ফেসবুক থেকে হদিস প্রতারকের
জমি কেনাবেচার অসাধু চক্র হাওড়ায়
ছাই থেকে ইট তৈরির প্রকল্পে জমি কিনতে এসে প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা গচ্ছা দিলেন শিল্পোদ্যোগী। অনিরুদ্ধ পোদ্দার নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বাগনানে। ধৃতের নাম কৃশানু মজুমদার। আমতার বাসিন্দা কৃশানুকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ধরে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, কৃশানু জমি কেনাবেচার একটি বড় প্রতারণা চক্রে জড়িত। বিভিন্ন ব্যক্তিকে জমির মালিক সাজিয়ে, অনিরুদ্ধবাবুর সঙ্গে প্রতারণা করেছে এই চক্র। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, ‘খোসলা কা ঘোসলা’ নামে একটি হিন্দি ছবির ঘটনা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে এই ঘটনা। ওই ছবিতেও জমির মালিক সেজে এক শিল্পপতিকে জমি বিক্রি করেছিল কয়েক জন। তাদের অবশ্য উদ্দেশ্য অসাধু ছিল না। প্রতারিত প্রৌঢ়ের সে ছিল মধুর প্রতিশোধ।
বাগনানের ঘটনায় বহু লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, বাগনানে বিঘা ছয়েক জমি কিনতে চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন অনিরুদ্ধবাবু। জনা চার যুবক তাঁকে জানান, সাবসিট মৌজায় জমি আছে। ওই চার জন অনিরুদ্ধবাবুকে সঙ্গে এনে জমি পছন্দ করায়।
ধৃত কৃশানু। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রতারকেরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে জমির রেকর্ড তোলে। তাতে জমির মালিক হিসাবে যাঁদের নাম নথিভুক্ত ছিল সেই নামের কয়েক জন ব্যক্তির সঙ্গে অনিরুদ্ধবাবু স্থানীয় একটি হোটেলে বৈঠক করেন। চার জনের মধ্যস্থতায় ওই বৈঠকে জমির দাম-দস্তুর ঠিক হয়ে যায়। কিছু টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। মাস দেড়েক পরে জমির ভুয়ো মালিকদের বাকি টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন ওই শিল্পোদ্যোগী।
রেজিস্ট্রেশনের পরে বাগনান ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জমির মিউটেশনের জন্য কাগজপত্র জমা দেন ওই শিল্পোদ্যোগী। সেখানে তিনি জানতে পারেন পুরো সমস্ত কাগজপত্র জাল। জমিটি আসলে বিক্রিই হয়নি। এরপরে বাগনান থানায় তিনি এফআইআর করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, যাঁদের নামে জমিটি রেকর্ড করা ছিল তার সবিস্তার রিপোর্ট ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছ থেকে তোলার পরে ওই প্রতারকেরা রেকর্ডে নথিভূক্ত মালিকেরা যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানকার ভোটার তালিকা জোগাড় করে। ভোটার তালিকায় ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড-এর আদলে ভোটারদের ছবি থাকে। তালিকা থেকে সেই অংশটুকু বের করে নিয়ে মালিকদের নাম-ধাম অবিকল রেখে শুধুমাত্র ছবির জায়গায় অন্য এক জনের ছবি বসিয়ে বানানো হয় নকল ভোটার পরিচয়পত্র। নকল আইডেন্টিটি কার্ড নিয়েই ভুয়ো মালিকেরা আসল বলে পরিচয় দিয়ে শিল্পোদ্যোগীকে জমি বিক্রি করেছিল। এই সাজানো ব্যক্তিরাই তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে জমির টাকা অগ্রিম নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, জমিটি গোপনে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল ধুলাগড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, অনিরুদ্ধবাবুকে ওই প্রতারকেরা জানিয়েছিল বাগনানে রেজিস্ট্রি হলে স্থানীয় দালালেরা তাদের সমস্যায় ফেলতে পারে।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ডে মোট আট জন মালিকের নাম থাকলেও তিন জন প্রায় কুড়ি বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁদের উত্তরাধিকারী হিসাবে জাল ভোটার কার্ড এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে কয়েক জনকে সাজিয়ে আনা হয়েছিল।
চার জন প্রতারক তাদের আসল নাম ঠিকানা ওই শিল্পোদ্যোগীকে দেয়নি। তবে অনিরুদ্ধবাবুর কাছ থেকে পাওয়া বিবরণে পুলিশ জানতে পারে, ওই চার জনের বয়স ৩০-৩২-এর মধ্যে। চেহারায় বনেদি বাড়ির ছাপ রয়েছে। কথাবার্তায় চোস্ত। এরই ভিত্তিতে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। শেষ পর্যন্ত কৃষাণুর ছবি ফেসবুকে দেখে পুলিশ তাকে ফাঁদ পেতে ধরে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, কৃষাণুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের পরিচয় জানা গিয়েছে।
একই সঙ্গে জমির মালিক সেজে যারা এসেছিল ধরা হবে তাদেরও। এই পরিস্থিতিতে হতাশ অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “নিজে থেকে জমি কিনে প্রকল্প গড়তে এসে যে ভাবে ঠকলাম তাতে ভাল শিক্ষা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনও প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগে একশো বার ভাবতে হবে।” জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, জমি কিনিয়ে দেওয়ার প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেক শিল্পোদ্যোগী ক্ষতির মুখে পড়ছেন। একই সঙ্গে অবশ্য পুলিশ জানিয়েছে প্রতারিত হয়েও ঝামেলা এড়ানোর জন্য অনেকে পুলিশের কাছ আসেন না। উলুবেড়িয়ার এসডিপিও শ্যামলকুমার সামন্ত বলেন, “অভিযোগ পেলে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.