নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
দু’টি পৃথক খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল দুই যুবকের। শুক্রবার রামপুরহাট আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক গুরুপদ মণ্ডল একটি মামলার সাজা শোনান এবং বৃহস্পতিবার ফাস্ট ট্র্যাক তৃতীয় আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মানস বসু অন্য একটি মামলার সাজা শোনান। শুক্রবার যাবজ্জীবন সাজা হয় ময়ূরেশ্বরের মল্লারপুর আম্বা মোড়ের বাসিন্দা মনোজ শর্মার।
অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সিউড়ি থানার কেঁদুয়া রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত চক্রবর্তী মনোজ শর্মা-সহ চার জনের বিরুদ্ধে বোন রীতা চক্রবর্তীকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ করেছিলেন। কল্যাণবাবু আরও জানান, স্বামী তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতে জানিয়েছিলেন রীতাদেবী। ওই মামলায় বৃহস্পতিবার বিচারক মৃতার স্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে শ্বশুর, ভাসুর ও জা-কে বেকসুর খালাস দেন।
অন্য মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর (জেলা) রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ২০০৯ সালে ২ জুলাই বিকেলে রামপুরহাটের ধূলাডাঙার বাসিন্দা প্রৌঢ়া মল্লিকা সেনকে খুনের মামলায় বৃহস্পতিবার আশিস চট্টোপাধ্যায় নামে এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। জানা গিয়েছে, খুনের ঘটনার বছর দু’য়েক আগে মল্লিকাদেবীর স্বামী মারা যান। ধূলাডাঙার বাড়িতে দোতলায় থাকতেন মল্লিকাদেবী। নীচে ভাড়াটিয়া থাকত। পরিচিত দু’জন রিকশাচালকের মাধ্যমে মল্লিকাদেবী রামপুরহাটের চাকলা মাঠ এলাকায় জমি বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। আশিস জমি বেচাকেনার ব্যবসা করত। সেই সূত্রে মল্লিকাদেবীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আশিস জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে সাহায্য করার আশ্বাসও দেয়। আশিসের মাধ্যমে জায়গা বিক্রিও হয়। সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল আশিসের। পরে জায়গা বিক্রি করা নিয়ে আশিস কিছু টাকা দাবি করে। সেই থেকে ওই প্রৌঢ়ার সঙ্গে বিবাদ হয় তার। ২ জুলাই ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে আসে আশিস। কিছু ক্ষণ পরে ভাড়াটিয়া এক মেয়ের নাম করে বাঁচাও বলে চিৎকার করতে শোনা যায় প্রৌঢ়াকে। তখন পড়শিরা আশিসকে সিড়ি দিয়ে নেমে যেতে দেখেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করায়, আশিস জানায়, মল্লিকাদেবী অসুস্থ। তাই ওষুধ দিতে এসেছিল। কিন্তু মল্লিকাদেবীর ঘর বন্ধ থাকায় পড়শিদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ঘর খুলে দেখেন দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় ওই প্রৌঢ়ার দেহ পড়ে রয়েছে।
পুলিশের কাছে আশিসের নামে খুনের অভিযোগ করলেও মৃতার পরিবারের লোকেরা সিআইডি তদন্ত দাবি করেন। ঘটনার চার মাস পরে সিআইডি ফিঙ্গার প্রিন্টের নমুমা সংগ্রহ করার পাশাপাশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। সিআইডির তদন্তকারী অফিসার সৌরভ ঘোষ ওই বছর ৭ ডিসেম্বর চার্জশিট জমা দেন। পরবর্তীতে ২৬ জন সাক্ষ্য দেন। সব কিছু দেখে গত বুধবার আশিসকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন সাজা হয়। |