সম্পাদকীয় ২...
কেন সরকার
লচ্চিত্রকার ও সেন্সর বোর্ড: এই দুই পক্ষের চিরশত্রু-সম্পর্ক। শিল্পী চাহেন, স্বাধীনতার সীমারেখা যত দূর সম্ভব প্রসারিত করিতে। আর সেন্সর বোর্ড কাঁচি হাতে মুখাইয়া থাকে, সমাজের শুভাশুভের বিপুল ভার নিজস্কন্ধে লইয়া। ইহার পর যখন দ্বন্দ্বসম্পর্কে আরও একটি অক্ষ যুক্ত হয়, রাজনীতির অক্ষ, তখন তো আর কথা নাই। এই মুহূর্তে সুমন মুখোপাধ্যায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কাঙাল মালসাট’ সেন্সর বোর্ডে আটকাইয়া যাওয়ার ফলে বাঙালি সংস্কৃতি ও রাজনীতি লইয়া বিস্তর জলঘোলা হইতেছে। এই ঘোলা জলের উপরে উঠিয়া শ্বাস লইতে চাহিলে একটি মৌলিকতর বিষয়ে প্রণিধান আবশ্যক। তাহা হইল, চলচ্চিত্র-বিচারের সার্টিফিকেশন বোর্ড-এ সরকারের নিয়ন্ত্রণ আদৌ কেন থাকিবে? সরাসরি, প্রত্যক্ষ, অপ্রত্যক্ষ, কোনও ভাবেই এই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তাইতে পারে না। প্রথমত ইহা অনধিকার চর্চা, যাহার যাহা কাজ নহে সেই কাজে হস্তক্ষেপ। দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক আদর্শও বলে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর শৈল্পিক স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রিক ছড়ির শাসন গ্রহণযোগ্য নহে।
চলচ্চিত্রটিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়াছে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই আঞ্চলিক বোর্ডগুলিতে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা থাকেন না, সদস্য মনোনয়ন করে রাজ্য সরকারগুলিও। কোন সরকার কতখানি অধিকার ফলাইবে, তাহা অবশ্যই নির্ভর করে সরকারি সক্রিয়তার প্রাবল্যের উপর। কিন্তু যে ভাবে এই বোর্ড তৈরি হয়, তাহাতে বুঝা সম্ভব, সরকারি হস্তক্ষেপের কারণেই হউক, আর সদস্যদের বিষয়গত অজ্ঞতা ও সংবেদনশীলতার অভাববশতই হউক, সেন্সরশিপের নিরপেক্ষতার আশা অলীক বলিলেই চলে। প্রশ্ন উঠিতে পারে, সেন্সরশিপের কাজ যদি রাষ্ট্রের তরফে সরকারি প্রতিনিধিরা না করেন, তবে কে করিবেন। প্রশ্নটি জরুরি, কেননা গণতান্ত্রিক দেশে যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি অবশ্যমান্য নীতি, সামাজিক সুরক্ষার খাতিরে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিও সর্বথা ফেলনা নয়। তবে প্রশ্নটির যুক্তিমান্য উত্তর সম্ভব। সমস্যার মৌলিক সমাধান চাহিলে নিয়ন্ত্রক-প্রতিষ্ঠানগুলিকেই আগাপাশতলা নূতন ভাবে গড়া দরকার। সরকারি গণ্ডির বাহিরে বিষয়-বিশেষজ্ঞ যাঁহারা, তাঁহারাই নিয়ন্ত্রণের হাল ধরুন। দেশের সংবিধান আছে, আইন আছে, সেই অনুযায়ী বিচক্ষণ বিশেষজ্ঞরাই না হয় বিচার করুন, কোন্ চলচ্চিত্রে কী বলা হইতেছে। বিচক্ষণ কে বা কাহারা, তাহা নির্ধারণ করা বাস্তবে কঠিন কোনও কাজ নহে। এমন ব্যক্তিরই এই ধরনেরই দায়িত্বে থাকা উচিত, যাঁহার উৎকর্ষ সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন উঠিবে না। তাহার পাশাপাশি আর একটি বিষয়ও লক্ষণীয়। কোনও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষত যুক্ত যাঁহারা, তাঁহারা সচরাচর নিজ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অধিকতর স্বাধীনতাই চাহিয়া আসেন। চলচ্চিত্র-শিল্পে যুক্ত মানুষরাও চলচ্চিত্রের জন্য অধিকতর মুক্তি চাহিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। বাস্তবে বিপরীতটিই ঘটিতে দেখা গেল। কে জানে, বর্তমান সদস্যদের শৈল্পিক দায় অপেক্ষা রাজনীতির দায়টি হয়তো গুরুতর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.