সেই দলের চার জনকে আজ বিশ্রাম দিচ্ছে রিয়াল
ফুটবল-বিশ্ব যেটা ভেবেছিল, সেটাই হতে চলেছে। শনিবার বার্সেলোনার বিরুদ্ধে মহা-সম্মানের লড়াইয়েও রিয়াল মাদ্রিদ আগের ম্যাচের দলে অনেকগুলো পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। হোসে মোরিনহোর স্বভাবতই লক্ষ্য, আগামী মঙ্গলবার ফার্গুসনের ম্যান ইউয়ের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে নিজের পুরো দলকে চাঙ্গা পাওয়া।
মাত্র চার দিন আগে যে প্রথম একাদশ নিয়ে ন্যু কাম্পে নেমে বার্সাকে ৩-১ চুরমার করেছিল রিয়াল, সেই দলের অন্তত চার জন ফুটবলার পালটে ফেলছেন মোরিনহো ঘরের মাঠ বের্নাবৌতে। মার্সেলো, লুকা মডরিচ, কাকা ও বেঞ্জিমাদের কেউ সে দিন কোপা দেল রে-তে রিয়ালের অসাধারণ জয়ে মাঠে নামতে পারেননি। কিন্তু শনিবার লা লিগা-র ‘এল ক্লাসিকো’য়ে চার জনই শুরু থেকে খেলবেন বলে রিয়ালের সরকারি ওয়েবসাইটে জানানো হচ্ছে। কার্ড সমস্যায় জাভি আলোন্সো নেই। তবে রোনাল্ডো-কাকা জুটির কামড় ভঙ্গুর বার্সা ডিফেন্স কী ভাবে সামলায়, সেটা দেখার আগ্রহ রয়েছে ফুটবলমহলে।
বার্সা শিবিরে অবশ্য সবচেয়ে বড় আগ্রহ মেসিকে নিয়ে। জ্বরে কাবু হয়ে দলের ট্রেনিং সেশন ‘মিস’ করলেও এলএম টেন শনিবার সান্তিয়াগোতে প্রথম থেকেই খেলবেন বলে ধরে নিচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। আর একটা তাৎপর্যপূর্ণ খবর, আগের ম্যাচেই রোনাল্ডোর জোড়া গোল হজমের পর শনিবার আর পিকে-পুওল সেন্ট্রাল ডিফেন্স জুটির ওপর ভরসা রাখছে না বার্সা। পিকে-র পাশে ফেরানো হচ্ছে মাসচেরানো-কে। এ ছাড়া আক্রমণে শুরু থেকে খেলবেন দাভিদ ভিয়া-ও।
মঙ্গলবারের আগে বার্সাকে যেমন সম্প্রতি ন্যু কাম্পে অপ্রতিরোধ্য দেখাত, রিয়াল এখনও বের্নাবৌতে তা-ই। লিগ টেবলে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার চেয়ে রিয়াল অনেক পিছিয়ে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা প্রায় নেই। তবু ঘরের মাঠে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে শেষ ২৪ ম্যাচে মোরিনহো ব্রিগেড অপরাজিত। এমনকী লা লিগায় বের্নাবৌতে শেষ ১১ ম্যাচে ১০টা জিতেছে রিয়াল। সাম্প্রতিক ‘এল ক্লাসিকো’য়ে তাদের সাফল্যও ঈর্ষণীয়। বার্সার বিরুদ্ধে শেষ সাত লড়াইয়ে মাত্র একটা হার। সেখানে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ইদানীং কালো দিন যাচ্ছে মেসিদের। শেষ সাত ম্যাচে মাত্র তিন জয়। শনিবারের ম্যাচেও বুকিদের বাজি রিয়াল মাদ্রিদ। বাজির দরে রোনাল্ডোদের জেতার সম্ভাবনা ৪৭ শতাংশ। মেসিদের মাত্র ৭.৭ শতাংশ! ড্র হওয়ার দিকে রায় ৪৫.৩ শতাংশের। ম্যাচের তিনটে সম্ভাব্য ফলের বিচারেও রিয়ালের ২-১ জয় পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভোট: ১২.২৮%। বার্সার ৩-১ জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী ১০.৪১ শতাংশ। আর রিয়াল ৩-১ জিতবে বলছে ৮.৩৯%।
এবং সেটা বলার কারণ রোনাল্ডোর দুধর্র্র্ষ ফর্ম। যা দেখে ডেভিড বেকহ্যাম এ দিন বলেছেন, “এল ক্লাসিকোর চেয়েও আমি বেশি আগ্রহী মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টার-রিয়ালের ম্যাচ নিয়ে। মনে হয় রোনাল্ডো সে দিন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলা উপভোগ করবে। আর সেটা হলে ও খেলবেও খুব ভাল। পুরনো ক্লাবের বিরুদ্ধে, সেই পুরনো মাঠে খেলতে নামলে একটা আলাদা তাগিদ আসে। আমার যেটা এসি মিলানের তিন বছর আগে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নেমে হয়েছিল। রোনাল্ডোও ব্যতিক্রম হবে না।”

আরও একটা ‘এল ক্লাসিকো’ আজ। পাঁচ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার। স্প্যানিশ কাপে আগের ম্যাচে
মেসির পাড়ায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন রোনাল্ডো। ন্যু কাম্পের বদলা নিতে এ বার কি রোনাল্ডোর
পাড়ায় মেসি-ম্যাজিক দেখা যাবে? বের্নাবৌয়ে লা লিগা-র এই মহাম্যাচ নিয়ে পাঁচটি প্রশ্নের
উত্তর খুঁজলেন ভারতীয় ফুটবলের চার দিকপাল।
১) শনিবারের ‘এল ক্লাসিকো’য়ে কারা এগিয়ে? কেন?
