আশা-কর্মীদের বেতন বেঁধে কেন্দ্রকে তোপ মমতার
হাজার হাজার কোটি টাকা দেনার কথা প্রকাশ্যেই বলছেন বারবার। তারই মধ্যে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের মাইনে দেওয়ার স্থায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে স্বাস্থ্য দফতর আয়োজিত এক সম্মেলনে জেলার ‘অ্যাক্রেডিটেটেড সোশ্যাল হেল্থ অ্যাক্টিভিস্টস’ বা আশা-কর্মীদের জন্য মাসে ১৩০০ টাকা স্থায়ী মাইনে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আশা-রা আমাদের ঘরের মেয়ে। ১ মে থেকে তাঁদের অ্যাকাউন্টে ১৩০০ টাকা করে জমা পড়ে যাবে। বাদবাকি তাঁরা যা রোজগার করবেন, তা এর সঙ্গে যুক্ত হবে। আশাদের জীবনে অন্তত কিছুটা টাকা সুরক্ষিত করল এই সরকার।”
নেতাজি ইন্ডোরে বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
২০১০-এর শেষের দিকে আশা বা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের টাকা দেওয়ার স্থায়ী ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছিল কেন্দ্র। ঠিক হয়েছিল, আশা-কর্মীদের টাকা দেওয়া হবে কাজের ভিত্তিতে। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “কেন্দ্র টাকা দিলে দেবে, না-দিলে না দেবে। ভারী বয়েই গিয়েছে! আমার আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু শিশুমৃত্যু তার থেকেও ভয়ঙ্কর। সদ্যোজাতের মৃত্যুহার কমাতে আশা-কর্মীরা ভাল ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনারাই আমাদের ভবিষ্যৎদের জীবন গড়বেন। তাই আপনাদের জন্য আমাদের সরকার যেখান থেকে হোক এই টাকা জোগাড় করে দেবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, কাজের ভিত্তিতে কেন্দ্র আশাদের যে-টাকা দেয়, সেটা চলবে। তার সঙ্গে এই ২০১৩ সাল থেকে ১৩০০ টাকার স্থায়ী ব্যবস্থাটা রাজ্যের অতিরিক্ত সংযোজন।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় কেন্দ্রের বঞ্চনা এবং রাজ্যের সাহায্যের কথাই ঘুরেফিরে আসে। তাঁর অভিযোগ, গ্রামাঞ্চলে তৃণমূল স্তরে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা কেন্দ্রীয় সরকার ভাবে না। তাঁদের কথা ভাবে শুধু রাজ্য সরকার। তাঁদের জন্য বড় ঝুঁকি নিতেও পিছপা নয় রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর হিসেব, প্রায় ৪২ হাজার আশা-কর্মীকে (সংখ্যাটা কিছু দিনের মধ্যেই প্রায় ৬০ হাজার হবে) মাসে ১৩০০ টাকা মাইনে দিতে সরকারের অতিরিক্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা লাগবে। আর্থিক সমস্যার মধ্যেও তৃণমূল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি সরকার কতটা সহানুভূতিশীল, তা প্রমাণ করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার হাতে টাকা নেই। তবু আমি ঝুঁকি নিচ্ছি।” তিনি জানান, নার্সিং প্রশিক্ষণে আশা-কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আশা-কর্মীদের জন্য মাসে ১৩০০ টাকা স্থায়ী বেতন ঘোষণা করার পরেই কর্মীদের মধ্য থেকে সেটা দু’হাজার টাকা করার দাবি ওঠে। মমতা বলেন, “এখন এটাই থাক। এখন আমার হাতে আর টাকা নেই। পরে আবার দেখা যাবে।”
কাজ কী
গর্ভবতীদের নাম নথিভুক্তি প্রসূতি পরীক্ষা, টিকাকরণ
হাসপাতালে প্রসব মা-শিশুর দেখভাল
রুটিন টিকাকরণ গর্ভনিরোধক বিলি
ডেঙ্গি-এইচআইভি রোধে প্রচার ম্যালেরিয়ার স্লাইড টানা
যক্ষ্মায় ডটস-ওষুধ দেওয়া
কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশা-কর্মীদের জন্য স্থায়ী বেতনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরেই কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। টানাটানির সংসারে অতিরিক্ত ১০০ কোটি কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশে শোনা গিয়েছে সমালোচনার সুরও। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, একেবারে প্রথম দিকে কেন্দ্রও আশা-কর্মীদের জন্য মাসে ৮০০ টাকা স্থায়ী বেতনের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তখন দেখা গিয়েছিল, ওই কর্মীদের অনেকেই কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। সারা মাস কাজ না-করেই ৮০০ টাকা পাচ্ছেন। এতে জেলায় মা ও শিশু স্বাস্থ্যের কাজও বিঘ্নিত হচ্ছিল। সেই জন্যই স্থায়ী মাইনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী আবার পুরনো নিয়ম ফিরিয়ে আনলেন। এতে আবার সেই পুরনো সমস্যা দেখা দিতে পারে।” রাজনীতির কারবারিরা এর মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটের রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছেন। বলছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে এ দিন প্রায় ১০ হাজার আশা-কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন। তাঁদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে মমতা তৃণমূলের পালে গ্রামীণ ভোটারদের একটা বড় অংশের সমর্থনের হাওয়া লাগাতে চাইছেন। সম্মেলনের শেষ পর্বে আশা-কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আপনারা ভাল করে কাজ করুন আর সবাই প্রার্থনা করুন, ‘মা, এই গভর্নমেন্টকে ভাল রেখো’।” মুখ্যমন্ত্রীর এই উক্তির মধ্যেও রাজনীতিই দেখছেন সমালোচকেরা। তবে প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “আশা-কর্মীরা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে অনেক দিন ধরেই দাবি জানাচ্ছেন। ওঁদের দাবি মেনে সরকার টাকা দিতে পারলে ভাল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.