|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
হলুদ মুখো হ্যাংলা |
এতেই আনন্দ। এতেই দুঃখ। আবার এতেই প্রেম নিবেদন। আবেগ
প্রকাশের নতুন মাধ্যম ‘ইমোটিকন’। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
দু’দিন হল আলাপ হয়েছে অয়ন আর সৌমিলির। কোথায়? কোথায় আবার, জেন ওয়াইয়ের ঠেক ফেসবুকে।
গত দু’রাত নিয়ম করে এগারোটা-বারোটার চ্যাট পর্ব চলছিল। মনোমালিন্য শুরু হল ফেসবুক-বন্ধুত্ব তৃতীয় দিনে পড়তেই। সৌমিলির অভিযোগ, ওঁর চ্যাটের ঠিকঠাক উত্তর দেয় না, অয়ন বড়ই ‘ইনসেনসিটিভ’।
অয়নের সমস্যা কিন্তু ‘ইনসেনসিটিভ’ হওয়া নয়। আসলে অনেক চ্যাটের মানেই আজকাল বুঝতে পারছেন না অয়ন। প্রথম দু’দিন তো চ্যাটে পুরো বাক্যই লিখতেন সৌমিলি। “অনেক ‘ইমোটিকন’-এরই আমি মানে বুঝতে পারি না। মানেই যদি না বুঝলাম, ইমোশনটা ধরব কী করে? কখনও কখনও মনে হয় ‘ইমোটিকন’-এর একটা ডিকশনারি থাকলে হত,” হাসতে হাসতে বলছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অয়ন। চ্যাটের ভাষায় রপ্ত হলেও ‘ইমোটিকন’-এ এখনও ততটা স্বচ্ছন্দ নন।
অয়নের মতো ‘ইমোটিকন’ স্বল্প বোদ্ধারা তাই আজ বেশ চাপে চ্যাটরুমে। আর শুধুই কী চ্যাট! ওয়াটস্অ্যাপ, বিবিএম, জি-টক, স্কাইপ এমনকী সাদামাঠা এসএমএস-ও তো এখন হাজারো নতুন ‘ইমোটিকন’-এর মিছিল। |
|
|
মুখের মিছিল... |
‘ইমোটিকন’। আবেগের গ্রাফিক অভিব্যক্তি। মন খুশ, তো স্টেটাসে একটা :) দিয়ে দিন, আর ‘মন খারাপ করা বিকেল মানেই’ :(
স্মাইলি আর তার ‘রামগরুড়ের ছানা’ সহোদর ফ্রাউনি নিয়ে তেমন চাপ নেই। দু’জনের বয়সই তো তিরিশ পেরিয়ে গেল। সমস্যা তাদের কচিকাঁচাদের নিয়ে।
যেমন শুভদীপ। ক্লাস কেটে সিসিডি-তে হ্যাং আউট করার প্ল্যান কষেছেন একদিন। অনুপস্থিত দুই বন্ধুকে সেটা জানিয়ে টেক্সটও করে দিয়েছেন। এক জনের থেকে উত্তর এল O.o। অন্য জন পাঠাল (Y)। “বোঝো কাণ্ড!” হাসতে হাসতে বললেন শুভদীপ।
আশুতোষ কলেজের ছাত্র সৌরভের সমস্যাটা ছিল আরও মারাত্মক। গত বছর তাঁদের ব্যাচের দেবস্তুতিকে প্রোপোজ করেছিলেন বিবিএম-এ। দেবস্তুতি উত্তরে পাঠিয়েছিলেন ‘@>-->-- @>-->--’। কোনও ক্লু ছিল না অয়নের। হ্যাঁ-না বোঝা তো দূর অস্ত, জিনিসটা খায় না মাথায় দেয়, তা-ই জানতেন না সৌরভ। বন্ধু সুপ্রতিম সমাধান করে দিয়েছিলেন। দেবস্তুতি আসলে ওঁকে গোলাপ ফুল পাঠিয়েছিলেন। হাসতে হাসতে সৌরভ বললেন, “অর্থ উদ্ধার না করতে পারলে তো প্রেমটাই কেঁচে যেত!” |
কান্না-হাসির দোল দোলানো |
এত ‘ইমোটিকন’-এর দরকারটাই বা কী? “আরে, আমাদের কি হাসি আর কান্না ছাড়া কোনও ইমোশন নেই নাকি! রাগ আছে, অভিমান আছে... তাদের আবার মাত্রা আছে। সেগুলো তো বোঝাতে হবে,” জানালেন বছর তেইশের মনীষা। আর সে কারণেই হাজির এই নতুন যুগের ইমোটিকন।
