মোরিনহো মডেল নিয়ে এসি মিলান কয়েক দিন আগেই হারিয়েছিল বার্সেলোনাকে। সেখানে স্বয়ং মোরিনহোর হাতে মেসিদের হার হয়তো বিরাট অঘটন নয়। বরং অবাক করার মতো এল ক্লাসিকোয় রোনাল্ডোর বিধ্বংসী ফুটবল! যেমন এক সপ্তাহের মধ্যে পরপর দু’টো বড় ম্যাচে (আগেরটা অবশ্যই এসি মিলান) মেসি-কে পুরো ফ্লপ দেখাটাও বিস্ময়ের!
রোনাল্ডোর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। বার্সা-রিয়াল শেষ সাত ম্যাচেই ওর সাত গোল ছিল। কিন্তু এই মোড-এ, এই স্পিডে ওকে কোনও ম্যাচ খেলতে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। তা-ও বিপক্ষের পাড়ায়। মঙ্গলবার রাতের ন্যু কাম্পে বার্সার এক-এক জনকে রোনাল্ডো ‘বিট’ করেছে আর বলে-বলে ২৫-৩০ গজ পেরিয়ে গিয়েছে! তার পর হয় নিজে ভয়ঙ্কর শট নিয়েছে। কিংবা গোল করার জায়গায় সতীর্থদের পাস দিয়েছে। এই ফর্মে থাকলে সামনের মঙ্গলবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নক আউটে ওর পুরনো ক্লাব ম্যান ইউকেও কাঁদিয়ে ছাড়বে। প্রচণ্ড গতিতে তিন-চারটে পাসে বিপক্ষ বক্সে গোল করার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে এই রিয়াল। আবার বিপক্ষের কাউন্টার অ্যাটাক সামলাতে চোখের নিমেষে ছ’-সাত জন নেমে আসছে নিজেদের বক্সে। মেসিকে ত্রিভুজ কভারিং না করে তিন জনে প্যারালাল কভারিং করল। মাত্র দু’-তিন গজ দূরত্বে পাশপাশি দাঁড়িয়ে। মেসির পক্ষে পর্যন্ত ‘বিট’ করার জায়গা বার করা সম্ভব হয়নি। |
তার আগে অবশ্য এই শনিবারই স্প্যানিশ লিগে এল ক্লাসিকো আছে। কিন্তু লিগে বার্সেলোনা অনেক পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় মনে হয় সম্মানের ম্যাচেও রিয়াল খুব একটা জানপ্রাণ লাগাবে না। মোরিনহো খুব ভালই জানেন লা লিগা আর পাবেন না। বরং কোপা দেল রে-র ফাইনালে সেভিয়া বা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের যে-ই উঠুক, রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ভাল করার সুযোগ আছে তাঁর দলের। রোনাল্ডোর দুর্ধর্ষ ফুটবলে বার্সেলোনা চূর্ণ হলেও আমার মতে পর্দার পিছনে আসল লোক মোরিনহো।
এ ধরনের মেগা ম্যাচ শুধুই ট্যাকটিক্স, টেকনিকের কচকচানিতে বার করে আনা যায় না। তার সঙ্গে দরকার নিজের দলের মধ্যে বড় ম্যাচ জেতার আবেগ তৈরি করা। নিজের প্রধান অস্ত্রকে তাতিয়ে তোলা। রোনাল্ডো আর রিয়ালের মধ্যে টিম-বস সেটা নিখুঁত ভাবে গেঁথে দিতে পেরেছিলেন। তুলনাটা বাড়াবাড়ি শোনালেও বলব, আমাদের সময় ইস্ট-মোহন লড়াইয়ে প্রদীপ’দা ঠিক এ রকমই জেতার আবেগ, নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার উদগ্র ইচ্ছে টিমের প্রধান ফুটবলারদের মনের মধ্যে তৈরি করতেন। ফুটবলে ভোকাল টনিক সব যুগেই সমান কার্যকরী। |
কাসিয়াস বাদে দু’দলই পুরো শক্তি নিয়ে খেলেছে। তবে র্যামোস, দি’মারিয়া, খেদেইরা ফেরায় রিয়ালের যতটা লাভ হয়েছে। বুসকেতস, জাভি, ফাব্রেগাসকে পেয়ে হয়নি বার্সার। পিকে-পুওলের সেন্ট্রাল ডিফেন্স জুটিকে নিয়ে মনে হয় বার্সার এ বার ভাবার সময় এসেছে। ওদের খারাপ খেলাতেই এ মরসুমে এত বেশি গোল হয়েছে বার্সার বিরুদ্ধে। পিকে ১২ মিনিটেই রোনাল্ডোর গতি সামলাতে না পেরে বক্সে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। পরিষ্কার পেনাল্টি। তবে খেদেইরা-দি’মারিয়া হয়ে রোনাল্ডোর দ্বিতীয় গোলটাই বার্সার কফিনে আসল পেরেকটা পুঁতে দেয়। ভারান ফিনিশিং টাচ-টা দেয় ৩-০ করে। ম্যাচ শেষের এক মিনিট আগে করা আলবার গোলটা বার্সার পক্ষে সান্ত্বনাও নয় হয়তো! |
|
• ৭৫ শতাংশ পাস ঠিকঠাক করতে পেরেছেন মেসি। যা বার্সার মধ্যে সবচেয়ে কম। |
• ৯০ মিনিটে একটা শটও তেকাঠিতে রাখতে পারেননি মেসি। |
• এল ক্লাসিকো-র ইতিহাসে রোনাল্ডো প্রথম ফুটবলার যিনি টানা ছ’টা অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করলেন। |
• ৯৫ হাজার দর্শক ঠাসা ন্যু কাম্পে বার্সা সমর্থকেরা বারবার রোনাল্ডোর মুখচোখে সবুজ লেজার রশ্মি ফেলে তাঁকে বিরক্ত করে। |
• ম্যাচের সরকারি ওয়েবসাইটে ‘টপ অব দ্য ম্যাচ’ রোনাল্ডো। ‘ফ্লপ অব দ্য ম্যাচ’ মেসি। |
• রেটিংয়ে রোনাল্ডো ৫/৫, মেসি ১.৫/৫। |
• বার্সার সর্বোচ্চ রেটিং ৩/৫, মাত্র দু’জন আলভেস ও ইনিয়েস্তার। |
• ৪-৪.৫/৫ রেটিং পেয়েছেন রিয়ালের চার জন ভারান, দি’মারিয়া, ওজিল, আলোন্সো। |
|