ভিতরে পা দিতেই গ্রাস করল দমবন্ধ কালো ধোঁয়া
কতলার বাজারের কোল্যাপসিব্ল গেটের ভিতর দিয়ে ঢুকতেই কালো ধোঁয়া চোখে মুখে ঢুকে গেল। সকাল ন’টার সময়ে বাজারের ভিতরটায় গনগনে আগুনের আঁচ। তার মধ্যেই বাজারের ছাদ থেকে টুপটুপ করে গায়ের উপর পড়ছে গরম জল। বাজারের ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম অন্ধকারের মধ্যে বাজারের ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোথাও জ্বলে খাক হয়ে আছে সব্জির বস্তা, কোথাও ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট। দমকলকর্মীরা হোসপাইপ দিয়ে জল ছিটিয়েও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
সেই দৃশ্যের হতবাক সাক্ষী এক মহিলা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পুড়ে যাওয়া বাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে তখন কালো ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠছে। কোনও রকমে পাশ কাটিয়ে সেই অভিশপ্ত সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছলাম। কিন্তু এ বার উপরে ওঠা কি ঠিক হবে? দমকলকর্মীরাই খুব সাবধানে পোড়া জিনিসপত্র পেরিয়ে উপরে উঠছিলেন। খুবই সঙ্কীর্ণ খাড়া সিঁড়ির মুখটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোবাইল টর্চের আলো জ্বেলে কোনওমতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকলাম। ওই আলোতেই দেখলাম সঙ্কীর্ণ সিঁড়ির দুই দিকে আবার ডাঁই করে পড়ে রয়েছে পোড়া প্লাস্টিকের নানা সামগ্রী, থার্মোকলের নানা জিনিসপত্রর সঙ্গে পুড়ে যাওয়া কলার কাঁদিও। কোনও রকমে এক জন মানুষ ওই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে পারেন। জলে থই থই করা সিঁড়ির রেলিংয়ে হাত দিতেই আগুনের গরম ছেঁকায় মালুম হল এখনও কতটা গরম হয়ে রয়েছে সিঁড়ি। কষ্ট করে সিঁড়ি দিয়ে কয়েকটা ধাপ উপরে উঠে ঘুরতেই রাশি রাশি কালো ধোঁয়া যেন আমাদের দিকে ধেয়ে এল।
মেজেনাইন ফ্লোরে উঠেই মনে হল যেন একটা উত্তপ্ত গ্যাস চেম্বারের ভিতরে ঢুকলাম। মুখে রুমাল চাপা দিয়েও কোনও মতেই ওই ধোঁয়াকে কাবুতে আনা যাচ্ছিল না। মেজেনাইন ফ্লোরের সরু একফালি লম্বা জায়গার দু’পাশে ছোট ছোট দোকান। ওই সরু জায়গাতে কী ভাবে এক জন মানুষ শুয়ে থাকতেন সেটাই বিস্ময়ের। দমকলকর্মীরা আমাদের জানালেন ওই ছোট একফালি লম্বা জায়গাতেই পড়েছিল ঝলসে যাওয়া মৃতদেহগুলো। ওই সরু এক ফালি জায়গার মধ্যেই তখন পড়েছিল পুড়ে যাওয়া রাংতার কাজ করা কাগজের প্লেট, বিয়েবাড়ির তত্ত্ব সাজানোর পোড়া ট্রে। ওই পোড়া ট্রে আর পোড়া কাগজের কার্টনে হোঁচট খেয়েই কোনও রকমে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই একফালি জায়গার দু’পাশে ছোট ছোট খুপরি দোকানগুলোর অধিকাংশেরই শাটার নামানো।
দমকলকর্মীরা জানালেন, ওই খুপরি ঘরগুলোর ভিতর থেকে কিছুক্ষণ আগেই বার করেছেন ঝলসে যাওয়া দেহ। আগুন লাগার পরে শাটার খুলে বেরোতেই পারেননি তাঁরা। কিন্তু সব ঘর খোলা যায়নি এখনও। এখনও কি মৃতদেহ রয়েছে ওই খুপরি খুপরি বন্ধ দোকানগুলোতে? এর উত্তর খুঁজতেই দমকলকর্মীরা ওই দোকানগুলোর শাটার খোলার চেষ্টা করছিলেন। কিছু শাটার খোলাই যাচ্ছিল না। তাই গ্যাস কাটার যন্ত্র দিয়ে শাটার ভাঙার চেষ্টা করছিলেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু কালো ধোঁয়ার জন্য বেশিক্ষণ টানা কাজ করতে পারছিলেন না তাঁরা। মেজেনাইন ফ্লোরের ধোঁয়া বার করতে তাই জানলার কাচ ভেঙে ফেলছিলেন দমকলকর্মীরা।
ভস্মীভূত সেই বাজারের অন্দরে। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ দিকে, পুলিশের ব্যারিকেড থাকায় সহজে ঢোকা যাচ্ছিল না পুড়ে যাওয়া বাজারের অন্য দিকেও। বেলা বাড়তেই এপিসি রোডের দিকে ওই বাড়িটির সামনের অংশে যে গেস্ট হাউস রয়েছে, তার পাশের গেট দিয়ে সোজা উঠলাম দোতলায়। নীচেই রয়েছে মেজেনাইন ফ্লোর। জল দিয়ে দমকল ঠান্ডা করার চেষ্টা করলেও দুপুরেও দোতলার মেঝে তেতে রয়েছে। অন্ধকার দোতলায় ইলেকট্রিক লাইন বিচ্ছিন্ন। দোতলায় বেশ অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার অফিস ও গুদাম। বেলায় পুলিশ উপরে উঠতে দেওয়ায় ওই সংস্থার কর্মীরা দরজা খুলে দেখেন আগুনের তাপে ও ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ ওষুধ। সংস্থার কর্ণধার শশাঙ্কশেখর সরকার জানালেন, গ্রাউন্ড ফ্লোরের বাজারের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এই নিয়ে বহুবার জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। দোতলার অন্য একটি একটি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখলাম মেজেনাইন ফ্লোরের একটি দেওয়াল কাটা হয়েছে। সেখান থেকে পোড়া জিনিসপত্র বের করা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মী জানালেন যখন প্রথম যখন দেওয়ালটা ভাঙা হয় তখন এই দেওয়ালের পাশেই পড়ে ছিল আগুনে পুড়ে যাওয়া দু’টি দেহ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.