|
|
|
|
নীতীশকে কাছে টানতে বাজেটই বার্তা কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর সম্ভাব্য ভূমিকার প্রশ্নে বিজেপি এবং জেডিইউ শিবিরের মধ্যে ফাটল যখন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তখন বাজেটকে হাতিয়ার করে নীতীশ কুমারকে কাছে আনতে তৎপর হলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
নীতীশ দীর্ঘ দিন ধরে বিহারের জন্য বিশেষ মর্যাদার দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি এ-ও বার্তা দিয়ে রেখেছেন, যে দল বিহারকে বিশেষ ‘স্ট্যাটাস’ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ করবে, তাঁর দল সেই সরকারের পাশে থাকবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম গত কাল বাজেট-বক্তৃতায় সরাসরি বিহারকে বিশেষ মর্যাদাদানের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না-বললেও যে ভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল চিহ্নিতকরণের মাপকাঠিতে ‘পরিবর্তন’ আনার কথা জানিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নীতীশের দল জেডিইউ।
বাজেটে বিহারকে অনগ্রসর রাজ্য হিসেবে অভিহিত করে চিদম্বরম বলেন, “পিছিয়ে পড়া অঞ্চল চিহ্নিত করতে বর্তমানে যে সব সূচক রয়েছে, তাতে অবিলম্বে পরিবর্তন আনা হবে। শিক্ষা-আয়-মানবসম্পদের মতো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য জাতীয় গড়ের কতটা পিছনে, ভবিষ্যতে সেই মাপকাঠি-ই গণ্য করা হবে।”
বিহারকে দেওয়া ওই ‘আর্থিক’ বার্তার পরেই চিদম্বরমের প্রশংসায় আসরে নেমেছেন নীতীশ। “চিদম্বরম যে অন্তত বিশেষ মর্যাদার মাপকাঠিগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখার কথা বলছেন, তাতেই আমি খুশি।” পটনায় বলেন নীতীশ।
লোকসভা নির্বাচনের এক বছরও বাকি নেই। এই অবস্থায় কংগ্রেস-জেডিইউ শিবিরের এ হেন পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানির মধ্যে যে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে, রাজনীতির কারবারীরা তা মেনে নিচ্ছেন। বিশেষত কংগ্রেসের তরফে নীতীশের জন্য এই বার্তা এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন নরেন্দ্র মোদীর প্রশ্নে বিজেপি-জেডিইউ দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। লোকসভা ভোটে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে নির্বাচনে যেতে চাইছে বিজেপি-র বড় অংশ। যাতে নীতীশের তীব্র আপত্তি। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে নীতীশ-মোদী সংঘাতের সূচনা সেই গোধরা কাণ্ড থেকে। মূলত নীতীশের আপত্তিতেই বিজেপি নেতৃত্ব বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে মোদীকে দিয়ে প্রচারের পরিকল্পনা ছেড়ে পিছিয়ে এসেছিলেন। নীতীশ ইতিমধ্যে এ-ও জানিয়ে রেখেছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে তিনি এনডিএ শিবির ছাড়তে পারেন।
সেই পরিস্থিতিতে নীতীশ যাতে ইউপিএ শিবিরের দিকে ঝোঁকেন, সে জন্য কংগ্রেস এখন থেকেই জমি তৈরি করছে বলে মনে করছেন রাজধানীর রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই লক্ষ্যেই চলতি বাজেটকে অস্ত্র করেছে কংগ্রেস। অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক নীতীশও কংগ্রেসের সঙ্গে যতটা সম্ভব সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। পারস্পরিক সৌহার্দ্যের সুবাদে ফি বছর বিহারের যোজনা বরাদ্দও বানিয়ে নিয়েছেন। অনেকে তাই মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে শেষ বাজেটে বিহারের জন্য আর্থিক অনুদান ও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নীতীশকে ফের এক বার বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে রাখল কংগ্রেস।
বিজেপি শিবির অবশ্য ব্যাপারটাকে ততটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, “নীতীশ কুমার মনে করেছেন, বাজেটে বিহারকে বিশেষ মর্যাদাদানের বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। তাই তিনি চিদম্বরমকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। এর মধ্যে রাজনীতি নেই।” যদিও বাজেটের কোথাও বিহারকে বিশেষ মর্যাদাদানের কথা বলা হয়েছে এমন কিছু তাঁদের মনে হয়নি বলে বিজেপি মুখপাত্রের দাবি। লালুপ্রসাদের আরজেডি-রও একই মত। বরং তারা আজ নীতীশকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বাজেটে কেন্দ্র কোনও ভাবেই বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেনি। “শুধু তা-ই নয়। নালন্দার জন্য রয়েছে কেবল প্রতিশ্রুতি। কোনও আর্থিক বরাদ্দ নেই।” অভিযোগ করেছেন আরজেডি সাংসদ রঘুবংশপ্রসাদ। |
|
|
|
|
|