যখনই আমরি কাণ্ডের মতো বড়সড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে তখনই প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়ে। যার আঁচ উপলব্ধি করতে পারেন জেলার মানুষও। তবে সেটা অবশ্যই সাময়িক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব আবার আগের অবস্থায় ফেরত আসে।
বুধবার ভোর রাতে কলকাতার শিয়ালদহে সূর্যসেন মার্কেটের ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডের পর আবার বীরভূম জেলার মানুষের কাছে প্রসঙ্গিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে শুধুই কী কলকাতা? আমরাও কী একই বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে নেই? উত্তরটা অবশ্যই হ্যাঁ। কারণ, এই জেলার বাজারগুলি অতি অবশ্যই কলকাতার বাজারের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তবে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে যাওয়ার জন্য সব রসদই মজুত। সেটা জেলা সদর সিউড়ির বিভিন্ন বাজার বা মার্কেট কমপ্লেক্স-ই হোক কিংবা রামপুরহাট, বোলপুর এমন কী দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, নলহাটির মতো পুর শহরের বাজারগুলি এবং তারাপীঠের তারা মায়ের মন্দির সংলগ্ন বাজার। কী সমস্যা? কোথাও রাস্তা জুড়ে অবৈধ ভাবে দোকানপাট বসে যাওয়ায় বাজারে ঢোকার রাস্তা ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে দমকল ঢোকার জায়গা নেই, কোথাও বাজারের বিভিন্ন দোকানপাটে একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে এমন ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যে কোনও সময় শর্ট সার্কিট থেকে আগ্নিকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। কোথাও বা বাজারগুলি দমকল কেন্দ্র থেকে একটা দূরে অবস্থিত, খবর পেয়ে দমকলের ইঞ্জিন আসতে না আসতেই যা ঘটার ঘটে যাবে। |
প্রথমেই আসা যাক জেলা সদর সিউড়ির কথায়। এই শহরের তিনটি বড় বাজারের দু’টি সুপার মার্কেট ও নিউ মার্কেট অবস্থিত বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়। অপর বাজারটি রয়েছে টিনবাজার এলাকায় ‘স্বদেশী বাজার’। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সুপার মার্কেট তুলনায় কিছুটা ফাঁকা হলেও নিউ মার্কেট ও স্বদেশী বাজার নিয়ে চিন্তা রয়েছে। সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কৃষাণ পাল বলেন, “নিউ মার্কেটে (বর্তমানে ৭৮টি দোকান রয়েছে) একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে এত বেশি সংখ্যক বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে যে, এতদিন বিপদ ঘটেনি সেটাই আশ্চর্যের। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাদের বহু বার আনুরোধ করেও ফল হয়নি। অন্য দিকে, সিউড়ির দমকল বিভাগের আশঙ্কা স্বদেশী বাজারকে নিয়ে। এই বাজারে আগেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানেও একই অবস্থা। প্রশ্ন উঠেছে সুপার মার্কেটের পাশে থাকা একটি বহুতল নিয়েও। পেট্রোল পাম্পের পাশে থাকা ওই বহুতলটিতে খাবারের দোকান, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস রয়েছে। বোলপুরের হাটতলা বাজার বা রামপুরহাটের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা বাজারগুলির সমস্যা সঙ্কীর্ণ রাস্তা। দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার সমস্যা রয়েছে। একই সমস্যা দুবরাজপুরের মূল বাজার ও নলহাটির স্টেশন লাগোয়া বাজার নিয়েও।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে রামপুরহাটের ওই ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুপর্না চৌধুরী বলেন, “এর আগেও আমার তরফে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেটা ফলপ্রসূ হয়নি।” দুবরাজপুরের বাজার সমিতির সহ-সম্পাদক তথা পুরসভার বর্তমান বিজেপি কাউন্সিলর সত্য প্রকাশ তিওয়ারি বলেন, “সিউড়ি থেকে দমকল আসতেই যা ঘটার ঘটে যাবে। দ্বিতীয়ত আবৈধ ভাবে বাজারের বিভিন্ন আংশ দখল করে নেওয়ায় বাজার এত ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে, দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার সমস্যা আছে।” মহকুমাশাসক (সদর) চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী বলেন, “প্রশাসনের অবশ্যই দায়িত্ব আছে। মানুষকেও সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা করতে হবে।” |