মোক্তারের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা, গ্রেফতারি নিয়ে বিতর্ক |
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা, কর্তব্যরত পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করল সিআইডি।
ওই সব ক’টি ধারাই জামিন-অযোগ্য। বুধবার মোক্তারকে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পেশ করে সিআইডি। ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপর্ণা রায় তাঁকে ৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওই ঘটনায় মোক্তারকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান তাঁর সমর্থকরা। তাঁদের বক্তব্য, হরিমোহন ঘোষ কলেজে গণ্ডগোলের ঘটনায় তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবালের মদতের কথা জানাজানি হওয়ার পরেই কংগ্রেসের মোক্তারকে ফাঁসানোর ছক কষা হয়েছে।
বন্দর এলাকার ওই কংগ্রেস নেতার গ্রেফতারি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, অসুস্থ ছেলেকে দেখে ভিন্ রাজ্যে পালানোর সময় হাওড়া স্টেশনে মোক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু মোক্তারের ঘনিষ্ঠরা গোয়েন্দাদের দাবি মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, আত্মসমর্পণ করেছিলেন মোক্তার। আত্মগোপন করে থাকার সময়েই এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। আইনজীবীরা তাঁকে জানান, যে সব অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে, তাতে আত্মসমর্পণ করলেও বেশি দিন হেফাজতে থাকতে হবে না। তৃণমূল নেতা ইকবাল ওরফে মুন্নার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে। মুন্না গ্রেফতার হলে দ্রুত জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। গ্রেফতার না হলেও আপাতত বন্দর এলাকায় প্রভাব খাটাতে পারবেন না মুন্না। সেই সুযোগে জামিনে ছাড়া পেলে ওই এলাকায় নতুন করে সংগঠন তৈরি করতে পারবেন মোক্তার। সেই পরামর্শ মেনেই আত্মসমর্পণ করেন তিনি। |
আলিপুর কোর্টে মোক্তার। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
কলকাতা পুলিশের একাংশেরও দাবি, গার্ডেনরিচ থানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন মোক্তার। এত দিন মেটিয়াবুরুজেই লুকিয়ে ছিলেন। স্পর্শকাতর ওই এলাকায় ঢুকে তাকে গ্রেফতার করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হত পুলিশকে। এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে পালাতে যান মোক্তাররা। তখনই গোয়েন্দাদের জালে গ্রেফতার হন। সিআইডি জানায়, ঘটনার দু’দিন পর পালিয়ে খড়্গপুর যান মোক্তার। সেখান থেকে জামশেদপুর। গত সপ্তাহে বিহারের দিলদারনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে সোমবারই গার্ডেনরিচে ফিরেছিলেন।
মোক্তারের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া মুস্তাককেও ৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখতে বলেছে আদালত। তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। সিআইডি-র দাবি, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের তদন্তের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি ধৃতদের কাছে লুকনো রয়েছে। ওই সব নথি উদ্ধারের জন্য মোক্তারদের হেফাজতে রাখা জরুরি। এ দিন দুপুরে মোক্তার এবং মুস্তাককে আদালতে পেশ করে সিআইডি। আদালত চত্বরে মোতায়েন ছিল পুলিশ, র্যাফ। মোক্তারের কয়েকশো সমর্থকের মিছিলকে আদালত চত্বরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। তা সত্ত্বেও গাড়ি থেকে নামার সময় আত্মীয়-বন্ধুদের দিকে নেতাসুলভ মেজাজে হাত নাড়েন মোক্তার-মুস্তাক। এজলাস থেকে বেরোনোর পরেও দেখা যায় একই ছবি। ভিড়ের মধ্যে থেকে ‘মোক্তার ভাই’ বলে আওয়াজ ওঠে।
অভিযুক্তদের আইনজীবী তরুণ রায়চৌধুরী, গোপাল হালদাররা জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে গণ্ডগোলের সময় তাঁদের মক্কেলরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাঁরা ওই কলেজের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সংবাদমাধ্যমেও তাঁদের ছবি দেখা যায়নি। ঝামেলার খবর পেয়ে মোক্তার সেখানে গিয়ে দেখেন, দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বাদানুবাদ চলছে। ওই ঘটনায় তাঁরা কোনও ভাবেই জড়িত নন।
সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী নবকুমার ঘোষ জামিনের বিরোধিতা করে ধৃতদের ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার আর্জি জানান। তিনি বলেন, গণ্ডগোলে এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মোক্তার। বিপক্ষে ইকবাল। দু’দলের ঝামেলার জেরে এক সরকারি কর্মীর মৃত্যু হয়। জখম হন কয়েক জন পুলিশ, সাধারণ মানুষ। মোক্তার কয়েক জনকে আঘাত করেন বলে অভিযোগ। কারওকে লক্ষ্য করে আঘাত করাও হত্যার চেষ্টার সামিল। ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন মোক্তারের আইনজীবীরা। মোক্তারের সামাজিক সম্মানের কথা উল্লেখ করেন তাঁরা। যে কোনও শর্তে জামিন বা কম সময়ের জন্য হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করেন। ওই কংগ্রেস নেতা অসুস্থ বলে দাবি করে আদালতে রিপোর্টও পেশ করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী তখন বলেন, সামাজিক প্রতিপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা অনেক সময় অসুস্থতার কথা বলে আইনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেন।
দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর মোক্তারদের ৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠান বিচারক। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে এসআই তাপস চৌধুরীর খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সুহান এবং ইবনেকে এর আগে ওই একই তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। |