পোড়া দোকানে রুজি হারানোর কান্না |
“সব শেষ। কিছুই থাকল না।” আগুনে প্রায় পুড়ে যাওয়া দোকানের ভিতরে পড়ে থাকা কালো হয়ে যাওয়া ক্যাশবাক্সটি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে এমনই বলছিলেন খড়দার বাসিন্দা রবি ঘোষ। বুধবার সকালে এক প্রতিবেশী দোকানদারের ফোন পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে চলে এসেছিলেন শিয়ালদহের সূর্য সেন স্ট্রিটে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। তাঁর দোকান কার্যত পুড়ে ছাই।
এপিসি রোডের দিকে সূর্য সেন মার্কেটের প্রথম দোকানটির মালিক রবিবাবু জানালেন, আগে হোটেল ছিল। সেটি পাল্টে বিয়ের উপকরণের দোকান করেন। সকালে পুলিশি কড়াকড়িতে নিজের দোকানের সামনে যেতে পারেননি। দুপুর পর্যন্ত ফুটপাথে বসে অসহায় ভাবে পাঁচতলা বাড়িটির দিকে তাকিয়েই সময় কেটেছে তাঁদের।
আগুনের খবরে এ ভাবেই শিয়ালদহে ছুটে এসেছিলেন খড়দা, মথুরাপুর, জয়নগর, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, নারকেলডাঙা-সহ শহর ও শহরতলির লোকজন। তবে ভিতরে ঢোকার অনুমতি না থাকায় সকলকেই কাটাতে হয়েছে রাস্তায়। হাজারো মানুষের ভিড়ে মাঝে মধ্যেই শোনা গিয়েছে তাঁদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা। |
কাল কী হবে? দুর্ভাবনায় ব্যবসায়ীরা। ছবি: শৌভিক দে |
এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, মাঝেমধ্যেই পুলিশের ব্যারিকেড উপেক্ষা করে পাঁচতলা বাড়ির সামনের রাস্তায় চলে যাচ্ছেন এক প্রৌঢ়। বাড়িটির দিকে তাকিয়ে বলছেন, “ওঁরা কি বেঁচে আছে? অফিসটা কি আছে?” জানা গেল, মেজেনাইন ফ্লোরে বিরাটির বাসিন্দা প্রণব রায় নামে ওই ব্যক্তির একটি ট্যাক্স পরামর্শের অফিস রয়েছে। তাঁর মেয়ে প্রতীকা চট্টোপাধ্যায় বললেন, “অনেক ফাইল, বেশ কয়েক হাজার টাকাও পুড়ে ছাই।” দুপুরের দিকে এক পুলিশকর্মী প্রণববাবুকে বললেন, “চিন্তা করবেন না। আপনার ঘর দেখে এসেছি। জল দিয়ে ঠান্ডা করা হচ্ছে। দমকল বললেই উপরে উঠতে দেব।” ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ফোনে বাড়িতে ঘটনার কথা বলতে গিয়ে গলা কাঁপছিল শোভাবাজারের রাধারমণ সাহার। বলছিলেন, “জানি না অফিসটা আর আছে কি না।”
সূর্য সেন মার্কেটের এক তলায় সুরেশ অগ্রবালের মুদিখানা। পুলিশি ঘেরাটোপ টপকে নিজের দোকানের সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বললেন, “ফোন পেয়েই চলে এসেছি। দেখলাম দাউদাউ করে বাড়িটি জ্বলছে। কিছু বাঁচাতে পারলাম না।” এপিসি রোডের ফুটপাথে গাছতলায় দাঁড়িয়ে মাঝেমধ্যেই আঁচলে চোখ মুছছিলেন দমদম ক্যান্টনমেন্টের পারুল দাস। কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, “ঘুম থেকে উঠে টিভি চালিয়ে দেখলাম বাজারে আগুন লেগেছে। তখনও ভাবতে পারিনি আমার এত টাকার চাল পুড়ে গিয়েছে।” শুধু এই নয়, পড়ন্ত বিকেলে এপিসি রোডের একটি চায়ের দোকানে বসে এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, “কলার কাঁদি থেকে চুনো মাছ পুড়ে গিয়েছে সবই”। |