মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করে কিছু সাহায্য পেয়েছেন। আরও টাকা চাই। প্রশাসনের কর্তা, মন্ত্রী, আমলাদের কাছে নিয়ম করে চিঠি পাঠাচ্ছেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর প্রাক্তন লিঙ্কম্যান অমল রায়। সকলে আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ হয়নি। তাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের দ্বারস্থ হন অমলবাবু। তাঁর আবেদন, “সরকার আমাকে সাহায্য করেছে। তা দিয়েই আমার চলে যেত। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আমি অসুস্থ থাকায় ভাল করে কাজ করতে পারছি না। সে জন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আশা করি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী আমার আবেদনে সাড়া দেবেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, “আমার কাছে আবেদনপত্র এলে নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখে যা করণীয় করব।”
অমলবাবু ছিলেন কামতাপুর পিপলস্ পার্টির জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের সভাপতি। প্রায় ২ বছর জেলেও ছিলেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে রাজ্য সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্প ‘নবদিশা’ কার্ড হাতে পান। সেই কার্ডের সাহায্যে সরকার থেকে ঋণ পান। কৃষিকাজ এবং কৃষিজাত দ্রব্যের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু, বাইক দুর্ঘটনা জখম হওয়ায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় তাঁর। গত চার বছর ধরে সরকারের কাছে বার বার সাহায্যের আশায় আবেদন করেছেন তিনি। জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার দক্ষিণ বেরুবাড়ির মানিকগঞ্জের বাসিন্দা অমল রায় ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কামতাপুর পিপলস্ পার্টির জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের সভাপতি ছিলেন। ২০০০ সালে কেএলও জঙ্গিদের লিঙ্কম্যান সন্দেহে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ২০০২ সালে তিনি ছাড়া পান। ২০০৬ সাল কেএলও নবদিশা কার্ড পান। ২০০৭ সালে এই নবদিশা কার্ডের জন্য রাস্ট্রীয় সমবিকাশ যোজনায় ঋণ পান একটি রাস্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক থেকে। বিভিন্ন সময় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঋণ পান। ওই বছরের মে মাস থেকে টাকা হাতে পেয়ে কৃষি জমি চাষ এবং কৃষিজাত দ্রব্য কেনাবেচার ব্যাবসা শুরু করেন। এক লক্ষ টাকা শোধ দেন। পরে আবার এক লক্ষ টাকা ঋণ নেন। বাড়িতে গুদাম ঘর করে কৃষিজাত দ্রব্য মজুত করেন। পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমি চাষ করে বেশ চলছিল। ২০০৯ সালে বাইক দুর্ঘটনায় তাঁর পায়ের হাড় ভেঙে যায়। এক বছর ধরে উত্তরবঙ্গ নেডিকেল কলেজে চিকিৎসা চলে। বহু টাকা খরচ হয়ে যায়।
২০১১ সালে চলাফেরার মত পরিস্থিতি হয় তাঁর। ইতিমধ্যে তাঁর বড় মেয়ে পুষ্পিতা মালদহের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। তাঁর পড়াশোনা চালানোর জন্যে রাজ্য সরকারের তপশিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের কাছে ৪ লক্ষ টাকার আবেদন করেন। ২ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর হয়। হাতে পান ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। সেই টাকা এবং সকলের সাহায্য নিয়ে তিনি তাঁর পড়াশোনা চালাচ্ছেন। এখন তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাকি এক বছরের জন্যে তাঁর আরও এক লক্ষ টাকা দরকার।
মেজ ছেলে অরিন্দম রায় হলদিবাড়ি হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে। ছোট মেয়ে মৌমিতা মানিকগঞ্জ হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতে মা ও স্ত্রী রয়েছেন। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও মল্লিকা সেনগুপ্ত বলেন, “ওঁর আবেদনপত্রটি যথাস্থানে পাঠানো হয়েছে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র জানান, তাঁর কাছে আবেদনপত্র পৌঁছলে তিনি নিশ্চয়ই কিছু করবেন। অমলবাবু বলেন, “আমি নিজের জন্য কিছু চাই না। শুধু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিক রাজ্য সরকার।” |