সমস্ত বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত এ মাসেই বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে চলেছে ত্রিপুরার গ্যাস-ভিত্তিক পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প। মার্চের তৃতীয়-চতুর্থ সপ্তাহে ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি চালু হবে। দ্বিতীয় ইউনিটটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আরও কিছু দিন সময় লাগবে। দিল্লি থেকে এ কথা জানিয়েছেন ত্রিপুরা পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটিডের (ওটিপিসিএল) এমডি এস কে দুবে। উল্লেখ্য, রাজ্যের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প। ভেলের (বিএইচইএল) কারিগরি সহায়তায় ওটিপিসিএল এটা তৈরি করেছে।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে পালাটানায় ‘ট্রায়াল রান’। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বিঘ্ন উত্তরণের পর শুরু হবে বাণিজ্যিক উৎপাদন। দু’সপ্তাহ ধরে চলবে এই ‘ট্রায়াল রান’। সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছিল না। পালাটানা থেকে উদয়পুর, আগরতলার সুর্যমণিনগর, পূর্ব কাঞ্চনবাড়ি হয়ে শিলচরের বর্ণিহাট এবং সেখান থেকে বঙ্গাইগাঁও পর্যন্ত ৬৬০ কিমি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন টানার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় সাব-স্টেশন তৈরির কাজও শেষ। কিন্তু শিলচরের বর্ণিহাটে বিদ্যুৎ পরিবাহী টাওয়ারটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহণের ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা তৈরি হয়। যে জায়গায় টাওয়ারটি তৈরি হয়েছে, সেই জমির মালিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। থমকে যায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রস্ততি। গুয়াহাটি হাইকোর্টের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
ওটিপিসিএলের এমডি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশ ‘ভেকেট’ করে দিয়েছেন। এই নির্দেশের ভিত্তিতে ওটিপিসিএল আজ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে ট্রায়াল-রান শুরু করছে।’’ অবশ্য ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাটি এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে দুবে জানান, ‘‘১৩ মার্চ এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতে শুনানি হবে।’’ গত কয়েক মাসে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও, ৬৬০ কিমি বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন টানা নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় বাণিজ্যিক উৎপাদনের কাজ থমকে ছিল। ক্ষতি হচ্ছিল কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প ত্রিপুরার বৃহত্তম বিদ্যুৎ প্রকল্প। ওটিপিসিএলের কর্তা বলেন, ‘‘মার্চের তৃতীয়-চতুর্থ সপ্তাহে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলেই চুক্তি অনুযায়ী যাকে যা দেওয়ার কথা, সেটাও শুরু হয়ে যাবে।’’ পালাটানার প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু করার পর রাজ্যের ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতি, যা গড়ে প্রায় ৮০-১২০ মেগাওয়াট তা কিছুটা হ্রাস পাবে। রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রিসভার বিদ্যুৎমন্ত্রী মানিক দে-র কথায় একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত রাজ্যের গর্বের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে চলেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ সঙ্কট এ বার পর্যায়ক্রমে কমতে শুরু করবে।’’ |