চেন্নাইয়ে দাপটের সঙ্গে জেতার পর ভারতীয় দল নিশ্চয়ই দারুণ ফুরফুরে রয়েছে। এই জেতার আনন্দটা আরও বেশি, কারণ ভারতকে রীতিমতো পরিশ্রম করে জয়টা অর্জন করতে হল। এমনিতেই ভারতীয় উইকেটে টস হারা বেশ চাপের ব্যাপার। তার উপর চিপকের মতো খটখটে শুকনো উইকেটে পরে ব্যাট করা যে কোনও দলের কাছে কঠিন যুদ্ধের থেকে কিছু কম নয়। সেই যুদ্ধটা জিততে পেরে ধোনিরা নিশ্চয়ই দারুণ খুশি।
একই সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে, স্পিন শক্তির দিক দিয়ে দুর্বল একটা দলের বিরুদ্ধে নিজেদের হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোপুরি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট একদম ঠিক কাজ করেছে। এই রকমের পরিস্থিতি আর পিচে টেস্ট ম্যাচের উপর কোনও রকম প্রভাব ফেলতে হলে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের কিন্তু নিজেদের মান টেনে অনেকটা উপরে তুলতে হবে।
ভারতীয় দলের জন্য চেন্নাই টেস্টে অনেক ক’টা ইতিবাচক ব্যাপার ঘটল। বিশেষ করে ধোনি, সচিন আর অশ্বিনের পারফরম্যান্স গোটা দলের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। যে কোনও অধিনায়কের জন্য সিরিজের শুরুতেই ভাল পারফরম্যান্স করা খুব জরুরি। প্রথম টেস্টে এত বড় রান পাওয়ায় ধোনি নিজে তো স্বস্তিতে থাকবেই। সঙ্গে গোটা সিরিজে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার আত্মবিশ্বাসটাও ওর বেড়ে যাবে। আর সেটাই আগামী এক মাসে এই সিরিজের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। গত বাইশ মাস ধরে ভারতীয় দলের ধারাবাহিক খারাপ পারফরম্যান্স নেতা ধোনির উপর পাহাড়প্রমাণ চাপ তৈরি করেছিল। চেন্নাইয়ের পর সেই চাপ থেকে বেরোতে পেরে ও হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।
চেন্নাইয়ে ধোনি যে ভাবে খেলেছে, তার কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আমি কিন্তু বরাবর ধোনিকে উপরের দিকে ব্যাট করার কথা বলে এসেছি। আর দেখুন, শেষ দু’টো টেস্টে ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নামায় কী ভাবে ওর সেরাটা বেরিয়ে এসেছে! আসলে উপরের দিকে ব্যাট করতে এলে এক জন অলরাউন্ডার নিজের ব্যাটিংটা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। ধোনি তো একজন অলরাউন্ডারই। ধোনির মতো দক্ষ ব্যাটসম্যান নিজের ব্যাটিং নিয়ে একটু ভাবলেই ওর সেরাটা বেরিয়ে আসে। চেন্নাইয়ে ধোনির ইনিংসটা স্পেশাল ছিল। ও ডাবল সেঞ্চুরি করেছে বলেই শুধু নয়, ওই ইনিংসটাই ম্যাচের মোড়ও ঘুরিয়ে দিল। প্রথমত, ধোনি অত দ্রুত রানগুলো তোলায় ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে চলে আসে। আমি নিশ্চিত এই ইনিংসটার পরে ধোনি বুঝতে পেরেছে যে, ইতিবাচক খেলাটাই ওর সবথেকে বড় শক্তি। সব ধরনের কন্ডিশনেই ওর ঠিক এই রকম ইতিবাচক ব্যাটিং করা উচিত। বিশেষ করে ভারতের এই নতুন দল নিয়ে ও যখন বিদেশ সফরে যাবে, তখন ব্যাট হাতে ওর ভাল করা এখন থেকে জরুরি হবে। বিদেশের মাঠে ধোনির ব্যাটিং রেকর্ড আহামরি নয়। কিন্তু ভারতীয়দের সব রকমের পরিস্থিতিতে ভাল করতে হলে ধোনিকে সেই রেকর্ডটা বদলে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত, চেন্নাইয়ে ভারতকে লিড এনে দেওয়ার কাজটাও ও দায়িত্ব নিয়ে করল। ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে ওর পার্টনারশিপটাই অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচের বাইরে ছিটকে দেয়। নয়তো ভারতকে শেষ দিনে ২৫০ তাড়া করতে হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারত। সচিনের ফর্ম, বিশেষ করে চেন্নাইয়ে ও যে ভাবে ব্যাট করল, সেটা ড্রেসিংরুমের জন্য দারুণ খবর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সচিন বরাবরই ভারতের প্রধান শক্তি। তবে সিরিজের বাকি টেস্টগুলোতেও ওকে এ ভাবেই ব্যাট করে যেতে হবে। অশ্বিনও এই টেস্টে অসাধারণ ছিল। হরভজন আর জাডেজার সঙ্গে ওর বোলিং পার্টনারশিপ সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতেও ভারতের ভাল পারফরম্যান্সের আসল চাবিকাঠি হবে। |