বাংলা রয়েছে তো ইংরেজি নেই। অঙ্ক আছে তো সাধারণ জ্ঞান নেই। এমন বেহাল অবস্থা চলছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির প্রায় সব প্রাথমিক স্কুলে। তিন মাস ধরে বই ছাড়াই পড়াশোনা চলছে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। কচিকাঁচা পড়ুয়ারা তো সব বোঝে না। কিন্তু, তাদের বাবা-মায়েরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিন সপ্তাহ পরেই বছরের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে ওদের। যদিও পাশ-ফেল নেই। তবুও পরীক্ষা তো বটে! তাই সকলেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে গিয়ে প্রায় রোজই জানতে চাইচেন, কবে বই আসবে? তা ছাড়া বই ছাড়া কী ভাবে পরীক্ষা দেবে? কয়েক জন অভিভাবক জানান, অনেক স্কুলে তো মিড ডে মিল নিয়েই বেশি সময় কেটে যায়। সেই জন্যই বাড়িতে না-পড়ালে ছেলেমেয়েরা কী শিখবে?
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা জানেন সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্তাদের সকলে। প্রায় সকলেই দেখছি-দেখব গোছের আশ্বাস দিয়েই দায়িত্ব সারছেন। যেমন, জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ধর্তিমোহন রায় বলেন, “বিভিন্ন স্কুল গত বছরের ছাত্র ছাত্রী সংখ্যার হিসেবে বই চেয়েছে। এ বছর বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে অতিরিক্ত বই প্রয়োজন হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সব স্কুলে বই পৌঁছে যাবে।” একই সুরে কথা বলেছেন শিলিগুড়ি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “খুবই চিন্তার বিষয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”
শিক্ষা দফতর জানায়, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি জেলায় যথাক্রমে ৩৯৯টি ও ২ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল আছে। পড়ুয়া আড়াই লক্ষ। বিধি অনুযায়ী, পড়ুয়াদের জানুয়ারি মাসেই বই দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু, বেশির ভাগ স্কুলেই বই পৌঁছয়নি। কিছু স্কুলে বই পৌঁছেছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এরই পাশাপাশি স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত বই পৌঁছয়নি। শিলিগুড়ির পাথরঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি বই এসে পৌঁছয়নি। রানিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তো কোনও বই পৌঁছয়নি। কোনও উপায় না থাকায় সেখানে পুরনো সিলেবাসের বই দিয়েই পড়াশোনা চলছে! কিন্তু যে সব স্কুলে বই পৌঁছেছে, সেখানে তা বিলি হয়নি কেন? শিক্ষা দফতরের এক সূত্র জানাচ্ছে, সব স্কুলে বই সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কিছু স্কুল বেশি বই নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শিক্ষা দফতরের এক অফিসার জানান, অনেক ক্ষেত্রে সার্কেল অফিসে বই পড়ে আছে। আবার কোথাও স্কুলের পক্ষ থেকে বেশি বই নেওয়া হয়েছে। তা খতিয়ে দেখে বই তুলে সঠিক জায়গায় দ্রুত বিলির চেষ্টা হচ্ছে বলে অফিসারের দাবি। তবে জলপাইগুড়ি সর্বশিক্ষা মিশন-এর জেলা প্রকল্প আধিকারিক অলক মহাপাত্র বলেন, “পাঠ্য বইয়ের সঙ্কট থাকার কথা নয়। তবে বেশ কিছু স্কুলে পাঠ্যপুস্তক যায়নি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |