উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরের দিন ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। আর মঙ্গলবার ওই এলাকা হয়ে দাঁড়াল শিক্ষাকেন্দ্র।
ডাক্তারি ছাত্রদের তাঁদের শিক্ষকেরা অনেক ক্ষেত্রে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য রোগীদের ওয়ার্ডে নিয়ে যান। ঠিক সে রকমই এ দিন দেখা গেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষকেরা তাঁদের ছাত্রদের নিয়ে এসেছিলেন ওই ভেঙে পড়া উড়ালপুলের কাছে। বিরল ঘটনার ‘কেস স্টাডি’ হাতে কলমে দেখানোর জন্য ছোট ক্লাসও হয়ে গেল ভি আই পি রোডের ধারে খালের পাশে। তবে শুধু শিক্ষক-ছাত্রেরাই নয়, এ দিন দিনভর ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে প্রবীণ ও অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদেরও। তাঁরা জানান, দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়, যা তাঁদের অভিজ্ঞতাকেও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে।
সকাল বারোটা নাগাদ দেখা গেল দশ-বারো জন ছাত্র ভি আই পি রোডের খালপাড়ের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উড়ালপুলের ভাঙা অংশ দেখছেন। কেউ কেউ আবার ক্যামেরা দিয়ে ছবিও তুলে নিচ্ছেন। ওই ছাত্রদের উড়ালপুলের ভাঙা অংশের দিকে তাকিয়ে বোঝাচ্ছেন এক জন শিক্ষক। সম্ভাব্য কী কী কারণে একটা ৪০ মিটারের মতো বড় ডেক উড়ালপুল থেকে ভেঙে পড়তে পারে, তা-ই বোঝাচ্ছিলেন ওই শিক্ষক। সেতুর বেয়ারিংগুলি এর জন্য দায়ী, না পিলারের টপ ক্যাপের কংক্রিটের মান খারাপ ছিল? ছাত্রদের এ রকম নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন শিক্ষক। যে ডেকটি ভেঙে পড়েছে, তার মধ্যে আর একটি স্তম্ভ বসালে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত কি না, সেই প্রশ্ন করছিলেন ছাত্রেরা। যে ডেকটি ভেঙে পড়েছে, তার বাঁকটি ঠিক কতটা, সেই নিয়েও হিসেব নিকাশ হল। ওই ছাত্রেরা জানালেন, তাঁরা সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ এলাকার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। এ রকমই এক ছাত্র কৌশিক ঘোষ বলেন, “ঘটনার পরের দিন, অর্থাৎ সোমবার আমরা ক্লাসে স্যারকে বলি, ওই ভেঙে যাওয়া উড়ালপুল দেখতে যাব। স্যারও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। তাই আমরা এ দিন ঘটনাস্থলেই চলে এসেছি।” |
তবে শুধু ছাত্রেরাই নয়, এসেছেন প্রবীণ ও অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররাও। দুপুর তিনটে নাগাদ দেখা গেল ঘটনাস্থলে এসেছেন বাণীব্রত রায় ও বলরাম মুখোপাধ্যায় নামে দুই অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। তাঁরা জানালেন, কোনও বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল বা কোনও সংস্থা থেকে তাঁদের পাঠানো হয়নি। তাঁরা এসেছেন নিজেদের উৎসাহেই। বাণীব্রতবাবু পূর্ত দফতরের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। এখন তিনি নিজে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় কর্মরত। তিনি বলেন, “এ রকম ঘটনা তো আগে কখনও দেখিনি। তাই নিজের চোখে দেখতে এলাম। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এখান থেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে এলাম।” বলরামবাবু বলেন, “এ রকম শক্তপোক্ত সেতু ভেঙে পড়লে তার বেয়ারিং থেকে শুরু করে গার্ডার কী রকম অবস্থায় থাকে, তা-ই দেখতে এসেছি ও জানতে এসেছি।” ভেঙে যাওয়া ডেকের বিভিন্ন অংশ তাদের ছাত্রদের দেখাবেন বলে ওই দুই ইঞ্জিনিয়ার বেশ কিছু ছবিও তুলে নিয়ে যান।
এ দিনও কিন্তু দিনভর দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীদের ভিড় সামলাতে পুলিশ হিমশিম খায়। ঘটনাস্থলের চার দিকে বেড়া দেওয়া থাকলেও অনেকেই পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে তার ভিতরে ঢুকে পড়েছেন। |