গরম পড়তে শুরু করেছে। পানীয় জল নিয়ে মারামারিও শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ এখনও বিশ বাঁও জলে আসানসোলের ডিহিকা জলপ্রকল্প। ফলে সামনের গরমেও পানীয় জলের সঙ্কট থেকে রেহাই পাওয়ার আশা করছেন না শহরবাসী। এ দিকে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেটি রূপায়ণে আর্থিক টানও দেখা দিয়েছে বলে জানান পুর কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশন প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণাধীন এই জল প্রকল্পের অনুমোদন আসে ২০০৬ সালে। ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। বামেদের দখলে থাকা তৎকালীন আসানসোল পুরবোর্ড ২০০৭ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা ইস্তক বাম পুরবোর্ড সেই কাজ শেষ করতে পারেনি। ২০০৯ সালের জুন মাসে কাজ অর্ধসমাপ্ত থাকাকালীন পুরসভা থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয় বামেরা। ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। কিন্তু তার পরে প্রায় চার বছর কেটে গেলেও জল প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারল না তারা। অথচ শপথগ্রহণের পরে মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার অধিবেশনে প্রতিশ্রুতি দেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হবে ডিহিকা জলপ্রকল্প। ২০১৩-এর গরম পড়ার আগেই পর্যাপ্ত পানীয় জল পাবেন শহরবাসী। কিন্তু এখন তার কোনও আশাই দেখছেন না বাসিন্দারা। মেয়র অবশ্য এ জন্য বামেদেরই দায়ী করেছেন।
|
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্ব যৌথ ভাবে বর্তায় এডিডিএ এবং পুরসভার উপরে। মেয়র তাপসবাবু ও জল দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামের যুক্তি, ২০০৯ সালে তাঁরা পুরসভার ক্ষমতায় এলেও সেই সময়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন বাম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁদের অভিযোগ, বংশগোপালবাবু পুর কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা না করায় প্রকল্পটি বাধা পায়। ২০১১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন বংশগোপালবাবু। তাঁর জায়গায় আসেন মেয়র তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেও কেটে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। তাপসবাবুর যদিও দাবি, “প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি।” বামেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায় এবং এডিডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরী জানান, প্রকল্পে হাত দেওয়ার দু’বছরের মধ্যেই তাঁরা ডিহিকায় প্রকল্প গড়ার জমি কিনেছেন। হিরাপুর, বকবাঁধি, মহীশিলায় জলাধার বানিয়েছেন। আরও কিছু জলাধার তৈরির জায়গা কিনেছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাইপ বিছিয়েছেন। বংশগোপালবাবুর দাবি, “ওরা পুরসভার ক্ষমতা দখলের পরে আমি জলপ্রকল্প নিয়ে একাধিক বৈঠক ডেকেছি। ওরা এক বারও আসেননি। অসহযোগিতা করেছেন। ফলে প্রকল্প মার খেয়েছে।”
এ ভাবেই পারস্পরিক দোষারপে এতগুলো বছর কেটে গেলেও অধরাই রয়ে গিয়েছে জলপ্রকল্প। ৫০টি ওয়ার্ডে কমবেশি সাড়ে পাঁচ লক্ষ বাসিন্দা সমস্যায় পড়েছেন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও পুরসভার কালাঝরিয়া প্রকল্প থেকে পুরসভা অঞ্চলে বর্তমানে জল সরবরাহ হয়। কিন্তু জনসংখ্যার পাশাপাশি চাহিদা প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় শহরবাসীকে পর্যাপ্ত জলের জোগান দিতে পারছে না এই দু’টি কেন্দ্র। |
এই গরমেও যে শহরবাসী পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগবে, তা স্বীকার করেছেন জল দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “এই বছরেও প্রকল্প শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখছি না। জানি না, কী ভাবে সামাল দেব।” তাঁর দাবি, প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হওয়ায় খরচ একশো কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ কোটি হয়ে গিয়েছে। রবিউল ইসলামের আশঙ্কা, খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি মাঝপথে বন্ধ না হয়ে যায়। খরচ বাড়ার ব্যাপারটি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিকে লিখিত জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। সম্প্রতি তাপসবাবুর বদলে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান পদে এসেছেন দুর্গাপুরের বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও জানান, প্রকল্পটি এই বছরে শেষ না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। তবে কাজ এগোচ্ছে বলে তাঁর দাবি। |