নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পরোয়ানা নিয়ে গ্রেফতার করাটাই নিয়ম। কিন্তু ধনেখালি থানার লক-আপে মৃত শেখ নাসিরুদ্দিন মোল্লাকে আইনানুগ ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
ওই ঘটনার তদন্তের কেস ডায়েরি খতিয়ে দেখে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানায়, দেখা যাচ্ছে, পুলিশ নাসিরুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছিল ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪২ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯০ ধারা অনুযায়ী। কিন্তু ওই সব ধারায় গ্রেফতার করার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েই গ্রেফতার করতে হয়। কেন নাসিরুদ্দিনের ক্ষেত্রে তা করা হল না, পুলিশের কাছে তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ৭ মার্চের মধ্যে পুলিশকে সেই ব্যাখ্যা পেশ করতে হবে হাইকোর্টে।
পুলিশের তদন্তের প্রক্রিয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সিআইডি-কে সাত দিন পরে হাইকোর্টে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তদন্তে কতটা কী অগ্রগতি হয়েছে, দিন ধরে ধরে ধারাবাহিক ভাবে তা জানাতে হবে সেই রিপোর্টে। ওই তদন্ত রিপোর্ট দেখে হাইকোর্ট পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। গুড়াপের একটি হোমে আবাসিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি-র তদন্তে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে। গত সপ্তাহে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর মামলার শুনানিতে ধনেখালি থানার ভূমিকা নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছিল হাইকোর্ট। নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের কেস ডায়েরি তলব করেছিলেন বিচারপতিরা।
তার পরেই নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় ধনেখালি থানার এক জন সাব-ইনস্পেক্টর-সহ তিন পুলিশকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু হয়েছে। এ দিন আদালতকে সে-কথা জানানো হয়। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের জি পি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে
জানতে চায়, ওই থানার ওসি-র বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া
হয়েছে কি না। কারণ, আদালতে পেশ করা নথি থেকে সে-রকম কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ওসি থানার ইনচার্জ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই এই ঘটনায় তাঁর কী ভূমিকা, সেটা জানা দরকার।
অশোকবাবু জানান, ওই ওসি-কে ‘ক্লোজ’ করে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। ‘শো-কজ’ বা কারণ দর্শানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। পরে সিআইডি সূত্রে জানানো হয়, ওসি কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাবে লেখেন, তা খতিয়ে দেখার পরেই তাঁর ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশকর্মীদের গ্রেফতার করতে এত দেরি হল কেন? এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “কোন কোন পুলিশকর্মী ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, থানার সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে সেটা যাচাই করার দরকার ছিল। সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” |