পরস্পরের উপরে ‘চাপ’ বজায় রেখেও ‘দূরত্ব’ কমাতে চাইছে রাজ্য সরকার ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। অন্তত বুধবার দিনভর জিটিএ ও মহাকরণের অফিসারদের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদান তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, মার্চে মোর্চার যে বন্ধ-সহ একাধিক আন্দোলন কর্মসূচি রয়েছে, তা থেকে তাদের নিরস্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধের নিষ্পত্তির চেষ্টা করতে শীঘ্রই পাহাড়ে যাবেন সরকারের এক শীর্ষ কর্তা। তবে তিনি কে, তা এখনও জানা যায়নি। মোর্চা নেতারা অবশ্য সরকারের এই উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়াই দিয়েছেন। আলোচনায় দাবি মেটার সূত্র মিললে আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবারই বলেছেন, মতবিরোধ থাকলে তা আলোচনায় মেটাতে হবে। মোর্চা নেতৃত্বও পাহাড়ের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই আলোচনা হলে তা ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করছি।”
তবে জিটিএ-এর প্রধান সচিবকে সরানোর দাবিতে রাজ্যের উপরে চাপ বহাল রাখতে চায় মোর্চা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য গোর্খাল্যান্ড। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে আমরা জিটিএ-র মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়নের কাজও করছি। এখন যে সব সমস্যা তৈরি হয়েছে তার সমাধান রাজ্য সরকারকে করতে হবে।
সরকারি ভাবে আলোচনার ডাক দেওয়া হোক। আমরা দলীয় পর্যায়ে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
মুখ্যমন্ত্রীর শেষ উত্তরবঙ্গ সফরে দার্জিলিংয়ের ম্যাল চৌরাস্তায় গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান ওঠার পরেই মোর্চা-রাজ্য দূরত্বের সূত্রপাত হয়। মোর্চা জিটিএ-এর প্রধান সচিব পদ থেকে সৌমিত্র মোহনকে সরানো ও লেপচা উন্নয়ন পর্ষদকে জিটিএ-এর আওতায় দেওয়ার দাবিতে ৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত পাহাড়ের সব সরকারি অফিস অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ১৪ ও ১৫ মার্চ ও ২১ ও ২২ মার্চ পাহাড়ে বন্ধের ডাকও দিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের সঙ্গে মোর্চার দূরত্ব বাড়ায় পাহাড়ের নানা এলাকায় জিএনএলএফ সমর্থকরা ফের পতাকা টাঙিয়ে দেন। মোর্চাও গোর্খাল্যান্ডের দাবির পক্ষে সমর্থন সংগ্রহের আশায় দিল্লি ও উত্তর পূর্ব ভারতে প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তরাই-ডুয়ার্সে একক ভাবে লড়াইয়ের কথাও ঘোষণা করেছে তারা। মোর্চার পক্ষ থেকে রাজ্যের কাছে বার্তা পৌঁছনো হয়েছে যে, লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ায় সিকিম সরকারও অখুশি। সেখানেও লেপচারা পৃথক পর্ষদের দাবি তুলতে পারে বলে সিকিম সরকারের আশঙ্কা।
এই অবস্থায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সফর সেরে ফেরার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও জিটিএ-র নানা পর্যায়ে আলোচনার পরে মহাকরণ থেকে একজন শীর্ষ কর্তাকে পাহাড়ের পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। |