তবে ইমোটিকন পছন্দ করেন না এমন লোকেরও কিন্তু অভাব নেই। “হলুদ রংটাই আমার খারাপ লাগে। মেসেজে তাই দাঁত বের করা হলুদ মুখটা দেখলেই মাথা গরম হয়ে যায়,” মন্তব্য আর এক জেন ওয়াই সদস্য শ্রীপর্ণার। |
কোন কথা যে বলি |
সমস্যা যে শুধু ইমোটিকনের চেহারা নিয়ে, তা তো নয়, সমস্যা তাদের ব্যবহার নিয়েও। যেমন ধরুন, কখন ;) ব্যবহার করবেন, আর কখনই বা :p দেখাবেন? “জানি না এর কোনও গাইড বই আছে কি না। আমি তো কেতা মারতে ‘চোখ মারি’, আর কারওকে খচাতে হলে ‘জিভ’ বের করি,” বললেন সৌম্য।
বাস্তবে কিন্তু ইমোটিকনের ব্যবহার নিয়ে অনলাইনে গাইড বই http://www.netlingo.com/smileys.php বা অয়নের চাহিদার অভিধান এমনকী এনসাইক্লোপিডিয়া পর্যন্ত http://encyclopedia2.thefreedictionary.com/Smiley+codes আছে। তিরানব্বই পাতার ছাপানো বই ‘স্মাইলিজ’ও আছে। সেটা আবার নিয়মিত আপডেটেড হয় জেন ওয়াইয়ের চাহিদার তালে তাল মিলিয়ে। |
মুখ দিয়ে যায় চেনা |
ইমোটিকনের রূপ নিয়ে আর এক সমস্যায় পড়েছিলেন শৌভিক। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করেন এক অনলাইন তথ্য সংস্থায়। নতুন যুগের ‘ইমোটিকন’ও বেশ স্বচ্ছন্দ। অফিসে সে দিন পুরোনো ইংরেজি সাহিত্যের অনলাইন লাইব্রেরির কাজ চলছিল। “যত বার একটা লাইন লিখি, দেখি লাইনের শেষে একটা লম্বা হাসিমুখ। আবার টাইপ করলাম, এ বারও একই অবস্থা! কেউ বুঝতে পারছি না সমস্যা কোথায়। অনেক মাথার চুল ছেঁড়ার পর আবিষ্কার করলাম, অটো ইমোটিকন অন থাকায় কোলনের পরে ডি বসালেই তৈরি হচ্ছে ওই ‘গ্রিন’!”
মোবাইল বা ট্যাবলেট পিসি-তে গ্রাফিক্স থাকলে তো কথাই নেই। দিব্যি ইমোটিকনের ছবি দেখে নিতে পারবেন। আর এখন ইমোটিকন বাছার ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা অগাধ। ‘ওয়াটস্অ্যাপ’-এই তো এখন আর পুরোনো রদ্দি ‘ইমোটিকন’-এ আটকে পড়ে থাকতে হয় না, অ্যান্ড্রয়েড স্টোর থেকে দিব্যি নিত্যনতুন ইমোটিকন ইন্সটল করে নেওয়া যায়। ফেসবুকও সম্প্রতি একগাদা নতুন ইমোটিকনের সম্ভার তুলে দিয়েছে ‘স্টেটাস আপডেট’কে আরও মজাদার করে তুলতে।
আর কী, :( করে ‘রামগরুড়ের ছানা’ হয়ে থেকে তো কোনও লাভ নেই। বরং জেন ওয়াইয়ের স্টাইলে একবার :) দিয়ে দিন।
|
স্মাইলি |
|
ইমোটিকনের সংসার |
• বয়স: ৩১
• জন্ম: কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি
• রং: হলুদ
• স্বভাব: সদাহাস্য
• সিনেমায় মুখ দেখানো: অনেক বার, এমনকী
রবার্ট জেমিকসের ‘ফরেস্ট গাম্প’-এও হাজির
• সহোদর: ফ্রাউনি, তবে এর মুখে হাসি নেই একদম |
|
o.O |
ভাবছি |
3:) |
শয়তানি বুদ্ধি ঘুরছে মাথায় |
(Y) |
লাইক ইট |
\m/ |
ইউ রক |
:{ |
কী |
|
|
|
|
|
|