২) মেসি-ম্যাজিক কি ধরা পড়ে যাচ্ছে বিপক্ষের হাতে? কী ভাবে?
৩) বার্সেলোনার তিকিতাকা ফুটবল কি অবলুপ্তির পথে? কী কারণে?
৪) রোনাল্ডো কি এখন মেসির চেয়েও ভয়ঙ্কর? বিপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে?
৫) ঠিক গত বারের মতোই ঘনঘন ‘এল ক্লাসিকো’ খেলার ধকলে বার্সা ও রিয়াল কি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে যেতে পারে? যেখানে তাদের যথাক্রমে এসি মিলান ও ম্যান ইউয়ের বিরুদ্ধে খেলতে হবে দিন কয়েক পরেই!

চুনী গোস্বামী
১) রিয়ালের হোম ম্যাচ বলে ওদের এগিয়ে রাখব। মোরিনহো ঘরের মাঠে এত বড় ম্যাচ জিততে চাইবেই। তা ছাড়া বার্সার দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার পিকে আর পুওল খুবই খারাপ ফর্মে।
২) মেসি ধরা পড়ে যাচ্ছে মানি না। টানা সাত বছর ও আর বার্সা সেরা ফর্মে ছিল। যে কোনও কোম্পানি বা মানুষ যদি টানা সাফল্য পেয়ে চলে তার মধ্যে একটা আত্মতুষ্টি কাজ করে। মেসি-সহ বার্সার আপাতত সেটাই হয়েছে।
৩) পাসিং ফুটবল কখনও শেষ হয় না কি? তিকিতাকাও অবলুপ্ত হবে না। পাসিং ফুটবলের মজা হল, কতগুলো পাস কী ভাবে খেলা হবে তা ঠিক করে সেই দলের কোচ বা ফুটবলাররা। বিপক্ষের সেখানে ভূমিকা নেই।
৪) মেসি যদি আর কোনও দিন কোনও ম্যাচ ভাল না খেলে তা হলেও ও-ই সেরা। রোনাল্ডো কখনও সেখানে পৌঁছতে পারবে না। রোনাল্ডো খেলে শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে। মেসি স্কিলের ওপর খেলে।
৫) মনে হয় না, এতে দুটো টিমের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে। আমাদের এখানে যেমন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, কোনও অঙ্কেরই ধার ধারে না। এটাও তেমনই। তবে বার্সা তো অনেক এগিয়ে আছে লিগ টেবিলে। সে জন্য ওরা হয়তো দু’-এক জন টপ প্লেয়ারকে বিশ্রাম দিতে পারে।
সুব্রত ভট্টাচার্য
১) মোরিনহোর মতো কোচ আছে বলেই রিয়াল মাদ্রিদকে আমি একটু হলেও এগিয়ে রাখব। তা ছাড়া আগের ‘এল ক্লাসিকো’ বড় ব্যবধানে জেতায় রোনাল্ডোরা মানসিক ভাবেও অনেকটা এগিয়ে থাকবে।
২) মেসি বিপক্ষের ট্যাকটিক্সের বার বার কাছে আটকে যাচ্ছে। মহাতারকাদের জীবনে এটা হয়েই থাকে। একটা সময় স্টাইল বা ফর্মেশন বদলে তা থেকে বেরিয়ে আসে তারা। আমার বিশ্বাস মেসিও সেটা ভাল ভাবেই পারবে।
৩) বিশ্ব-ফুটবলে অতীতে বিভিন্ন সময় নানা রকম গেম-স্টাইল এসেছে। আমরা ভুলিনি ইংল্যান্ডের কিক অ্যান্ড রান, ইতালির কাতানেচিও, ডাচদের টোটাল ফুটবল। আবার ধরাও পড়ে গিয়েছে। তিকিতাকাও ধরা পড়ে যাচ্ছে। পুরো অবলুপ্ত না হলেও অনেকটা সেই দিকেই।
৪) মেসি হল গোলাপ। রোনাল্ডো ডালিয়া। একটা বা দু’টো ম্যাচ কোনও বিচার্য নয় ফুটবলে। মেসিকে এখনও এগিয়ে রাখব।
