নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে এক মাসের মধ্যেই অবৈধ নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিলেন ওই বিভাগের মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক। তাঁর নির্দেশে ‘কর্মই ধর্ম’ এবং ‘সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে’ এই কথা লিখে দফতরে ঢোকার মুখে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আড়াই মাস পরেও অবৈধ নির্মাণগুলির বিরুদ্ধে তিনি কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারেননি। তাই অবৈধ নির্মাণ নিয়ে যে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল তা নিয়ে ফের সরব হচ্ছেন অনেকে। আজ, বৃহস্পতিবার বিরোধী বামেরাও পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে মুখ খুলতে চলেছে।
বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর দফতরের কাজ বুঝে নিতে সময় লাগছে। তবে দিন পনেরোর মধ্যেই অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করব। প্রয়োজনে বিভিন্ন দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে কমিটি গঠন করে ওই কাজে নামব।”
তাঁর আশ্বাসে অবশ্য ভরসা নেই বিরোধী-সহ অনেক কাউন্সিলররেরই। দলত্যাগী চেয়ারম্যান নান্টু পালের পদত্যাগ দাবি করে গত সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেস এবং বাম কাউন্সিলরদের বিক্ষোভে ভণ্ডুল হয়ে যায় বোর্ড মিটিং। সেই থেকে নান্টুবাবু পদ থেকে না সরা পর্যন্ত বোর্ড মিটিংয়ে যোগ না দেওয়ায় কথা জানিয়েছিলেন বামেরা। এত দিন তারা যোগও দেননি। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি বিশেষ সভা ডাকা হয়। সেখানে ভোটাভুটিতে হেরে নান্টুবাবু পদ থেকে অপসৃত হন। তাই এই বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দিতে বামেদের আর কোনও আপত্তি নেই। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসে কেন? সে জন্যই তো নানা প্রশ্ন উঠছে।”
শহরের প্রায় ২৫০ অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে পুরসভায়। বিরোধীরা তো বটেই যা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সময়েই সরব হন কংগ্রেস তৃণমূলের কাউন্সিলররাও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর একাধিক বার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারার পিছনে আর্থিক লেনদেন থাকা নিয়েও অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস এবং তৃণমূলের প্রবীণ নেতৃত্বের একাংশ। চাপে সীমা সাহাকে বিল্ডিং বিভাগ থেকে সরিয়ে বস্তি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সঞ্জয়বাবুকে ওই পদে বসানো হলেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি কেন, সেই প্রশ্নেই নানা জল্পনা চলছে।
অন্য দিকে নকশা ছাড়াই নির্মাণ কাজের অভিযোগ উঠেছিল যে ১১ টি নির্মাণকাজের বিরুদ্ধে সেগুলির একাংশ মেয়রের কাছে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আবেদন করেছিলেন মাস দু’য়েকের বেশি আগে। ১৭ জানুয়ারি ওই নির্মাণগুলির ৮ টির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডেকে শুনানি হয়েছে পুর ভবনে। আদালতের নির্দেশ মেনে ১ মাসের মধ্যে মতামত জানানোর কথা থাকলেও তা এখনও জানানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩ টি ক্ষেত্রে নির্মাণকাজে যুক্ত ব্যক্তিরা পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল তারা নির্দেশ মেনে অবৈধ অংশ ভেঙেছেন। মেয়র বলেন, “দ্রুত সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হবে।”
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের উল্টেদিকে একটি ওষুধের দোকানের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল। অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে আদর্শ মহাবিদ্যালয় ভবন, চানাপট্টির একটি বাড়ি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সেবক রোডে একটি ভবন, বর্ধমান রোডে ২ টি বাণিজ্যিক ভবনে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রেও। সঞ্জয়বাবুর ওয়ার্ড লাগোয়া ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি নালা আটকে অবৈধ ভাবে দোকান নির্মাণের অভিযোগও রয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেননি পুর কর্তৃপক্ষ। |