|
|
|
|
কলকাতার ছবিতে বেওয়াচ অভিনেত্রী |
পাঁচ দেশের অভিনেত্রী। দু’ঘণ্টার ফিচার ছবিতে। বিষয় নারী নির্যাতন।
পরিচালক সুমনা মুখোপাধ্যায়-য়ের সাক্ষাৎকার নিলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
‘বেওয়াচ’-এর অভিনেত্রী কলকাতার পরিচালকের ছবিতে। কী ভাবে সম্ভব হল এটা? মেলিসা বিগস্ একজন হলিউড অভিনেত্রী। ‘বেওয়াচ’-এর দু’টো সিজনে অভিনয় করেছে। তা ছাড়াও ক্যামিও করেছে ‘লাকি টাউন’ বলে একটা ছবিতে। যেখানে ওর সহ-অভিনেতা ছিল জেমস্ কান আর ক্রিস্টিন ডানস্ট। ‘রাশ আওয়ার ২’, ‘শার্ক স্কিন ৬’ আর ‘হার্ট অ্যান্ড সোল’-এও অভিনয় করেছে। অবশ্য আমার ছবি, ‘ড্রিমজ দ্য মুভি’-তে ওর ইমেজ ‘বেওয়াচ’-এর থেকে ৩৬০ ডিগ্রি আলাদা। ও এখানে এক জন প্রিন্সিপালের ভূমিকায় রয়েছে।
মেলিসাকে রাজি করালেন কী করে? ছবিটি বানানোর আগে আমি অনেক অভিনেতাকে মেল পাঠাই। জানাই যে আমি একটা মহিলাকেন্দ্রিক ইংরেজি ফিচার বানাতে চলেছি। বিষয়বস্তু মহিলাদের ওপর অত্যাচার। সেটা কিন্তু শুধুমাত্র অনুন্নত দেশের মহিলাদের কাহিনি নয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা কিছু সত্যকে অস্বীকার করতে পারি না। যেমন ঘরোয়া হিংসা, যৌন হয়রানি, বাল্য বিবাহ, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। আমার ছবিটা এই সব দৃষ্টান্তই তুলে ধরে। মেলিসার এই বিষয়টি ভাল লাগে। ২০১২-র অক্টোবর মাসে হরিয়ানার একটা গ্রামে শু্যটিং করে ও।
এ ছাড়া পোল্যান্ডের এক মডেলকে দিয়েও তো আপনি অভিনয় করিয়েছেন? হ্যাঁ, নাতালিয়া জ্যানোসেক ২০০৮ সালে পোল্যান্ডের হয়ে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এখন বলিউডে একটা ছবিও করছে। আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ। শুধু মেলিসা বা নাতালিয়া নয়, আমি পাঁচটা দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। সেরেনা লোরেন এক জন ব্রিটিশ অভিনেত্রী। ‘ইস্টানডার্স’, ‘গ্রেঞ্জ হিল’, আর ‘ম্যান চাইল্ড’-এর মতো টিভি সিরিজেও ও অভিনয় করেছে। সেরেনা আমার ছবিতে এক সমকামীর চরিত্রে। আর আছে ডার্লিন মোর। ও ‘বিগ ফিশ’, ‘রানওয়ে জুরি’ আর ‘রে’-র মতো ছবিতে অভিনয় করেছে। |
|
মেলিসা বিগস্ এবং সুমনা মুখোপাধ্যায় |
আপনার কি মনে হয় একজন পুরুষ এবং মহিলা পরিচালক একটি বিষয়কে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন? কিছু সময় সেটা ঠিক। কারণটা অনেকটাই মনস্তাত্ত্বিক। পরিচালকদের লিঙ্গভেদে আমি বিশ্বাস করি না। এই ছবির গবেষণা করতে গিয়ে বুঝেছি যে নিপীড়িত মেয়েরা তাদের মনের কথা সহজে একজন পুরুষকে বলতে চায় না। মেয়েদের কাছে কথাগুলো বলতে হয়তো একটু সহজ বোধ করে। আমার ছবিটা মহিলাদের নিয়ে। প্রযোজক মহিলা। চিত্রগ্রাহকও তাই।
এত লাঞ্ছনার গল্প বলেও ছবিটির নাম ‘ড্রিমজ দ্য মুভি’ কেন? আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে অনগ্রসর শ্রেণির মেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াশোনা করানো হয়। প্রত্যেকটি মেয়ের কী অসম্ভব জীবনীশক্তি! লাঞ্ছনা সহ্য করেও তারা কখনওই পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চায় না। প্রতিটা মানুষ সমাজে নিজের প্রাপ্য সম্মান চায়। সেটাই তার স্বপ্ন। সেটাই তুলে ধরেছি আমার ছবিতে। তাই ছবির নাম ‘ড্রিমজ দ্য মুভি’।
গবেষণা করতে গিয়ে জীবন পালটে দেওয়ার মতো কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে? সতেরো আঠারো বছরের মেয়েদের দেখেছি পঞ্চাশ বছরের পুরুষের সঙ্গে বিয়ে হতে। এটা কোনও ধর্মবিশ্বাস নয়। শুধু বৌ কেনাবেচার গল্প। যাকে বলে যৌন দাসত্ব। দেখেছি একটি মেয়েকে কী ভাবে ষোলো বার গর্ভপাত করানো হয়েছে শুধুমাত্র একটি পুত্রসন্তানের জন্ম না দিতে পারার অপরাধে! শুনেছি এক গ্রামে এক সদ্যোজাত মেয়েকে চারপয়ের তলায় পিষে মারা হয়েছিল। প্রতিবাদ করতে পারেনি কেউ।
খাপ পঞ্চায়েত দেখিয়েছেন? সরাসরি ভাবে খাপ পঞ্চায়েত দেখাইনি। তবে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার একটি ঘটনা আছে ছবিটিতে।
এত কিছুর পরেও কি নারী দিবসের কোনও তাৎপর্য খুঁজে পান? না, পাই না। প্রত্যেকটা দিনই তো নারী দিবস। অত্যাচার সারা বিশ্ব ধরেই হচ্ছে। শুধু মুখগুলো পালটে যাচ্ছে। আমেরিকাতে কাগজ খুললেই দেখবেন, রোজ মেয়েরা খুন হচ্ছে। কারও স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড বন্দুক বার করে খুন করছে। ড্রাগ নিয়েও আছে নানা সমস্যা। এক দিকে ড্রাগের নেশা। অন্য দিকে নানা ভাবে শোষণ। এ এক অদ্ভুত চক্র। |
|
|
|
|
|