অরণ্যধ্বংসের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে রাজ্যে মানুষ ও বণ্যপ্রাণীর সংঘাত বাড়ছে। যার ফলে ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অসমে তিনশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেই অনুযায়ী পশুর আক্রমণে মৃত্যুর নিরিখে দেশের মধ্যে অসমের স্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র।
তথ্য বলছে, ওই তিন বছরের মধ্যে অসমে ২৯০ জন বন্যপ্রাণীর আক্রমণে প্রাণ হারান। ২০১২ সালে হাতি, বাঘ, বুনো মোষের আক্রমণে প্রায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে চিন্তিত বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন বলেন, “মানুষ ও বণ্যপ্রাণীর সঙ্ঘাতে দুই পক্ষেরই ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বহু ক্ষেত্রেই মানুষ বন দফতরকে খবর না দিয়ে নিজেরাই পশু খেদাতে চেষ্টা করেন। এতে বিপদ বাড়ে। রাজ্যের ১৫টি জেলায় ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’ গড়ছে বন দফতর। মার্চের মধ্যেই সেগুলি কাজ শুরু করবে। সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলেই যাতে মানুষ বনবিভাগকে জানাতে পারেন, সে জন্য একটি ‘হেল্পলাইন’-এর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে অসম সরকার। ইতিমধ্যে কামরূপে একটি হেল্পলাইন চালু হয়েছে।”
রাজ্যে, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারে হাতি। ২৭টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলাই হাতি-মানুষ সঙ্ঘাত-প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। রাজ্যের ২০টি অভয়ারণ্য ও ৫টি জাতীয় উদ্যানে ৫৬২০টি হাতি রয়েছে। এ ছাড়া, অরুণাচল, মেঘালয়, ভুটানের হাতিরাও অসমে ঢুকে পড়ে। গত সপ্তাহেই অরুণাচলের একটি হাতি অসমের লখিমপুরে মা-শিশুসহ ছ’জনকে হত্যা করে। পাশাপাশি, গুয়াহাটি-সহ বিভিন্ন জায়গায় লোকালয় সম্প্রসারণ ও পাহাড়-জঙ্গল সাফ করার ফলে জনবসতিতে চিতাবাঘের হানাদারির ঘটনা নিত্য ঘটছে। ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদের মতে, বন্যপ্রাণীর আক্রমণের পিছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঁচার তাগিদ রয়েছে। মানুষ প্রাণীর মুখোমুখি পড়ছে জমির তাগিদে। অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানের সীমানা ক্রমশ কমে আসছে। নতুন বসতি গড়ার জন্য কাটা হচ্ছে পাহাড়, গাছ। সে ক্ষেত্রে প্রাণীরা কোথায় যাবে? বাঘ-হাতিদের আবাস বিদ্যুতের তারে ঘেরা প্রস্তাবও রয়েছে। |