|
|
|
|
ক্ষণে ক্ষণে ঠাঁইবদল পলাতক নেতার |
মুন্না বলছি, আকবরের সমাধি থেকে ফোন |
সুরবেক বিশ্বাস |
শান্ত, প্রায় শব্দহীন সেকেন্দ্রায় ঘুমিয়ে আছেন মোগল সম্রাট আকবর।
গার্ডেনরিচে পুলিশ অফিসার খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত, মহম্মদ ইকবাল (মুন্না) ফোনে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বেছে নিয়েছেন আগরার উপকণ্ঠে সেই সেকেন্দ্রাকেই। শাহেনশা আকবরের সমাধিস্থলের ঠিক পাশের একটি পিসিও থেকে মুন্না কলকাতায় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তৃণমূলের পলাতক বরো চেয়ারম্যান ইকবাল বুধবার সকালে ফোনটি করেন ওই সঙ্গীর মোবাইলে।
মুন্নাকে ধরা যাচ্ছে না কেন?
সিআইডি সূত্রের খবর, সেকোন্দ্রা থেকে ফোন করলেও মুন্না কিন্তু সেখানে বা আগরায় নেই। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “মুন্না থাকছেন এক জায়গায়, কিন্তু ফোন করছেন অন্য জায়গা থেকে। খবর এসেছে, মুন্না যখন সেকেন্দ্রা থেকে ওই ফোন করেন, তখন তিনি থাকতেন আলিগড়ে। সেকেন্দ্রা থেকে যার দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার।” সিআইডি-র বক্তব্য, মুন্না গা-ঢাকা দেওয়ার পর থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহারই বন্ধ করে দিয়েছেন। পিসিও থেকে ফোন করলেও তাঁর অবস্থান যাতে কোনও ভাবেই বোঝা না-যায়, সেই জন্য ফোনও করছেন অনেক দূরে গিয়ে।
প্রতিপক্ষ মোক্তার আহমেদ পুলিশের কাছে ধরা দেওয়ার পরে মুন্নাকেও যত শীঘ্র সম্ভব আত্মসমর্পণ করানোর জন্য বিশেষ একটি মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের খবর। মুন্নাকে বোঝানো হয়েছে, মোক্তার যেখানে ধরা দিতে পারলেন, সেখানে শাসক দলের বরো চেয়ারম্যান হয়ে মুন্না যদি এ ভাবে লুকোচুরি খেললে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় গুলি করে সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত শেখ সুহান এবং তার ‘চাচা’ মহম্মদ ইবনে পুলিশি হাজত থেকে বেরিয়ে জেল-হাজতে না-যাওয়া পর্যন্ত মুন্নার ঘনিষ্ঠ মহল তাঁকে ধরা দিতে বারণ করছে। কেন?
এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, “হাজার হোক, ইবনে-সুহানদের কাছে মুন্না হল ‘দাদা’। ওদের কাছে মুন্নার একটা আলাদা ইজ্জত আছে। সেখানে তাদেরই সঙ্গে সিআইডি হেফাজতে থাকা, জেরার সম্মুখীন হওয়া মুন্নার কাছে যারপরনাই লজ্জার বিষয়। সেই জন্যই মুন্না অপেক্ষা করছেন বলে আমরা একটি বিশেষ সূত্রে জেনেছি। ইবনে আর সুহানের পুলিশি হাজতে থাকার মেয়াদ আপাতত ৪ মার্চ পর্যন্ত।” ওই দিন বা তার আগের দিন মুন্নার তরফে কিছু সাড়া পাওয়া যেতে পারে বলে আশায় আছেন গোয়েন্দাদের একাংশ।
কোথায় আছেন মুন্না?
প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলার দিলদারনগরের কোথাও আত্মগোপন করে আছেন ওই ফেরার তৃণমূল নেতা। হাওড়ার নাজিরগঞ্জে নিজেদের যে-খাটাল রয়েছে, সেই ব্যবসার জন্য মহিষ আনতে মাঝেমধ্যে দিলদারনগরে যেতে হয় মুন্নাকে। তাই প্রথম দিকে মুন্নার খোঁজে দিলদারনগর এবং তার আশপাশেই খোঁজ চালিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সিআইডি-র একটি দল ফতেপুরে চার-পাঁচ দিন ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। পরে অবশ্য তারা জানতে পারে, দিলদারনগর নয়, সম্পূর্ণ অন্য দিকে, ওই জায়গা থেকে ৭৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে আলিগড়ে আছেন মুন্না।
এক সিআইডি-কর্তা বলেন, “আমরা জেনেছি, আলিগড়ে মুন্নার কিছু আত্মীয়স্বজন থাকে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সেখানে সমাজবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত এবং এলাকায় ত্রাস বলে পরিচিত। সম্ভবত তারাই মুন্নাকে আশ্রয় দিয়েছে।”
সিআইডি-র কাছে এত তথ্য থাকলেও এই মুহূর্তে তদন্তকারীদের কোনও দলই ভিন্ রাজ্যে নেই। যদিও মুন্নার খোঁজে উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর ছাড়াও বিহারের পটনা এবং ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে দল পাঠিয়েছিল সিআইডি। কোনও দল চার দিন, কোনওটি ন’দিন আবার কোনও দল ১০ দিন ভিন্ রাজ্যে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার সিআইডি-র শেষ দলটি রাঁচি থেকে ফিরে এসেছে কলকাতায়। |
|
|
|
|
|