শিয়ালদহে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের ঘরের বিবাদ ফের বাইরে এসে পড়ল!
তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের স্ত্রী তথা চৌরঙ্গির বিধায়ক শিখা মিত্রের সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের সংঘাত ছিলই। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি অনুসারে, দলবিরোধী কাজের অভিযোগে শিখাদেবী সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ক। আর শিখাদেবীর দাবি, সাসপেনশনের কোনও চিঠি এখনও অবধি তাঁর হাতে পৌঁছয়নি! সেই বিবাদে বুধবার ঘৃতাহুতি দিল কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চৌরঙ্গির তৃণমূল বিধায়কের গাফিলতির অভিযোগ।
শিখাদেবীর বক্তব্য, শিয়ালদহের কয়েকটি বাজার যে জতুগৃহ হয়ে রয়েছে এবং সেখানে যে কোনও সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে এক বছর আগেই মেয়রকে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেননি মেয়র। শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে ভয়াবহ আগুনের পরে দমকলমন্ত্রীর কাছে শিখাদেবীর প্রশ্ন, “আগাম জানানো সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি পুর প্রশাসন? এ সব কী চলছে?” এ দিনের ঘটনায় ‘সরকারি অবহেলা’ নিয়ে অভিযোগ তুলে বিধায়কের মন্তব্য, “আমি লজ্জিত, দুঃখিত এবং মর্মাহত!” |
ঘটনাস্থলে শিখা মিত্র। —নিজস্ব চিত্র |
অগ্নিদগ্ধ বাড়িটির কাছে তখন বসেছিলেন জাভেদ ও স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের বিধায়ক তাপস রায়। মন্ত্রীকে ঘিরে অনেকেই। আচমকা ভিড় ঠেলে দমকলমন্ত্রীর মুখোমুখি হন শিখাদেবী। অত লোকের সামনে শিখাদেবীর প্রশ্নে কার্যত অস্বস্তিতে পড়েন জাভেদ। তিনি অবশ্য বলতে থাকেন, “কাকে কী দিয়েছেন, আমি তো জানি না। আপনার যদি কোনও প্রস্তাব থাকে, আমাকে জানাবেন। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।”
তবুও দমেননি শিখাদেবী। তিনি বলতে থাকেন, “এতগুলো লোক মারা গেল। শুধু আর্থিক প্যাকেজ দিয়েই কাজ শেষ! পুর প্রশাসন চুপচাপ বসে থাকবে কেন।” জাভেদ বলেন, “আমি তো ওই চিঠির ব্যাপারে কিছু জানি না। আমাকে তো দেননি।” দমকলমন্ত্রীর কথার জবাবে শিখাদেবী বলেন, “মেয়রের উচিত ছিল, ওই চিঠিটা আপনার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। তা করেননি কেন?”
তিনি আরও জানান, বিধানসভায় সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও তিনি এলাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, শিয়ালদহ চত্বরটাই জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচে এবং আশপাশে সবসময়ই আগুন জ্বালিয়ে রান্নাবান্না চলে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশে উনুন জ্বালিয়ে হোটেল ও রেস্তোরাঁ চালাচ্ছে অনেকেই। শিখাদেবীর দাবি, শোভনদেববাবুই বিষয়টি মেয়রকে জানাতে বলেছিলেন। প্রসঙ্গত, সোমেনবাবু দীর্ঘ দিন শিয়ালদহের বিধায়ক ছিলেন এবং তাঁর জায়গায় শিখাদেবী প্রথমে কিছু দিন ওই কেন্দ্রেরই বিধায়ক হয়েছিলেন। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে তাঁর কেন্দ্র বদলে এখন চৌরঙ্গি।
শিখাদেবীর চিঠির কথা অবশ্য মনে করতে পারছেন না মেয়রও। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তাঁর বক্তব্য, “ও রকম কোনও চিঠির কথা তো মনে পড়ছে না।” যদিও মেয়র জানান, ওই বাড়িটি নিয়ম মেনে করা হয়নি। ওখানে থাকা বিভিন্ন দোকানের পুরসভার লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলেছি সে সব দেখতে।” তবে তাঁর বক্তব্য, “বাড়িটি ৫০ বছর আগেকার। তা আইনি না বেআইনি, তা এখন বলতে পারব না। খোঁজখবর নিতে বলেছি।” পরে ‘ক্ষুব্ধ’ দমকলমন্ত্রীও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “উনি (শিখাদেবী) কি দমকল বিভাগকে কোনও চিঠি দিয়েছিলেন?” (শিখাদেবী অবশ্য জাভেদকেই জানিয়েছিলেন, চিঠি তিনি মেয়রকে দিয়েছিলেন)। শিয়ালদহ এলাকায় দোকান ও রাস্তার উপরে ব্যবসা করা নিয়ে শিখাদেবীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জাভেদের বক্তব্য, “উনি যদি চান, তা হলে ওঁর নাম করে আমরা সব ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারি! আইন মোতাবেক অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু সরকারকে মানবিক দিকটাও তো দেখতে হয়!”
দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য শিখাদেবীর অভিযোগকে তেমন কোনও গুরুত্ব দেননি। দলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিশদে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেন, “ওঁকে (শিখাদেবী) সাসপেন্ড করে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়ে দিয়েছেন। দল সমস্ত বিষয়টির উপরে নজর রাখছে।” আর শিখাদেবী এ দিন ফের জানিয়েছেন, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে দলের তরফে কোনও চিঠিই তিনি পাননি।
শিয়ালদহের আগুন নিভলেও সোমেন-জায়ার ‘বিদ্রোহে’র শিখা তৃণমূল শিবিরকে অস্বস্তিতে রাখছেই! |