|
|
|
|
সূর্য সেন মার্কেট-তদন্ত |
একটিমাত্র সরু সিঁড়ি, সেটাই ছিল মৃত্যুপথ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
সূর্য সেন স্ট্রিটে আগুনে পুড়ে ২০ জনের মৃত্যুর জন্য অগ্নিদগ্ধ বাড়ির একমাত্র এবং সঙ্কীর্ণ সিঁড়িকেই দায়ী করল দমকল। শুক্রবার এ নিয়ে যে প্রাথমিক রিপোর্ট পৌঁছেছে মহাকরণে, তাতে এমনই বলা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। এর পাশাপাশি বেআইনি নির্মাণ, ঢোকা-বেরনোর পথে দাহ্য বস্তু জড়ো করে রাখা ও তার মধ্যেই স্টোভ জ্বেলে রান্নাবান্নার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। তবে কী ভাবে ওই বাড়িতে আগুন লাগে, তা এখনও স্পষ্ট নয় দমকলকর্তাদের কাছে। অগ্নি নির্বাপণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সঠিক তথ্য জানা যাবে।” |
|
অগ্নিকাণ্ডের দিন, বুধবারই মৃত্যু হয়েছিল ১৯ জনের। এ দিন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও এক জন মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শঙ্কর দেবনাথ। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। সূর্য সেন স্ট্রিটের অগ্নিদগ্ধ বাজারে বিয়েবাড়িতে কাপ-প্লেট সরবরাহকারী একটি সংস্থার কর্মী ছিলেন তিনি। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক জনের অবস্থাও সঙ্কটজনক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর নাম দীনেশ চট্টোপাধ্যায়। তবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি কালাচাঁদ পুরকায়েতের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
দমকল যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ওই বাড়ির দেড়তলা (মেজেনাইন ফ্লোর) বেআইনি ভাবে বানানো হয়েছিল। স্বল্পপরিসর স্থানে গায়ে গা লাগিয়ে তৈরি হয়ে ছিল বহু দোকান। বুধবার সকালে আগুন নেভার পরে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সেই দৃশ্যই দেখা গিয়েছিল। বাড়ির সামনের অংশে একটা গেস্ট হাউস। লাগোয়া অংশের একতলায় প্লাস্টিক, থার্মোকল ও পিসবোর্ড দিয়ে তৈরি বিয়েবাড়ি সাজানোর নানা উপকরণের গুদাম। ওই তলাতেই সব্জি বাজার, হোটেল, মুদিখানা ও কেরোসিনের দোকান। আর তার উপরে দেড়তলায় পায়রার খোপের মতো ৭০-৮০টি ঘর। একতলা থেকে দেড়তলায় ওঠার একটি মাত্র সঙ্কীর্ণ সিঁড়ি। দমকল বলেছে, ওই সিঁড়ির পাশেই ডাঁই করা ছিল নানা ধরনের দাহ্য পদার্থ। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে। দমকল মনে করছে, এর ফলে আগুনের আঁচ ঠাহর করা পরে দোতলা কিংবা দেড়তলা থেকে ঘুমন্ত লোকজন ওই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামার চেষ্টা করেও পারেননি। শ্বাসরোধেই মৃত্যু হয় পরপর।
ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য অগ্নিদগ্ধ বাড়ি থেকে যে সব নমুনা পুলিশ সংগ্রহ করেছে তাতে কেরোসিনের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে বলে দমকল জানিয়েছে। বিভাগীয় কর্তাদের বক্তব্য, কলকাতার বাইরে থেকে কাজ করতে আসা লোকজন ছুটির পরে ওখানেই দলবদ্ধ ভাবে রান্না করে খেতেন। রান্নার কিছু বাসনপত্রও বাজেয়াপ্ত করেছে দমকল।
এ দিকে, সূর্য সেন মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দমকলকর্মীদের ফের প্রশংসা করলেন দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান। এ দিন বিকেলে রাজারহাটে একটি দমকল কেন্দ্রের শিলান্যাস করে তিনি বলেন, “সূর্য সেন মার্কেটে খুব ভাল কাজ হয়েছে। দমকলকর্মীরা ঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলে, যে কারণে আগুন ছড়াতে পারেনি। কেউ এই বিষয় নিয়ে কোনও কথা বলতে পারেনি।” ওই অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে এ দিন ফের তিনি মন্তব্য করেন। |
|
|
|
|
|