দোসরা এপ্রিল ২০১৩ কি কলকাতার বিনোদনের রাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে?
সংগঠকদের মতে, প্রশ্নটাই অবান্তর। আসলে তাঁদের বিশ্বাস ওই দিনটা কিছু যোগ করবে না। সৃষ্টি করবে। কলকাতার বিনোদনের নতুন ইতিহাস। “আপনারা যা দেখতে পাবেন তাকে বলা যেতে পারে মাদার অফ অল এন্টারটেনমেন্ট শোজ ইন কলকাতা,” দাবি করলেন সংগঠক রেড চিলিজ-এর এক আধিকারিক।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স তাদের এ বারের চ্যালেঞ্জ শুরু করছে তেসরা এপ্রিল, ইডেনে। বিপক্ষ সহবাগের দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। আইপিএল নিয়ে ন্যূনতম আগ্রহ নেই এমন ব্যক্তিও জেনে গিয়েছেন, ইডেনের উদ্বোধনী ম্যাচে শাহরুখ খান থাকবেন। যেমন থাকেন নাইটদের আর পাঁচটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। কিন্তু এসআরকে-র আসল আইপিএল অভিযান শুরু হচ্ছে তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে। আর সেটা ইডেন নয়সল্টলেক স্টেডিয়ামে। আইপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব এ বার বোর্ড দিয়েছে শাহরুখ-জুহিদের সংস্থা রেড চিলিজকে।
দিয়েছে মানে দান খয়রাত করেছে এমন নয়। রীতিমতো টেন্ডার ডেকে বিভিন্ন সংস্থার প্রেজেন্টেশন দেখার পর তবেই রেড চিলিজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। চেন্নাইয়ে গত বারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেমন সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছিল উইজক্রাফ্ট বলে একটি সংস্থা। চেন্নাইয়ে ছিলেন কেটি পেরি, ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সল্টলেকে শাহরুখ চান চেন্নাইকে ছাপিয়ে যেতে। কলকাতার মানুষকে এমন একটা অনুষ্ঠান দেখাতে যা ইতিপূর্বে তাঁরা দেখেননি।
রেড চিলিজের কিছু লোকজন এই সংগঠনের কাজেই আপাতত কলকাতায়। সল্টলেকে তারা ‘রেকি’ করছে। |
শাহরুখের সঙ্গে কি এ বার জেনিফার লোপেজকেও
দেখবে কলকাতা, নাকি হলিউডের অন্য কেউ ? |
এসআরকে-র উদ্দেশ্য এই অনুষ্ঠানে এমন একটা ককটেলের আয়োজন করা যা আজ পর্যন্ত হয়নি। তিনি মানেই বলিউড থাকবে এত দিনে সবাই জেনে গিয়েছে। টলিউড থাকবে সেটাও জানা কথা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রত্যেক টিমের ক্যাপ্টেন থাকবেন। অতএব ক্রিকেট থাকবে সেটাও জানা। এরই সঙ্গে চতুর্থ উপাদান হিসেবে সংস্থা যোগ করতে চায় হলিউডকে। আয়োজকদের শর্টলিস্টে আপাতত সবার আগে রয়েছে বেভারলি হিলসে বসবাসকারী জেনিফার লোপেজের নাম। সংগঠকরা চাইছেন এমন কাউকে আনতে যিনি একই সঙ্গে তারকা, আবার পপ গায়িকা। কিন্তু বিশ্বখ্যাত তেতাল্লিশ বছরের ‘জে লো’ কি আসবেন? যিনি একই সঙ্গে অভিনেত্রী, নর্তকী, ফ্যাশন ডিজাইনার, গায়িকা। অথবা তাঁর পর্যায়ের কেউ? হলিউড থেকে শেষ পর্যন্ত কে, পাকা খবর হয়তো পাওয়া যাবে আগামী দু’দিনে।
মঙ্গলবার রাতে মুম্বই থেকে সংগঠকদের তরফে এক জন বললেন, “শাহরুখ তো নিজে পারফর্ম করবেনই। কিন্তু দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠানে আমরা কলকাতাকে এমন হাইভোল্টেজ গ্ল্যামার দেখাতে চাই যা এই শহর চির দিন মনে রাখবে।” আধিকারিকটির কথা অনুযায়ী, “আমরা চ্যাম্পিয়ন না হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার সুযোগই পেতাম না। আর সেটা যখন পেয়েছি, সেটা মানুষকে মন ঢেলে দেখাতে চাই।”
বলিউডের অন্য খানেরা কি আসবেন? মনে হচ্ছে না। শাহরুখের ঘনিষ্ঠ নায়িকারা অবশ্যই থাকবেন। টালিগঞ্জের খুব বাছাই করা একটা অংশ থাকবে। তাদের হিসেব মতো আর থাকবে যুবভারতীর এক লাখ কুড়ি হাজার দর্শক। এই মহা জমকালো অনুষ্ঠান ইডেনে করার উপায় নেই। কারণ, পরের দিনই ক্রিকেট ম্যাচ রয়েছে। বাঁশের খুঁটি থেকে শুরু করে কিছুই পোঁতা যাবে না। ইন্ডোর স্টেডিয়াম আর একটা বিকল্প ছিল। কিন্তু সেখানে মাত্র বারো হাজার লোক ধরে। রেড চিলিজ মনে করে, শুধু শাহরুখের শো দেখার জন্যই সল্টলেক স্টেডিয়াম ভরে যেতে পারে। সেটার সঙ্গে হলিউড যুক্ত হলে ইন্ডোর কোনও বিকল্পই নয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সল্টলেকে আয়োজন করতে গিয়ে পূর্বনির্ধারিত আই লিগের ছ’টা ম্যাচ সরাতে হচ্ছে। প্রাক্তন কিছু ফুটবল তারকা যে এই নিয়ে সোচ্চার, রেড চিলিজ কর্তারা শুনেছেন। কিন্তু রেড চিলিজের লোকেদের মনে হচ্ছে, যে শহরে বিজয়োৎসব দেখার জন্য তিন লাখ লোক রাস্তায় নেমেছিল। তারা এ রকম চোখধাঁধাঁনো অনুষ্ঠান দেখার জন্য ছোট একটা ত্যাগ স্বীকারে হাসিমুখে রাজি থাকবে। যুবভারতীর সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ আতঙ্কিত হচ্ছেন এত বড় অনুষ্ঠানে অ্যাস্ট্রো-টার্ফ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? আজ অবধি আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যে সব মাঠে হয়েছে তার কোথাও অ্যাস্ট্রো-টার্ফ ছিল না। এখনকার মতো মনে হচ্ছে হাইভোল্টেজ গ্ল্যামারের তলায় সেই আশঙ্কা গুমরে থাকবে। রাতে সংগঠকদের এক জন বলছিলেন, “বিশ্বের কত দেশে টেলিভিশন আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাবলীল কলকাতার ভাবমূর্তি তুলে ধরা যাবে ভাবুন তো?” |