|
|
|
|
সমস্যা মানছেন দমকল-কর্তারাও |
রিং হচ্ছে ১০১-এ, ফোন বাজলই না কন্ট্রোলে |
ঋজু বসু |
মোবাইলে আপৎকালীন নম্বর ডায়াল করে কানে ধরতে শোনা গেল, দিব্যি রিং হচ্ছে। হয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তুলছে না কেন!
তুলবে কী করে? ও প্রান্তে কোনও ফোন তো বাজছেই না! ফল্স রিং!
এ নিয়ে বিশেষ সন্দেহের অবকাশও নেই। কেননা দমকলের ১০১ নম্বরে ডায়াল করা হয়েছিল খাস দমকল সদরের কন্ট্রোল রুমে দাঁড়িয়েই। স্পষ্ট রিং শোনা গেলেও কন্ট্রোলের কোনও ফোন যে বেজে ওঠেনি, তা হলফ করা বলা যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে সূর্য সেন স্ট্রিট বাজারের আগুন লাগার পরে দমকল ও পুলিশের আপৎকালীন নম্বরে ফোন করে সাড়া না-পাওয়ার অভিযোগ অনেকেরই। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দমকলের কন্ট্রোল রুমে ঢুকে যেন আমজনতার সেই অভিজ্ঞতারই শরিক হওয়া গেল।
এক বছর আগে আমরির অগ্নিকাণ্ডের সময়ে দমকলকে দেরিতে জানানোর অভিযোগ উঠেছিল খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ বার অভিযোগ, দমকল-পুলিশকে খবর দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষই হয়রান হয়েছেন। কারও দাবি, ফোনে সাড়া না-পেয়ে আগুন লাগার খবর পৌঁছাতে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে দমকলের অফিসে ছুটতে হয়েছে। কেউ বলেছেন, এপিসি রোডে দমকলের অফিসে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। টহলদার পুলিশের ওয়্যারলেস ভ্যান মারফত খবর পাঠানোর কথাও শোনা গিয়েছে অনেকের মুখে। বুধবার কাকভোরে খবর পাওয়ার পরে সূর্য সেন স্ট্রিটে পৌঁছতে তাঁদের দেরি হয়েছে দমকল-কর্তারা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তবে ১০১ নম্বরে যোগাযোগে ক্ষেত্রে যে কিছুটা সমস্যা রয়ে যাচ্ছে, ওঁদের অনেকে এ দিন তা স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিশ্ব জুড়ে দমকলে যোগাযোগের আপৎকালীন ফোন নম্বর ১০১। যেখান থেকেই হোক, ওই নম্বরটি ডায়াল করলে নিকটবর্তী দমকল কন্ট্রোল রুমে বার্তা পৌঁছে যাওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গে দমকলের আটটি কন্ট্রোল রুম। তাদের নিজস্ব নম্বর থাকলেও ১০১-ই বেশি পরিচিত। কিন্তু কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ওই অতি জরুরি নম্বরে যোগাযোগের সমস্যাটি ক্রমে গুরুতর আকার নিচ্ছে বলে প্রশাসনিক মহলের একাংশের অভিমত। একই ভাবে পুলিশের আপৎকালীন ১০০ নম্বরে সাড়া না-মেলার অভিযোগও পুরনো।
উল্লেখ্য ১০০ এবং ১০১ দু’টি নম্বরের ফোন-বার্তাই বিএসএনএলের মাধ্যমে যথাক্রমে পুলিশ ও দমকলের কন্ট্রোলে এসে পৌঁছয়। এবং দমকল-কর্তাদের একাংশের অভিজ্ঞতা বলছে, সাধারণত ল্যান্ডলাইন থেকে ১০১-এ ফোন করলে সাড়া পেতে অসুবিধে হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, যখন কেউ মোবাইল থেকে ডায়াল করেন। এ দিন হাতে-নাতে যার প্রমাণ মিলল। এর সুরাহা কী?