৫) মানতে পারছি না। শারীরিক ভাবে বার্সা বা রিয়াল এত শক্তিশালী যে, ক্লান্ত হয় না। দু’-একটা চোটআঘাত হতে পারে বড়জোর। সেটা বড় ব্যাপার নয়।
করিম বেঞ্চারিফা
১) বার্সা বনাম রিয়াল সব সময় এত ভাল হয় যে খেলাটাই আমি ভীষণ রকম উপভোগ করি। ফলটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় না। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে এগিয়ে রিয়াল-ই।
২) এমনিতে মেসির সম্পর্কে যা জেনেছি তাতে বুঝতে পারছি ওর শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। তা ছাড়া মহাতারকারাও মাঝেমধ্যে ফর্ম হারায়। আবার ফিরেও আসে। মেসিও আসবে।
৩) সে রকমটা ভাবার কোনও কারণ নেই। এটা বার্সেলোনার নিজস্ব স্টাইল। আসলে ওদের হেড কোচ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। সঙ্গে কিছু তারকা ফুটবলারের অফ ফর্ম চলছে। সে জন্যই আগের মতো অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে না।
৪) মেসির চেয়ে রোনাল্ডো এগিয়ে না পিছিয়ে সেটা বলা ঠিক হবে না। দু’জনেই বিরাট ফুটবলার। তবে রোনাল্ডো প্রতিটা ম্যাচে গোল পাচ্ছে। আর এই মুহূর্তে ওর সেরা ফর্মে আছে।
৫) এটা কোনও বিষয়ই নয়। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা দু’টোই বিশ্বের সেরা দু’টো দল। ওদের কাছে সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। দু’টো টিমেই এত বৈচিত্র, এত পরিবর্ত ফুটবলার যে, সমস্যা হবে না।
র‌্যান্টি মার্টিন্স
১) আমার বাজি বার্সেলোনা। শনিবারের ম্যাচে ওরা নিজেদের সম্মানরক্ষার জন্য খেলবে।
২) মেসি-ম্যাজিক ধরা পড়ে গেলে সেটা কি আর ম্যাজিক থাকত? মেসির মধ্যে এখনও সম্মোহন করার ক্ষমতা আছে বলেই তো মেসি-ম্যাজিক বলা হচ্ছে। ও যে কোনও সময় যা খুশি তাই করতে পারে। মেসি মেজাজে থাকা মানে, বিপক্ষের অসহায় আত্মসমর্পণ।
৩) ফুটবলে হার-জিত আছেই। বার্সেলোনা গোটা দুই ম্যাচ হেরেছে মানেই যে ওদের তিকিতাকা ফুটবলের আধিপত্যের দিন শেষ সেটা কিন্তু নয়। তবে আমার মতে এই মুহূর্তে মেসিকে উইং দিয়ে ব্যবহার করা উচিত। দাভিদ ভিয়াকে একা সামনে রেখে। তা হলেই আবার ছন্দে ফিরে আসবে বার্সেলোনা।
৪) মেসির তুলনা মেসি নিজেই। শুধু গোল করার ক্ষমতা নয়, গোল করানোর দক্ষতাও দুর্দান্ত মেসির। আমি এখনও মনে করি, বিশ্ব-ফুটবলে ও-ই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফুটবলার। রোনাল্ডোর থেকেও।
৫) পাঁচ দিনে দু’টো ‘এল ক্লাসিকো’—শুনলেই তো ভয় লাগছে! ফুটবলারদের ক্লান্তির একটা প্রভাব তো পড়বেই। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বার্সা-রিয়াল একেবারে ছিটকে যাবে, সেটা অসম্ভব।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.