|
|
|
|
শিয়ালদহের আঁচে রাজনীতির চাপানউতোর |
বাড়িঘর করবেন না বাজারকে, আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
যেখানে কাজ, সেখানে রান্না, সেখানেই রাতের ঘুম।
কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজার, দোকান ও গুদাম ঘরকে কার্যত বাড়িঘর বানিয়ে ফেলার প্রবণতা বাড়ছে। আর তারই জেরে একের পর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “রাতে দোকানে থাকার অভ্যাস বন্ধ করতে না পারলে এমন প্রাণঘাতী ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।”
বুধবার মাঝরাতে শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে আগুন লেগে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা সকলেই রাতে ওই বাড়িতে ছিলেন। এটাই কলকাতায় প্রথম ঘটনা নয়। অতীতে বাজার-দোকান-গুদাম ছাড়াও শহরের বিভিন্ন অফিসে আগুন লাগার পরে ময়নাতদন্ত করে প্রশাসন দেখেছে, দমকল ও পুরসভার নিয়ম না মেনে বাড়িগুলো কার্যত জতুগৃহ হয়ে ছিল। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসাপত্রও চলেছে বেআইনি ভাবে। সারাদিনের কাজের শেষে রান্না করে সেই ঘরেই রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন কর্মচারীরা। এতে থাকার খরচ যেমন বেঁচে যাচ্ছে, তেমনই পাহারার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে মালিকও নিশ্চিন্ত থাকছেন।
|
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা |
• মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ
• আহতদের চিকিৎসার ভার এবং ৫০ হাজার টাকা
• দমকল, পুলিশ, পুরসভাকে নিয়ে তদন্ত কমিটি
• কোনও চক্রান্ত রয়েছে কি না, তা দেখা হবে
• তিন দিনে রিপোর্ট, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা
• শহরকে সুরক্ষিত রাখতে নাগরিকদের নিয়ে কমিটি
• সুরক্ষাবিধি কার্যকর করতে কড়া হবে সরকার |
|
এই ‘পাকাপাকি বন্দোবস্ত’-এর দিকেই আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অগ্নিদগ্ধ বাড়িটি পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “কলকাতার বিভিন্ন বাজারে সমীক্ষা চালাবে রাজ্য। তার পরে তিন মাস সময় দেওয়া হবে। কোনও ভাবেই দোকানে রাত্রিবাস করার অনুমতি দেওয়া হবে না।” তাঁর কথায়, “এখানে (সূর্য সেন মার্কেট) ঘরে ঘরে প্লাস্টিকের গুদাম। যেখানে প্লাস্টিক মজুত রাখা হয়, সেখানেই মানুষ থাকেন, আগুন জ্বেলে রান্নাও করেন। পরিস্থিতি জতুগৃহের মতো। এটা আগে বন্ধ হওয়া দরকার।” |
|
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিভিন্ন বাজার কমিটি ও দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। তাঁদের যুক্তি, “বছরের পর বছর এই ব্যবস্থা চলে আসছে। আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো না বদলে রাতারাতি এই ব্যবস্থা বদলানো যাবে না।” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য দোকান মালিকদের অনুরোধ করেছেন, “আপনারা দোকানে ব্যবসা করুন। রাতে বাড়িতে চলে যান। যে সব কর্মচারী রাতে দোকানে থাকেন, তাঁদের জন্যও অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করন। পুরসভাকে আমি এ ব্যাপারে সাহায্য করতে বলব। আপনারাও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।” মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, “রাতে দোকানে থাকলে কেউ চক্রান্ত করে আগুন দিতে পারে। এখানেও চক্রান্ত রয়েছে কি না, তদন্ত করে দেখা হবে।” |
মৃত ১৯ |
এখনও পর্যন্ত শনাক্ত |
তুকলাল রবিদাস (৪৫) ঝাড়খণ্ড, জগদীশ রবিদাস (৬৫) মুচিপাড়া, ভিকি রবিদাস (৫০) ঝাড়খণ্ড, চেতলাল যাদব (৩৪) ঝাড়খণ্ড, মিঠুন জানা (২৮) কাঁথি, রতন পোদ্দার (২৪) মুচিপাড়া, রাধাগোবিন্দ পোদ্দার (৫৬) মুচিপাড়া, লালচাঁদ পুরকায়েত (২৬) মথুরাপুর, আজিজুল গাজি (২৫) মথুরাপুর, মহম্মদ মোতালিফ মির (২৬) রায়দিঘি, জ্যোৎস্না সাহা (৮০) মুচিপাড়া, পলাশ মণ্ডল (২৪) তেহট্ট, গোঁসাই পাল (৩২) হাবরা, জিতেন্দ্রকুমার শর্মা (১৭) বিহার, গোবিন্দ কর্মকার (৫৮) বেলঘরিয়া, অর্জুন ধর (২৩) কলকাতা। |
নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি |
রাজা দে (৩৯) অশোকনগর, দীনেশ চট্টোপাধ্যায় (৫৬), শঙ্কর দেবনাথ (৪৮) |
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি |
কালাচাঁদ পুরকায়েত (২৫) মথুরাপুর |
বাঁচার উপায়
(রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ) |
দোকানে রাতে না থাকা • দোকানের মধ্যে আগুন না জ্বালানো • দোকানের ভিতরে ধুপধুনো নয় • সিঁড়ি এবং বারান্দায় মাল মজুত নয়। • ছাদের সিঁড়ির দরজা খোলা রাখতে হবে • দোকানে ‘স্মোক-অ্যালার্ম’ লাগানো • পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা • কর্মীদের আগুন মোকাবিলার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ |
|
প্রশ্ন উঠেছে, গরির মানুষ ঘরভাড়া দিয়ে থাকবেন কী করে? এর উত্তরও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, “কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরকার রাতে থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। তা-ও দোকানে থাকার প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না!” মমতার আক্ষেপ, “যে সব গরিব মানুষ প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন, তাঁদের জন্য নাইট শেলটার গড়ে দিয়েছি। কিন্তু ওঁরা যেখানে প্লাস্টিক মজুত করেন সেখানে থাকেন, সেখানেই রান্না করেন।” পরিকল্পনাহীন ভাবে বেড়ে ওঠা মহানগরীতে কী ভাবে এই ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তার উপায় বের করতে পুলিশ কমিশনার, মেয়র, বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রীকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। প্রয়োজনে সরকার যে এ বিষয়ে কড়া হবে, এ দিন সে কথাও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমরা দেড় বছর ধরে একই কথা বলে আসছি। এ বারে কিন্তু আমরা কড়া হব। ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বলছি না। লাইসেন্স বাতিলের কথাও বলছি না। কিন্তু সবাইকে সুরক্ষার ব্যাপারটা আগে ভাবতে হবে। দোকান পুড়ে গেলে তা ফিরে আসতে পারে। কিন্তু মানুষ গেলে আর ফিরে আসবে না।” |
|
|
|
|
|