একই শহরের দুই নায়ক। দু’জনেই জাতীয় দলের প্রাক্তন, দু’জনই শিল্পী। কিন্তু কী অদ্ভুত বৈপরীত্য তাঁদের জীবনে।
এক জন বন্দিত। শহরে আছেন, শনিবার থেকে শুরু হতে চলা দ্বিতীয় টেস্টে থাকবেন কমেন্ট্রি বক্সে।
অন্য জন শহরে আছেন কী নেই, কিছু যায় আসে না। বহু দিন ধরে ব্রাত্য ছিলেন, আজও আছেন। আদালতের আজীবন নির্বাসন দণ্ড উঠে যাওয়ার পরেও।
প্রথম জন, ভিভিএস লক্ষ্মণ। দ্বিতীয় জন, মহম্মদ আজহারউদ্দিন। শুক্রবার সন্ধেয় একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটের অনুষ্ঠানে ভিভিএস যখন নিজের অবসর এবং অবসরোত্তর জীবনের কথা তুলে আনছেন, তখন নিজের শহরে টেস্ট দেখার আমন্ত্রণটুকুও পেলেন না প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক আজহার। মন্ত্রী-আমলা থেকে নিজাম-নগরীর খেলাধুলো জগতের বাকিরা, সবার নিমন্ত্রণ আছে। আজহার বাদে।
অথচ অন্ধ্রপ্রদেশ আদালত তাঁর ওপর থেকে গড়াপেটার দায়ে আজীবন নির্বাসনের শাস্তি তুলে নিয়েছে। বোর্ডের বার্ষিক অনুষ্ঠানেও তো দেখা গিয়েছে আজহারকে। তা হলে?
উত্তরে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা যুক্তি দিলেন, বোর্ড যত দিন না আজহার নিয়ে খোলাখুলি সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছে, তত দিন তাঁকে ডাকা হবে না। মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা ওই কর্তার কথায়, “সে জন্যই আমরা আজহারকে টেস্ট দেখার আমন্ত্রণ পাঠাইনি।” এমনকী এ-ও বলা হল, সমস্যা পুরোপুরি না-মিটলে হায়দরাবাদ ক্রিকেটের উন্নতিকল্পেও ডাকা হবে না ৯৯ টেস্ট খেলা ক্রিকেটারকে।
আজহারকে এইচসিএ-র উপেক্ষা অবাক করা ব্যাপার হলে, সন্ধেয় লক্ষ্মণ যা বললেন, সেটা আশ্চর্যের। চেন্নাই টেস্টের সময় ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে ভাল রকম প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু এ দিন লক্ষ্মণ পরিষ্কার বলে দিলেন, “এই মুহূর্তে ভারতীয় টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ধোনিই সেরা চরিত্র। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে। ছেলেটাও ভাল।” লক্ষ্মণের অবসরের সময় ধোনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছিল। তার পরপরই হায়দরাবাদে নিউজিল্যান্ড টেস্ট চলাকালীন ভারত অধিনায়ক বাদ দিয়ে বাকিদের কাউকে কাউকে নিজের বাড়িতে ডিনারে ডাকায়। যা নিয়ে লক্ষ্মণের সাফ জবাব, “আমি ভাবিনি, ধোনিকে ডিনারে না ডাকলে সেটা জাতীয় স্তরের খবর হয়ে যাবে।”
অবসরের সময়জ্ঞান নিয়েও লক্ষ্মণ কোনও ভুল করেছেন বলে মনে করেন না। “ভেবেছিলাম, অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতে ক্রিকেটটা ছাড়ব। সেটা হল না। পরে ভাবলাম, এর পর দেশের মাঠে দশটা টেস্ট আছে। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। তখনই ঠিক করি, জুনিয়রদের এ বার মঞ্চ ছেড়ে দেব,,” বলেন তিনি। আফসোস হয়নি? “নাহ্। বরং পরের দিন ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীকে বলতে পেরেছিলাম, দুর্দান্ত একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কমেন্ট্রি জীবন এখন লক্ষ্মণের বেশ লাগে। যেখানে সুনীল গাওস্কর তাঁকে ঠাট্টা করে বলেন, “প্রস্তুত হও। আর একটা উইকেট পড়লেই তোমাকে নামতে হবে!” শুধু একবারই চোরা কষ্ট ধরা পড়ে গেল যখন বললেন, “আমাদের কাছে দেশের হয়ে খেলার গর্বটাই বিরাট ছিল। এখন মনটা খারাপ লাগে যখন দেখি অভিভাবকরা কোচকে গিয়ে বলেন, ছেলের দেশের হয়ে খেলার দরকার নেই। শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যাতে ডাক পায় সেটা দেখুন! |