কর্মী নিয়োগ ঘিরে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেসও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের রামপুরহাট বিভাগীয় দফতরে বিক্ষোভ দেখাল কংগ্রেস। সোমবারই ওই দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদে ৩৩ জনের নিয়োগকে ঘিরে প্রশ্ন তুলেছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটি। ওই নিয়োগকে ঘিরে এ বার বেনিয়মের অভিযোগ তুলল কংগ্রেসও। নিয়োগের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে রামপুরহাট শহর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওই দফতরের ছাঁটাই হওয়া ন’জন অস্থায়ী কর্মীকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে নির্বাহী বাস্তুকারকে তাঁরা এ নিয়ে একটি স্মারকলিপিও দেন।
কংগ্রেসের অভিযোগ, ওই নয় কর্মী দীর্ঘদিন ধরে সেচ দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা ছাঁটাই হয়ে আছেন। অথচ একই পদে রাজ্য সরকার কোনও রকম বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে এবং পরীক্ষা না নিয়েই ৩৩ জনকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করেছে। রামপুরহাট ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি উত্তীয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই ৯ জন কর্মী দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ওই দফতরে কাজের মধ্য দিয়ে সেবা দিয়েছেন। নতুন করে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে ওই ন’জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল।”
এ দিনের আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের মধ্যে আশিস পাল, প্রদীপ পাল, গৌর লেট-রা বলেন, “সেই ১৯৮৫ সাল থেকে এই দফতরে কখনও মাস্টার রোলে দৈনিক মজুরিতে, কখনও মাসিক বেতনে কাজ করেছি। দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ করার পরে আমাদের ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। অথচ নতুন নিয়োগে আমাদের বঞ্চিত করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া হল।” দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের বিষয়ে ভাবার অনুরোধ রেখেছেন আশিসবাবুরা।
তবে ওই ৩৩ জনের নিয়োগ-পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্ষোভে সামিল হওয়া আইএনটিইউসি নেতা অভিজিৎ মণি। তিনি বলেন, “এই নিয়োগের বিষয়ে কি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী বাস্তুকার আদৌ কিছু জানতেন? নিয়োগের ক্ষেত্রে তো দেখাই যাচ্ছে কোনও রকম বিজ্ঞপ্তি জারি বা পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি রাজ্য সরকার। কিন্তু এই নিয়োগে কি সংরক্ষণ আইন বা প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো বিষয়গুলিও মানা হয়েছে?” প্রশ্ন ওঠার পর থেকেই ওই নিয়োগে তাঁদের বিশেষ কোনও ‘ভূমিকা’ নেই বলেই দাবি করেছেন দফতরের আধিকারিকেরা। ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের রামপুরহাট বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার তরুণ রায়চৌধুরীর দাবি, “গত শুক্রবার সরকারি নির্দেশনামা পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করেছি মাত্র। এর বাইরে ওই নিয়োগ নিয়ে আমার কিছু জানা নেই।” অন্য দিকে, ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুজিত কোনার জানিয়েছেন, চুক্তির মাধ্যমে যে সমস্ত ব্যক্তিকে রামপুরহাট বিভাগে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের ‘অ্যাপোয়েন্টিং অথরিটি’ তিনি-ই। তাঁর যুক্তি, “ওই নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা-পদ্ধতি মানা হয়েছে কিনা তার উত্তর ‘ডিরেক্টর অফ চিফ ইঞ্জিনিয়ার’-এর দফতরই জানে। সেখান থেকেই তালিকা পাঠানো হয়েছিল। সেই তালিকা মেনেই আমাকে নিয়োগ করতে হয়েছে।”
কংগ্রেস অবশ্য তাঁদের এই যুক্তি শুনতে রাজি নয়। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে আরও বড় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়ে অভিজিৎবাবু বলেন, “এই নয় জন কর্মীর চাকরির বিষয়ে সেচ দফতরকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে আগামী দিনে রামপুরহাট বিভাগীয় দফতরের সামনে ওই কর্মীদের পরিবারের লোকজন থালা, বাটি নিয়ে ধর্নায় বসবেন।”
সোমবারই রামপুরহাট বিভাগের ওই দফতরে ৩৩ জন নতুন কর্মী কাজে যোগ দিয়েছেন। রাজ্য সরকার চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদে এক বছরের চুক্তিতে মাসিক ৬,৬০০ টাকার ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগপত্র দিয়েছে। তারপরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রায়গঞ্জ ও বর্ধমানেও একই ভাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
|