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান এ দিন বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব। এ ধরনের অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থাকে জানানো হয়।” আগে ১০০ নম্বরের সমস্যা প্রসঙ্গে বিএসএনএল-কর্তারা দাবি করেছিলেন, লালবাজার কন্ট্রোলেই পরিকাঠামোজনিত খামতি থাকতে পারে। এ দিন ১০১ সম্পর্কে একই অভিযোগ শুনে তাঁদের আশ্বাস, ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হবে।
এতে অবশ্য আপাতত আম নাগরিকের ভোগান্তি কাটছে না। বরং সূর্য সেন স্ট্রিট বাজারের অগ্নিকাণ্ডের পরে হয়রানির আশঙ্কা প্রবলতর হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, রাত তিনটে নাগাদ বাজারে আগুন ঠাহর করা গিয়েছিল। এবং দমকল-কর্তৃপক্ষের দাবি: বুধবার ভোরে ঘটনার খবর তাঁরা আপৎকালীন নম্বর মারফতই পেয়েছিলেন। দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারেনিয়ার কথায়, “আমাদের রেকর্ড বলছে, ভোর চারটেয় ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের কন্ট্রোল রুমের ইমার্জেন্সি নম্বরে আসা ফোনে খবর জানা গিয়েছে। প্রেরক বলছেন, ৩টে ৫২ মিনিটে খবর দিয়েছেন। দু’দিকের ঘড়িতে সময়ের ফারাক থাকতে পারে।” দমকলমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “কেউ রিং করা সত্ত্বেও কন্ট্রোল সাড়া দিল না প্রযুক্তিগত সমস্যা ছাড়া এমনটা হতে পারে না। হলে সিএলআইয়ে ধরা পড়ত।”
তবে ঘটনা হল, দমকলের কন্ট্রোল রুমগুলোয় দশটা ফোন আসার পরে আগের রেকর্ড মুছে যায়। সেগুলো টুকে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন?
দমকল-কর্তাদের একাংশ বলছেন, কন্ট্রোলে এমনিতেই হাতে গোনা লোক। ফোন ধরার পাশাপাশি নম্বর টুকতে হলে এত কম কর্মী দিয়ে চলবে না। মন্ত্রী অবশ্য লোকাভাবের কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য: কন্ট্রোলে বসার জন্য সম্প্রতি ২০ জন অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে নিযুক্ত করা হয়েছে। সঙ্গে দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ফায়ার প্রোটেক্টর (এএফপি)-এর অস্থায়ী পদ। ফলে কর্মীর সঙ্কট নেই বলে জাভেদের দাবি।
মন্ত্রীর দাবি যা-ই হোক, বাস্তব ছবিটা কিন্তু এতটা আশাপ্রদ নয়। দফতর-সূত্রের তথ্য: কন্ট্রোল রুমের ‘মেরুদণ্ড’ বলতে যাঁদের বোঝায়, সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট মোবিলাইজিং অফিসারের (এএমও) সংখ্যাই সারা রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত ৬০ জন কম। ঊর্ধ্বতনদের অনেকে অবসরের মুখে।
“আগে কন্ট্রোলে এক-একটা শিফ্টে দশ-বারো জন থাকতেন। এখন মেরে-কেটে পাঁচ-ছ’জন। বেশির ভাগ অনভিজ্ঞ এএফপি।” জানাচ্ছেন দমকলের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর আক্ষেপ, “কোনও ঘটনার পরে কন্ট্রোলে বসেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কখন, কোথা থেকে কত ইঞ্জিন পাঠাতে হবে। সদ্য চাকরিতে ঢোকা ছেলেমেয়েদের হাতে তো সে দায়িত্ব দেওয়া যায় না! অভিজ্ঞ কর্মী কমে গেলে যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে।”
অর্থাৎ আমজনতার দমকল-দুর্দশার আশু নিরসনের ইঙ্গিত নেই। |
|
|
|
|
|