|
|
|
|
দুই শহরের বাজার যেন জতুগৃহ |
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, নেই নজরদারিও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ঘিঞ্জি পরিসরে গা ঘেঁষাঘেঁষি দোকান। বহু দিনের পুরনো বিদ্যুতের তার ঝুলছে বিপজ্জনক ভাবে। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের কোনও বালাই নেই। কিছু ঘটে গেলে দমকলও অলিগলি দিয়ে অকুস্থলে পৌঁছতে পারবে না।
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর দুই শহরের বাজারগুলির এমনই দশা। মঙ্গলবার কলকাতার বাজারে বিধ্বংসী আগুন মনে করিয়ে দিয়েছে যে কোনও এখানেও ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। মেদিনীপুর শহরের বড়বাজার, সঙ্গতবাজার, সাহাভড়ং বাজার, স্কুলবাজার। চারটি বাজারই লাগোয়া। চারদিকে শুধু দোকান আর দোকান। দোকানের সামনের রাস্তার উপরেও পসরা সাজানো। তারই ফাঁকে কোথাও কোথাও ফাস্টফুডের স্টল, ফুচকার গাড়ি বা পানগুমটি। সে দিকেই শয়ে শয়ে পথচারীর চলাচল, রিকশা, মোটর সাইকেল, সাইকেলের আনাগোনা। রাস্তায় তিল ধারণের জায়গা থাকে না।
এমন জনবহুল এলাকাতেই ছড়িয়ে রয়েছে বিপদ। ঝুলছে বিদ্যুতের তার। এখন আবার ছোটবড় প্রায় সব দোকানেই বাতানুকূল যন্ত্র। কাচ দিয়ে ঘেরা। আবার বেশিরভাগ দোকানের দেওয়াল ‘কমন’। পুরনো দিনের দোতলা, তিনতলা বাড়ি জুড়ে দোকানের সারি। রয়েছে গুদামও। অনেকেই সেখানে রাত্রিবাস করেন। ফলে, রান্নাবান্নাও হয়। অসাবধানতায় যে কোনও দিন অগ্নিকাণ্ড ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একবার আগুন লাগলে তা যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রেডিমেড জামা-প্যান্ট-শাড়ি থেকে প্লাস্টিক, কাগজ দাহ্য বস্তুতে আগুন ছড়াতে ছোট্ট একটি ফুলকিই যথেষ্ট। |
|
|
বাজারের মধ্যের সরু গলি। আগুন লাগলে সঙ্কীর্ণ এই পথ দিয়ে দমকলের ইঞ্জিন
ঢোকা অসাধ্য। মেদিনীপুরের বড়বাজারে (বাঁ দিকে) এবং খড়্গপুরের গোলবাজারে
(ডান দিকে) ছবি দুটি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ। |
|
আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তাও নেই। রয়েছে জলেরও সঙ্কট। বাজার থেকে কিছুটা দূরে দু’-একটি পুকুর থাকলেও গ্রীষ্মে তাতে জল থাকে না। শুধু মেদিনীপুরের এই কয়েকটি বাজার কেন, অন্য বাজারেও একই অবস্থা। তা সে সিপাইবাজার হোক বা রাজাবাজার, বটতলাচক হোক বা পাটনাবাজার। খড়্গপুরের মালঞ্চ, গেটবাজা, গোলবাজার, নিমপুরা বাজার, ইন্দাবাজার, খরিদা, পুরাতন বাজার সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি একই রকম। ব্যবসায়ীদের বিষয়টি অজানা নয়। কেবলমাত্র উদাসীনতার কারনেই এই বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কোনও চাপও নেই। কারণ, কোনও বাজারেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কোনও দিন দমকলের আগমন ঘটেনি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। দমকলও মেনে নিয়েছে, বাজারে নজরদারি তারা চালায় না।
কেন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি? মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায় বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কেউ তো কিছু বলেনি। আমরাও মনে করি এটা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দমকল ও প্রশাসন সচেতনতা গড়ে তুলুক। প্রয়োজনে চাপ সৃষ্টি করে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা মানতে বাধ্য করুক। নতুবা বড়বাজারে একবার আগুন লাগলে একটি দোকানও আস্ত থাকবে না।” নিজেদের স্বার্থে নিজেরাই উদ্যোগী হচ্ছেন না কেন? কাপড় ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর ভুতড়ার সাফাই, “কী করতে হয় তাতো জানা নেই। তাহলে করে নিতাম। এ ব্যাপারে যদি প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়া যায় তাহলে ভীষণ ভাল হয়। আমরা বিধি মানতে রাজি।”
একই মত খড়্গপুর চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক রাজা রায়ের। তাঁর কথায়, “প্রতিদিন নতুন নতুন দোকান গড়ে উঠছে। দোকানে দাহ্য বস্তুই তো বেশি। একবার কোনও কারণে আগুন লেগে গেলে মানুষকে বাঁচানো কঠিন। এ বিষয়ে প্রশাসনকেই কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।” এ বিষয়ে দমকল অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে মেদিনীপুর খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “এ বিষয়ে আমি শীঘ্রই দুই পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করব। তারপর ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সঙ্গেও আলোচনা করব। ভবিষ্যতে যাতে কলকাতার মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি না ঘটে সে জন্য পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
|
|
|
|