সম্পাদকীয় ১...
শুদ্ধির সংকেত
ভারতীয় অর্থনীতির পিঠটি যে প্রবাদোক্ত দেওয়ালে ঠেকিয়াছে, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। রাজকোষ ঘাটতির হার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫.৩ শতাংশ, চলতি খাতে (আমদানি ও রফতানির ব্যবধানজনিত) ঘাটতি অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৬ শতাংশ। ভোগ্যপণ্য সূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার এখনও দশ শতাংশের নীচে নামে নাই। অন্য দিকে, আর্থিক বৃদ্ধির হার সব আশঙ্কাকে ছাপাইয়া মাত্র পাঁচ শতাংশে আসিয়া ঠেকিয়াছে। তবে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকিলে ঘুরিয়া দাঁড়ানোই একমাত্র পথ, এই চলতি বিশ্বাসটি কত ভাগ খাঁটি অন্তত ভারতীয় অর্থনীতির অভিভাবকদের ক্ষেত্রে তাহা আজ সকাল এগারোটায় প্রমাণ হইবে। গতকাল প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষার পৃষ্ঠায় ঘুরিয়া দাঁড়াইবার কিছু ইঙ্গিত রহিয়াছে। যেমন, চলতি খাতে ঘাটতির পরিমাণ কমাইতে সোনার আমদানি কমাইবার কথা বলা হইয়াছে, পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্য বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করিবার কথা আছে। রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৮ শতাংশে বাঁধিবার প্রতিশ্রুতিও আছে। কোন সদিচ্ছা কতখানি রূপায়িত হয়, তাহাই দেখিবার।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় অনুমান, আগামী অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ হইতে ৬.৭ শতাংশের মধ্যে থাকিবে। বর্তমানের পাঁচ শতাংশ হারের কথা স্মরণে রাখিলে অনুমানটি প্রবল আশাবাদী। স্পষ্টতই হিসাবটি সর্বাধিক ইতিবাচক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কষা হইয়াছে, যেখানে বর্ষা স্বাভাবিক হইবে, বিনিয়োগের ধারাটি সুস্থায়ী থাকিবে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ইতর-বিশেষ ঘটিবে না, দেশেও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত থাকিবে। আশাবাদ ভাল তবে দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের বান ডাকিবে, এমন আশা বিপজ্জনক। আর্থিক বৃদ্ধির হার সাড়ে ছয় শতাংশের ঘরে লইয়া যাইতে হইলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াইতেই হইবে। বিনিয়োগকারীদের ঋণে সরকার যাহাতে ভাগ না বসায়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। রাজকোষ ঘাটতির হার কমাইতে হইবে। সরকারের রাজস্ব নীতি সংযত না হইলে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়িবার প্রত্যাশা না করাই ভাল। বাজেটে সংযমের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাইবে কি?
এই বাজেটে অর্থমন্ত্রীর একটি দায়বদ্ধতা আছে খাদ্যের নিরাপত্তা আইনের জন্য তাঁহাকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করিতেই হইবে। সেই টাকা জোগাইবে কে? এখনও পর্যন্ত আভাস, মনমোহন সিংহের সরকার টাকা জোগাইবার একটি পথ খুঁজিয়া পাইয়াছে পেট্রোলিয়াম এবং আংশিক ভাবে সারের ভর্তুকি রদ করিয়া সেই টাকা খাদ্য নিরাপত্তা বিলের খাতে ব্যয় করা। আজকের বাজেট যদি সত্যই এই পথে হাঁটে, তবে তাহা বহু মাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ হইবে। প্রথমত, পেট্রোলিয়াম এবং সারের ভর্তুকির সিংহভাগ যাঁহারা ভোগ করেন, তাঁহারা কোনও যুক্তিতেই ভর্তুকির দাবিদার হইতে পারেন না। সেই ভর্তুকি রদ করা এক অর্থে সামাজিক ন্যায়বিধান। দ্বিতীয়ত, ডিজেলের দাম বাজার-নির্ধারিত হইলে চলতি খাতে ঘাটতির উপরও একটি সুপ্রভাব পড়িবে, যদিও তাহার মাত্রা লইয়া প্রশ্ন আছে। তৃতীয়ত, একটি (অন্যায্য) খাতে ভর্তুকি ছাঁটিয়া আর একটি (তুলনায় ন্যায্য) খাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করায় রাজকোষের উপর অপেক্ষাকৃত কম চাপ পড়িবে। রেল বাজেট এবং আর্থিক সমীক্ষা মিলাইলে আশা করা চলে, আজকের বাজেটটির তার জনতোষণে বাঁধা থাকিবে না। কিন্তু নির্বাচনের আগে শেষ বাজেটটি কি রাজনীতির ছাপহীন হওয়া আদৌ সম্ভব? তাহার প্রয়োজনও নাই। মনমোহন সিংহ-সনিয়া গাঁধীরা সম্ভবত ইতিবাচক রাজনীতির পথ খুঁজিয়া পাইয়াছেন। তাঁহারা বুঝিয়াছেন, শহরাঞ্চলে কংগ্রেসের ভোট কার্যত নাই হইয়া গিয়াছে। লড়িতে হইলে তাঁহাদের ভরসা গ্রাম। সেই গ্রামে ডিজেলের দাম বাড়িলে যতখানি কুপ্রভাব পড়িবে, চাল-গম সস্তায় পাওয়া গেলে তাহার সুপ্রভাব অনেক বেশি। ফলে, পাঁচটি জিনিসে ভর্তুকি ছড়াইয়া রাখিবার পরিবর্তে তাঁহারা খাদ্য নিরাপত্তাকেই পাখির চোখ করিয়াছেন। তাহাতে রাজনীতিও বাঁচিল, অর্থনীতিও মরিল না। সংস্কারের সহিত রাজনীতির আপাত জল-অচল সম্পর্কটি ভাঙিবার এই পথটি যদি বাজেটে গুরুত্ব পায়, ভাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.