবক্সে অজি সাংবাদিকদের বিলাপে। প্রতিক্রিয়ার ভিড় এ রকম:
এরাপল্লি প্রসন্ন: ইংল্যান্ডের অ্যাপ্রোচটা অন্য রকম ছিল। কিন্তু তবু বলব, ভারতীয় স্পিন আবার পুরনো ঐতিহ্যটা ফিরে পাচ্ছে। যেটা আমি, বিষেণ, চন্দ্ররা তৈরি করেছিলাম। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অশ্বিন যে ভাবে বল করেছে, এখানেও তাই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ওকে খেলতে ভয় পাচ্ছে। সিরিজটা ৪-০ হবে।
অজিত ওয়াড়েকর: সত্যি বলতে, ইংল্যান্ড সিরিজের পর ভারতের স্পিন বোলিং নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্পিন কাকে বলে, সেটা অধিনায়ক থাকার সময় দেখেছি। বেদী-চন্দ্র ছিল আমার টিমে। আজও ওরা থাকলে হায়দরাবাদ টেস্টটা আড়াই দিনে শেষ হয়। যা হোক, পরপর দু’টো টেস্টে স্পিনারদের এমন দাপট যখন, অশ্বিনরা কামব্যাক করছে বলতেই হবে।
|
‘‘সত্যি বলতে, ইংল্যান্ড সিরিজের পর ভারতের স্পিন বোলিং নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্পিন কাকে বলে, সেটা অধিনায়ক থাকার সময় দেখেছি। বেদী-চন্দ্র ছিল আমার টিমে। আজও ওরা থাকলে হায়দরাবাদ টেস্টটা আড়াই দিনে শেষ হয়। যা হোক, পরপর দু’টো টেস্টে স্পিনারদের এমন দাপট যখন, অশ্বিনরা কামব্যাক করছে বলতেই হবে।’’ অজিত ওয়াড়েকর |
|
ডিন জোন্স: মিকি আর্থার, স্পিন বোলিং কাকে বলে দেখলে তো? টেস্টটা শেষ হলে যাও, বাকি দিনটা তোমার স্পিনারদের দিয়ে ব্যাটসম্যানদের প্র্যাক্টিস করাও। কাজে দেবে।
অজি মিডিয়ার প্রতিনিধি: রোজ সাত-সকালে আসছি। ল্যাপটপ খোলার সময় পাচ্ছি না, স্পিনের ঝাঁঝে দু’তিনটে করে উইকেট চলে যাচ্ছে। একটাই কাজ পড়ে থাকছে। নির্বাচকদের গালিগালাজ করা।
অসম্ভব রাগ মাইকেল ক্লার্কেরও হচ্ছে। এতটাই যে, সাংবাদিকদের সামনে বলেও ফেলছেন, “রাগ হলে কী হবে, দেখানোর উপায় নেই। আমি নিজেও দায়ী।” টিমকে কঠোর নির্দেশ দিচ্ছেন২৩৭ রানে অলআউটের কোনও ক্ষমা নেই। ছুটি বন্ধ। বরাদ্দ, হাড়ভাঙা খাটুনি। ক্লার্ক ভাবতে পারেননি, পাখিপড়ার মতো স্পিন খেলার মন্ত্র শিখিয়েও লাভ হবে না। হায়দরাবাদের ফ্লাইট ধরার সময় বুঝতে পারেননি, বিজয়-পূজারা মিলে যত রান করবেন, সেটা তাঁর টিম দু’ইনিংস মিলিয়েও করতে পারবে না! মুখচোখ তাই শক্ত হচ্ছে। কথা বলার সময় কঠিন হয়ে উঠছে চোয়াল।
স্বাভাবিক। এমএসডি যে তাঁকে এ ভাবে ‘বাপি বাড়ি যা’ করে ছুড়ে ফেলবেন, কে জানত!
|
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস: ২৩৭-৯ ডিঃ
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৫০৩
অস্ট্রেলিয়া
দ্বিতীয় ইনিংস
(আগের দিন ৭৪-২) |
কাওয়ান ক সহবাগ বো জাডেজা ৪৪
ওয়াটসন ক ধোনি বো ইশান্ত ৯
ক্লার্ক বো জাডেজা ১৬
ওয়েড ক সহবাগ বো অশ্বিন ১০
এনরিকে রান আউট ০
ম্যাক্সওয়েল এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৮
সিডল ক কোহলি বো জাডেজা ৪
প্যাটিনসন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ০
ডোহার্টি নঃআঃ ১
অতিরিক্ত ১৩
মোট ১৩১।
পতন: ৫৬, ৫৬, ৭৫, ১০৮, ১১১, ১১১, ১২৩, ১৩০, ১৩০।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৬-৪-৭-০, অশ্বিন ২৮-১২-৬৩-৫,
হরভজন ১০-৭-১০-০, জাডেজা ১৮-৮-৩৩-৩, ইশান্ত ৫-২-৫-১। |
|
|
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
|
|
|
|
|