সংকীর্ণ গলির উপরে ঝুলছে নানা রঙের তার। কোনটা বিদ্যুৎবাহী, কোনটা জেনারেটরের, কোনটা কেব্ল টিভি, কোনটাই বা টেলিফোনের! আলাদা করে চেনার উপায় নেই। নীচে ত্রিপলে ঢাকা সারি সারি দোকান। বিদ্যুৎবাহী তার থেকে নীচে ত্রিপলের উপর আগুনের স্ফুলিঙ্গ পড়লে কী হবে? খোদায় মালুম-- বলছেন ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ীরা। এ ছবি পুরুলিয়া শহরের ব্যস্ত কাপড়গলির।
অগ্নিকাণ্ডের যাবতীয় রসদ এখানে সাজানো রয়েছে। গলির দুপাশে পিঠোপিঠি সারি গিয়ে কাপড়ের দোকান। ১৫০ মিটার ঘিঞ্জি গলিতে দোকানের সংখ্যা দুশোর কম নয়। সেই গলিরই আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে চায়ের দোকান। সেখানে স্টোভ ও কয়লার উনুন জ্বলছে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে নেভাবে কে? সাত-আট ফুট সরু গলির মধ্যে দমকলের গাড়ি ঢুকবে না। গত সেপ্টেম্বর মাসে এই বাজারে বিদ্যুৎবাহী তার থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকলের গাড়ি এনেও কর্মীরা গলির ভিতরে ঢোকাতে পারেননি। গাড়ি বাইরে রেখে লম্বা পাইপ নিয়ে গলির ভিতরে ঢুকতে হয়েছিল দমকল কর্মীদের। এক বার নয়, বার বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। পুরুলিয়া পুরসভার তথ্য বলছে, একদা বনমালি সেন লেন নামে এই গলি প্রায় ১৬ ফুট চওড়া ছিল। দখলদারির জেরে তা কমে এখন নিছক গলি হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরাই বলছেন, বরাতজোরে কোনবারই বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। |
কিন্তু ঘটতে কতক্ষণ? বুধবার শিয়ালদহের ঘটনার পরে ফের এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয় যে বাজারে, যেখানে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা এবং কাপড়ের মতো দাহ্য বস্তু ঠাসা রয়েছে যে বাজারে, সেখানকার অগ্নিসুরক্ষার বিষয়টি অবহেলিত কেন? পুরুলিয়া দমকল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখন দোকান চালুর জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হলে দমকল বিভাগের ছাড়পত্র রয়েছে কি না তা পুরসভার দেখে নেওয়া দরকার। এমনকী এই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করার ক্ষেত্রেও এই ছাড়পত্র রয়েছে কি না সেটা দেখা দরকার। পুরুলিয়া পুরসভাকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম। কিন্তু ওদের তরফে সাড়া পাইনি।’’ কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের এই কাপড় গলিতেই দোকান। তাঁর দাবি, “এখানকার ব্যবসায়ীদের বার বার এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু শুনছে কে? পুরসভা মাঝে মাধ্যে পরিদর্শন করে। কিন্তু দু’দিন বাদেই সেই একই অবস্থা।” পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শীঘ্রই দমকল বিভাগের সঙ্গে কথা বলব।” বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শ্রাবণকুমার শর্মার দাবি, “অনেকে সতর্ক হয়েছেন, অনেকে হননি। ফের সবাইকে বলব।” |