|
|
|
|
ফেসবুকে উপায় বাতলে দিলেন নার্স, প্রসব সুস্থ শিশুর |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বাস্তব কখনও রুপোলি পর্দার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটি সর্বত্র প্রশংসিত হলেও ১০ মিনিটের প্রসব-দৃশ্য দেখে বহু সমালোচক ‘অবাস্তব’ বলেছিলেন। সেখানে তো তাও ‘দিদি’ মোনা সিংহের অবস্থা দেখে ‘বোন’ করিনা কপুর নির্দেশ দিয়েছিলেন ওয়েব ক্যামে। কিন্তু কার্বি আংলং-এর প্রত্যন্ত গ্রামে রামন ইংতিপির প্রসব বেদনার সময় কোথায় মিলবে ওয়েব ক্যাম-সহ কম্পিউটার? ভরসা বলতে ছিল মোবাইল ফোন। তাও টাওয়ার সমস্যায় কথাই বলা যাচ্ছিল না।
এই অবস্থায় মিজো মিশনারি, মারুয়াই চাকচুয়াক মোবাইলে ফেসবুক খুলে বন্ধুদের প্রশ্ন করেন, “এখনই এক মহিলার প্রসব করাতে হবে। কেউ সাহায্য করতে পারবে?” সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে, বারুইপুরের এক নার্স ফেসবুকেই চাকচুয়াককে নির্দেশ দিতে থাকেন। তাতেই সুস্থ নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। |
|
|
চাকচুয়াক |
জয়সি |
|
ঘটনায় স্তম্ভিত চিকিৎসক মহলও। কেউ বলছেন, টেলি মেডিসিন-এর যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমুখ এ ভাবেই ঘুরছে। আবার কারও মতে, মা ও নবজাতক বেঁচেছে বরাতজোরে। তাতে অবশ্য দমছেন না জয়সি রালতে নামে ওই নার্স। তাঁর কথায়, “এমন পরিস্থিতির কথা কখনও ভাবিনি। সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি, তাই অনেক।”
মিজোরামের বাসিন্দা চাকচুয়াক আপাতত সিনোড মিশন বোর্ডের হয়ে খ্রিষ্টধর্ম প্রসারের কাজ নিয়ে কার্বি আংলং-এর জাপোং গ্রামে থাকেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা হরসিং টেরন তাঁকে খবর দেন, স্ত্রী রামোনের প্রসব বেদনা উঠেছে। বাড়ির কাছে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। তাঁদের ভরসা বলতে ছিলেন চাকচুয়াকই। কিন্তু প্রসব সংক্রান্ত কোনও জ্ঞানই তো তাঁর নেই! তা হলে কী হবে? উদ্ভ্রান্তের মতো বন্ধুদের ফোন করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু টাওয়ার মিলছিল না। মাথায় আসে ফেসবুকের কথা। খড়কুটোর মতো ফেসবুকের ‘চাংচেনেস’ কমিউনিটিতে বন্ধুদের কাছে সাহায্য চান তিনি। সামনে প্রসব বেদনায় ছটফট করছেন আসন্নপ্রসবা।
তখনই এল ফোন। মিজোরামেরই কোলাশিবের মেয়ে জয়সি রালতে ডার্টল্যাঙ্গ নাসির্ং স্কুল থেকে পাশ করে বারুইপুরে থাকেন স্বামী রেভারেন্ড লালরোপুইয়া পাচাওয়ের সঙ্গে। নিজে নার্স। দুই সন্তানের জননী। তাই রামোন ও চাকচুয়াকের অবস্থা বুঝতে দেরি হয়নি। কিন্তু সিগনাল সমস্যায় ফোন কেটে গেলে জয়সি ফেসবুকে লিখে লিখেই নির্দেশ পাঠাতে থাকেন। তাঁর নির্দেশ মতো শিশুকে নির্দিষ্ট অভিমুখে ঠেলা দেওয়া, প্রসব করানো, নতুন ব্লেড যোগাড় করে নাড়ি কাটা, বাচ্চার মুখ ধোয়ানো সব নিখুঁত ভাবেই হয়।
কী বলছেন চিকিৎসকরা? স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগিরের কথায়, “এই প্রয়াস সব অর্থেই প্রশংসনীয়। টেলি মেডিসিন বলতে যা বোঝায়, এই ঘটনা তাকেই একটা অন্য শিখরে পৌঁছে দিল।” গৌতমবাবু জানান, আমেরিকায় দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আঘাতের চিকিৎসা করেন এমন এক জন চিকিৎসক এই পদ্ধতিতেই রোগী দেখেন। দূর-দূরান্তে দুর্ঘটনা হলে আহত ব্যক্তির হাসপাতালে পৌঁছতেই তো অনেকটা সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে আহতের ছবি ওই ডাক্তারকে মোবাইলে পাঠালে তিনি সেটা দেখেই প্রাথমিক কর্তব্য কী তা জানিয়ে দেন। স্ত্রী রোগ চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আদিম যুগে যে ভাবে সন্তান জন্মাত, কার্বি আংলংয়ের মেয়েটিরও তাই হয়েছে। তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে বিমানে এক বিদেশিনীরও তো এ ভাবেই সন্তান হল। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতেই মহিলা যাত্রীরা সামান্য জ্ঞান থেকে নাড়ি কাটার পদ্ধতি বাতলেছিলেন। এ ক্ষেত্রেও তেমনই। মাথা ঠান্ডা রেখে প্রসব করানো হয়েছে। প্রশংসার দিক সেটাই।”
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। গৌতমবাবুর কথায়, “মা ও সন্তান সুস্থ রয়েছে বলে কেউ অন্য কথা ভাবছে না। কিন্তু যদি পরিস্থিতি অন্যরকম হত, তা হলে সেই দায় কার উপরে বর্তাত সেটাও ভাবা দরকার।” |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|