|
|
|
|
শিলচরের পার্কে নিষেধাজ্ঞা প্রেমিক-প্রেমিকাদের উপর |
উত্তম সাহা • শিলচর |
এ বছরের ভ্যালেন্টাইস্ ডে-তে শিলচরের গাঁধীবাগ বন্ধ ছিল। আর ফাল্গুনের শেষ প্রান্তে এসে পার্কে প্রবেশ নিষিদ্ধ হল প্রেমিক-প্রেমিকাদের। কাল থেকে আচমকা এই নির্দেশ কার্যকর করে শিলচর পুরসভা। ফলে মনের মানুষটির সঙ্গে কাছাকাছি বসে দু’দণ্ড কথা বলতে এসেছিলেন যাঁরা, তাদের ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরতে হয়।
কাল রবিবার থাকায় ভিড় জমেছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশিই। বেলা দুটোয় টিকিট কাউন্টার খোলার কথা। আগে থেকেই জড়ো হন অনেকে। অধিকাংশের সঙ্গে ছিল জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট। কিছুক্ষণ পরই তাঁরা শুনতে পান, প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঢোকা বারণ। তাদের ঠেকাতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা বর্তেছে স্বামী-স্ত্রীর উপরেও। একমাত্র বাচ্চাকাচ্চা থাকলেই প্রবেশাধিকার মিলবে। কী আর করেন কপোত-কপোতীরা!
শিলচর পুরসভার পার্ক উপ-সমিতির সচিব, পুর-সদস্য শম্পা ধর জানান, ‘‘অনেক দিন থেকে এ নিয়ে অভিযোগ আসছে। নিজেও বহু দিন অস্বস্তির মুখে পড়েছি। লজ্জা ছেড়ে অনেককে বলেছি, এ ভাবে বসবে না, ঘুপচিতে ঢুকবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাই নিষেধাজ্ঞাই জারি করতে হল।’’ বাচ্চা সঙ্গে না থাকলে আপাতত স্বামী-স্ত্রীকেও আটকে দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু তা পাকা সিদ্ধান্ত নয় বলে জানালেন শম্পা। তিনি বলেন, “উঠতি ছেলেমেয়েদের আটকে দম্পতিদের কী করে ঢোকানো যায়, সে ভাবনা চলছে।” তাঁর কথায়, “পার্কটি আসলে শিশুদের। বহু টাকা খরচ করে তাদের জন্য নানান সামগ্রী আনা হয়েছে। রয়েছে টয়ট্রেনও। কিন্তু বড়দের জন্য শিশুরা মুক্তমনে আনন্দও করতে পারে না।” |
|
সুনসান শিলচরের গাঁধীবাগ। ছবি: পার্থ শীল। |
এ অভিযোগ অবশ্য অনেক অভিভাবকেরও। দেবাঞ্জন চক্রবর্তী যেমন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মাঝে মধ্যেই পার্কে আসেন। কাল প্রেমিক জুটিদের পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন, ‘‘জুটি বেঁধে এরা চতুর্দিকে এমন ভাবে বসে থাকে যে শিশুরা ঘোরার জায়গাটুকুও পায় না।’’ আবার সাহিত্যিক অমিতাভ দেবচৌধুরীর কথায়, “এ তো দেখছি প্রেম জিনিসটাকে সামাজিক ভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। মনে রাখা চাই, প্রেমকে মূল্যবোধ হিসেবে মেনে নিতে আমাদের বহু বছর লেগেছিল। আর গাঁধীবাগে প্রেমিক-প্রেমিকারা বেমানান কী করে?” একই কথা প্রাক্তন পুরপ্রধান সন্দীপন এন্দ ও নেতাজি বিদ্যাভবন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়েরও। সন্দীপনবাবু বলেন, “পুরসভার কর্মচারীরা নজরদারি চালালেই পারেন। এখানে গাঁধী স্মৃতিসৌধ, ঐতিহাসিক সাপনালা রয়েছে। যাদের ঘরে শিশু নেই তাঁরা সে সব দেখতে পাবেন না? দেবাঞ্জনবাবুর কথায়, “শিলচরে যুবাদের বসার কোনও জায়াগা নেই। গাঁধীবাগেই আসে এরা। সেখানেও নিষেধাজ্ঞা! বিষয়টি ঠিক হচ্ছে না।” বরং তিনি মনে করেন, “ওই বয়সিদের এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অনুশাসন হোক, কিন্তু প্রবেশাধিকার কেড়ে নিয়ে নয়।” তবে পুরসভার বিরোধী দলনেতা, বিজেপি-র দিলীপ কুমার পাল এই বিতর্কে শম্পা ধর-দের পাশেই রয়েছেন। তিনি বলেন, “অনেক দিন থেকেই অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। যে ভাবে ছেলেমেয়েরা পার্কে বসে, তা শোভনীয় নয়। একে প্রেম বলা যায় না। বলতে হয় অশোভন আচরণ। তাই সমাজ, সংস্কৃতির কথা ভেবেই কঠোর হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে ওই পার্কে বাচ্চারা যায়।” |
|
|
|
|
|