প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে র্যাগিং করার অভিযোগে রায়গঞ্জ পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার সকালে কলেজের হস্টেল থেকে ওই পড়ুয়াদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বেআইনি আটক, মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে জামিনযোগ্য ৩৪১, ৩২৩, ৫০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করে। সেই সঙ্গে জামিনযোগ্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোহিবিশন অফ র্যাগিং ইন এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট অ্যাক্ট ২০০০’ আইনেও মামলা দায়ের হয়। ধৃতদের এ দিন রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক অঞ্জনকুমার সেনগুপ্ত তাঁদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম পলাশ সরকার, কৃষ্ণেন্দু কর্মকার, কৃষ্ণেন্দু পাণ্ডে, পরিমল মাকাল এবং সোমনাথ দাস। পলাশ ও দুই কৃষ্ণেন্দু অটোমোবাইল বিভাগের ছাত্র। পরিমল ও সোমনাথ সিভিল বিভাগের। পলাশের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর এলাকায়। কৃষ্ণেন্দু কর্মকারের বাড়ি বাঁকুড়া ও কৃষ্ণেন্দু পান্ডের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর এলাকায়। পরিমল ও সোমনাথের বাড়ি হুগলি ও পুরুলিয়ায়। অভিযুক্তদের আইনজীবী চন্দন তরফদার জানান, জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হওয়ায় বিচারক ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে যেন অভিযুক্তরা র্যাগিংয়ের অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্ক করে দেন।”
রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক বলেন, “প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া ও কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ মিশ্র জানান, কলেজের অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বলেন, “তদন্তে অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হলে র্যাগিং বিরোধী আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিষেক মাঝি নামে প্রথম বর্ষের মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ওই পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে র্যাগিংয়ের অভিযোগ জানায়। অভিষেকের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট এলাকায়। অভিষেক ও অভিযুক্তরা প্রত্যেকে কলেজের হস্টেলের একই ঘরে থাকে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নানা অছিলায় ওই পাঁচ ছাত্র অভিষেকের উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে। নির্দেশ অমান্য করলে ওই পাঁচ ছাত্র তাঁকে মারধর করত। শুক্রবার দুপুরেও তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। চড়, থাপ্পড় ও ঘুষি মারা হয়। ওই ঘটনার পরে অভিষেক অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ অ্যন্টির্যাগিং কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে পুলিশকে জানান। সেই সঙ্গে ছাত্রের অভিযোগও পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মারধরে জখম হওয়ায় ওই দিন অভিষেককে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তাঁর পিঠে চোট লাগে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কলেজের হস্টেলে ঘটনার তদন্তে গেলে তদন্তকারী অফিসারদের কাছে পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয় অভিষেক। তিনি বলেন, “নানা অছিলায় তৃতীয় বর্ষের ওই পাঁচ ছাত্র দীর্ঘদিন ধরে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছিল। শুক্রবার অত্যাচার চরমে ওঠে। বাধ্য হয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশে অভিযোগ জানাই।” এদিন রায়গঞ্জ থানায় দাঁড়িয়ে ধৃতরা দাবি করেন, তাঁদের কেউ র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত নয়। পরিকল্পিতভাবে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। |