উল্টোডাঙার যানজট সমস্যা সমাধানে এখন পুলিশের কাছে ‘পাখির চোখ’ স্লিপ রোড। তাই তড়িঘড়ি, প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সারানো হচ্ছে সেই রাস্তা।
সোমবারের পরে মঙ্গলবার। সপ্তাহের দ্বিতীয় কাজের দিনেও যানজটে থমকে যায় উল্টোডাঙা মোড়। অফিসটাইমে ভিআইপি রোডের যানজট লেকটাউন পর্যন্ত না পৌঁছলেও এ দিনও দেখা গিয়েছে গাড়ির লম্বা লাইন। হাডকো মোড়ের অবস্থাও অনেকটা সে রকমই। পরিস্থিতি সামলাতে এখন তড়িঘড়ি স্লিপ রোডের মেরামতিতে নেমেছে পূর্ত দফতর। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) প্রদীপ আদকও বলেন, “যত দিন পর্যন্ত ফের উড়ালপুলের দু’টো রাস্তাই চালু না হয়, তত দিন স্লিপ রোডই ভরসা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রাস্তাটিকে আমরা আরও চওড়া করে ঠিক করে ফেলতে চাই। উল্টোডাঙার হাডকো মোড় এড়াতে অধিকাংশ ছোট গাড়িই এখন এই পথে ইএম বাইপাস যেতে চায়। দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করে দিলে গাড়ির গতি আরও বাড়বে। যানজট অনেকটাই কমে যাবে।” |
অথচ, উল্টোডাঙার উড়ালপুল চালু হওয়ার পরে এই স্লিপ রোডের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। কারণ তখন যে গাড়িগুলি ভিআইপি রোড থেকে ই এম বাইপাসে যাচ্ছিল, সবগুলিই উড়ালপুল ব্যবহার করছিল। গত দু’বছরে স্লিপ রোড ব্যবহার কম হওয়ায় এই রাস্তার এক অংশ দখলও হয়ে যায়। রাস্তার দু’দিকে রিকশা স্ট্যান্ড, ছোট ছোট গ্যারাজ, চায়ের দোকান গজিয়ে ওঠে। এমনকী, স্লিপ রোডের এক দিকে ম্যারাপ বেঁধে রীতিমতো বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ দিন সকালে স্লিপ রোডে গিয়ে দেখা যায়, রিকশা স্ট্যান্ড ও গ্যারেজগুলি তুলে দিয়েছে পুলিশ। সোমবার ওই রাস্তার ধারে খুঁটি পুঁতে সামিয়ানা টাঙানোর আয়োজন চলছিল। এ দিন সেই খুঁটিও তুলে দিয়েছে পুলিশ। স্লিপ রোডের যে দিকে দখলদারি বেশি ছিল, সেখানে ইট পেতে রোলার চালিয়ে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় রাস্তার হালও খুব খারাপ। ফলে ওই রাস্তার পুরোটাই সারাতে হবে বলে জানান পূর্ত দফতরের অফিসারেরা।
পূর্ত দফতরের কর্মীরা জানিয়েছেন, স্লিপ রোডের মাঝবরাবর উড়ালপুলের স্তম্ভ থাকায় রাস্তাটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে বাঁ দিকের অংশের অবস্থা খুব খারাপ। সেখানেই ছিল দখলদারির সমস্যা। তাই বাঁ দিকে নতুন করে রাস্তা বানাতে হচ্ছে। নতুন রাস্তাটি হবে সাত মিটার চওড়া, পাশে দু’মিটার রাখা হবে ফুটপাথের জন্য। এখন স্লিপ রোডের ডান দিকের রাস্তা ধরে গাড়ি ভিআইপি রোড থেকে বাইপাসের দিকে যাচ্ছে। এই রাস্তাটিও আরও দু’মিটার চওড়া করা হবে বলে জানালেন পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, স্লিপ রোড তৈরি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ডান দিকের লেন দিয়ে যাবে ইএম বাইপাসগামী গাড়ি ও বাঁ দিকের লেন দিয়ে সল্টলেকগামী গাড়ি। দফতরের আশা, রাস্তাটি পুরো তৈরি হয়ে গেলে স্লিপ রোডে গাড়ির গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে। ফলে উল্টোডাঙার যানজটও অনেকটা কমবে। ডিসি (ট্রাফিক) প্রদীপ আদক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে বলে জানালেও নির্মাণকর্মীদের আশা, সাত দিনের মধ্যে এই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। |
প্রশ্ন উঠেছে, স্লিপ রোড দিয়ে ভারী বড় গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে কি না? কারণ ভিআইপি রোডের যে জায়গায় ওই রাস্তাটি শুরু হচ্ছে, তার পরেই রয়েছে একটি ছোট সেতু। কেষ্টপুর খালের উপরে এই সেতুটি কতটা ভার বহন করতে পারবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তবে সেতুটি বেশ পুরনো হলেও এখনও যথেষ্টই শক্তপোক্ত বলেই পূর্ত দফতরের দাবি। তবে উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনার পরে অতিরিক্ত সাবধানী পুলিশ ও পূর্ত দফতর। তাঁরা জানিয়েছেন, রাস্তার কাজ শেষ হলে পরীক্ষা করে দেখা হবে ছোট সেতুটি কতটা ভার বইতে পারে। প্রয়োজনে ওই রাস্তায় গাড়ির ওজন বেঁধে দেওয়া হবে। এ দিকে উড়ালপুলের যে অংশ ছোট গাড়ির জন্য খোলা রয়েছে, অর্থাৎ বাইপাস থেকে ভিআইপি রোডের দিকে যাওয়ার মুখেই কম উচ্চতার টিনের গেট করে দিয়েছে পুলিশ। ওই রাস্তা দিয়ে বড়, উঁচু গাড়ির চলাচল আটকাতেই এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
|