রামিজ দায়ুবকে দেখে কে বলবে লেবাননের গড়াপেটা কেলেঙ্কারিতে আজীবন নির্বাসিত!
যুবভারতীর ভিভিআইপি বক্সে বসে থাকা হাসিখুশি লেবানন স্টপারকে দেখে বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল, এই লোকটার বিরুদ্ধেই বিশাল টাকা নিয়ে জোড়া ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাঁর দেশে। এক দিন আগেই।
বুধবার সকাল থেকে কলকাতায় এএফসি কাপ খেলতে আসা দায়ুবকে নিয়ে তাঁর দল সেলেঙ্গর-সহ ফুটবলমহলে যখন তীব্র আলোড়ন, দায়ুব তখন হাসছেন। ইস্টবেঙ্গলের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করেছেন চুটিয়ে। বিতর্ক এড়াতে অবশ্য কথা বলেননি সাংবাদিকদের সঙ্গে। বরং মিডিয়াকে এড়াতে পুলিশ আর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য নিয়ে চলে গিয়েছেন টিম হোটেলে। রাতে অবশ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে তিনি বলেছেন, “লেবানন এফএ আমাকে শাস্তি দেওয়ার কে? ফিফা তদন্ত করে দেখুক আমি দোষী কিনা।” |
চার বছর আগে সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে এসেছিলেন দায়ুব। ছাড়পত্র পাননি বলে সে বার ফিরে গিয়েছিলেন। এ বারও শহরের মাঠে নামা হল না তাঁর। অথচ ম্যাচের দিন দুপুর পর্যন্ত দায়ুবের নাম সেলাঙ্গরের তালিকায় ছিল। “দুপুরে লাঞ্চ টেবিলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও চিঠি না আসায় দায়ুবের নাম ছিল তালিকায়। কিন্তু ম্যাচের কিছুক্ষণ আগে আমাদের ফুটবল ফেডারেশন বারণ করে ওকে খেলাতে,” বলছিলেন মালয়েশিয়ান ক্লাব সেলাঙ্গর কোচ ইরফান বকতি। সঙ্গে হতাশ গলার সংযোজন, “দায়ুবের শাস্তির খবর শোনার পরই আমাদের টিমের মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। ম্যাচে তার প্রভাব পড়েছে। কী আর করা যাবে।”
কিন্তু দায়ুব যদি সেলাঙ্গরের স্টপারে থাকতেন তা হলেই কি আটকানো যেত এ দিনের বিধ্বংসী ইস্টবেঙ্গলকে? উত্তর হবে, না এবং না। বহু-বহু দিন পর লাল-হলুদ জার্সি দেখে মনে হলএটাই ‘রিয়েল পাওয়ার’। ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’। নিছক দুই ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাবের নাম না!
বিদেশি দল সামনে পড়লে ইস্টবেঙ্গল আগুন হয়, এটা মিথ। সুধীর-সমরেশ-গৌতমরা কত ম্যাচ যে জিতেছেন। পাস ক্লাব, ডক রো গ্যাং, পিয়ং ইয়ং কত ক্লাব নতজানু হয়েছে। ভাইচুং, ডগলাস, ওমোলোরাও তো হারিয়েছেন ওয়ার্দি কাওয়াসাকি, বেক তেরো সাসানাকে। কিন্তু সেই মিথ-টা যেন ভাঙতে বসেছিল। সেই কবে পাঁচ বছর আগে অ্যালভিটোরা জর্ডনের আল হুইদাতকে হারিয়েছিলেন। তার পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিদেশি দলের বিরুদ্ধে আর সাফল্য কই লাল-হলুদের? বারবার এএফসি কাপে ইস্টবেঙ্গল খেলেছে। ফিরে এসেছে হেরে বা ড্র করে। গত একুশ ম্যাচে এই টুর্নামেন্টে জয় ছিল না লাল-হলুদের! সেই চাকা এ দিন ঘুরল। |
প্রবলভাবেই। চিডি, সঞ্জু, লালরিন্দিকা, হরমনজিৎ খাবরা, মেহতাবরা ম্যাচটা জিতলেন দাপট দেখিয়ে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে সাত ধাপ এগিয়ে থাকা একটা দেশের নামী দলকে দুমড়ে-মুচড়ে দিলেন ওঁরা। শুধু গতি আর জায়গা বদল করে। কত গোলের সুযোগ যে এল? ম্যাচের পর সেলাঙ্গর কোচকে শুনতে হল, “কত গোলে ম্যাচটা হারতে পারতেন?” প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোকের মুখ গম্ভীর। “সঞ্জু-লালরিন্দিকা আমাদের মেরে ফেলল।”
দায়ুব কেলেঙ্কারিতে বিধ্বস্ত সেলাঙ্গর যে ফর্মেশনে দল নামিয়েছিল সেটা আত্মরক্ষার। মর্গ্যান কিন্তু শুরু করলেন, ওভার বাউন্ডারি হাঁকানোর মনোভাব নিয়ে। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। চিডি-বরিসিচের সঙ্গে পেন। কিন্তু তিন বিদেশিকে ছাপিয়ে মহাতারকা হয়ে গেলেন দুই পাহাড়ি সঞ্জু এবং লালরিন্দিকা। দু’জনের দৌরাত্মে মালয়েশিয়ার ‘লাল দৈত্য’ দাঁত-নখ বার করার সুযোগই পেল না।
বিরতির তিন মিনিট আগে লালরিন্দিকা চল্লিশ বছর আগের শম্ভু মৈত্র হলেন। দূর থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটটা গোলে ঢোকার পর দু’হাত আকাশে তুললেন মর্গ্যান। সেলাঙ্গরের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে পিকে-র ইস্টবঙ্গলকে শিল্ড ফাইনালে তুলেছিলেন শম্ভু।
এ দিন লালরিন্দিকা ইস্টবেঙ্গলকে জিতিয়ে শাপমুক্তি ঘটালেন মর্গ্যানের। ৩২ মাস এখানে কোচিং করছেন। এএফসি কাপে ১২ ম্যাচ খেলেছেন। এ দিনের আগে কোনও ম্যাচ জিততে পারেননি। গাড়িতে বাড়ি যাওয়ার আগে বলা ব্রিটিশ কোচের প্রতিক্রিয়া তাই লিখতেই হচ্ছে “আমার কোচিংয়ে এত শৃঙ্খলার ফুটবল ইস্টবেঙ্গলকে কখনও খেলতে দেখিনি।”
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, খাবরা, উগা, রাজু, সৌমিক, মেহতাব, সঞ্জু, লালরিন্দিকা, পেন, বরিসিচ (রবিন), চিডি (বলজিৎ)। |