প্রচুর পরিকল্পনা হয়েছে। ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ গোছের প্রতিশ্রুতিও মিলেছে অনেক।
বদলেছে রাজ্যপাট। ক্ষমতায় এসেছে নতুন মুখ। পরিবর্তনের ফুলঝুড়িও ছুটছে নিয়মিত।
কিন্তু ওই পর্যন্তই। গত কয়েক দশকে ছবিটা বদলায়নি এতটুকু। সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে আসানসোল বাজার। মানা হচ্ছে না অগ্নিবিধি। উন্নতি হয়নি অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বা দমকল পরিকাঠামোর।
ঘিঞ্জি গলি। অপরিসর রাস্তা। সরু সিঁড়ির বহুতল দোকান ও শপিংমল। গায়ে গায়ে লাগানো পলিথিনের ছাউনি। গিজগিজ করছে গ্যাসের সিলিন্ডার। মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে বিদ্যুতের তার। সব মিলিয়ে কার্যত জতুগৃহের চেহারা নিয়েছে আসানসোল বাজার।
বাজার চত্বর দিয়ে হাঁটলেই এই দৃশ্য চোখে পড়বে। রোজ কার্যত জীবন হাতে নিয়ে কেনাবেচায় যোগ দেন কয়েক লক্ষ ক্রেতা-বিক্রেতা। যাঁদের অনেকেই শিয়ালদহের সূর্য সেন বাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে চমকে উঠেছেন। প্রথমেই মনে এসেছে, যদি এখানেও এ রকম কিছু হয়? কিন্তু ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের। অভিযোগ, সব জেনেও নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায় পুরসভা। |
প্লাস্টিকের ছাউনি, দাহ্য জিনিসপত্রে ঠাসা আসানসোল বাজার।
বুধবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি। |
আসানসোলে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই বাজার এলাকা ঘুরে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেখা হবে, বিভিন্ন দোকান মালিকেরা সঠিক অগ্নিবিধি পালন করছে কি না। আগুন নেভানোর জন্য পরিকাঠামোর উন্নতি ও দমকলের সমস্যা নিয়েও ফের আলোচনা হবে। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা দমকল অফিসারদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠকের ব্যবস্থা করেছি। অফিসারদের সঙ্গে নিয়েই বাজার এলাকা ঘুরে দেখব।” অভিযোগ উঠেছে, বাজারের কিছু অংশে চোরাগোপ্তা নির্মাণ হয়েছে। মেয়রের দাবি, “ইতিমধ্যেই পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরকে নকশা মিলিয়ে ওই অবৈধ নির্মাণগুলি চিহ্নিত করে বিশেষ রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি। বাজারে যে সব রাস্তা দখল করে পলিথিনের অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি অবিলম্বে খুলে দেওয়ার জন্যও অভিযানে নামা হবে।”
প্রায় পাঁচ বছর আগে পরিকল্পনা হয়েছিল, বাজার এলাকার বিদ্যুৎ পরিবাহী তার মাটির তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এলাকায় গেলেই চোখে পড়ে একাধিক বিদ্যুতের খুঁটিতে মাকড়সার জালের মতো তার ঝুলছে। কেন এই পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি, মেয়রের তা অজানা। তবে বিস্তারিত খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির আসানসোলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মিতেশ দাশগুপ্ত বলেন, “কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কিছু সমস্যা আছে। সেগুলি দ্রুত মিটিয়ে কাজ শেষ করা হবে।”
আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহর ও বাজার বাঁচানোর গুরুদায়িত্ব যাদের কাঁধে, আসানসোলের সেই দমকল পরিকাঠামোও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ জানান, প্রায় আড়াইশো কিমি ব্যাস নিয়ে ছড়ানো এলাকায় আগুন নেভানোর জন্য তাঁর হাতে মাত্র তিনটি ইঞ্জিন রয়েছে। জল ভরার জন্য শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে একমাত্র পাম্প স্টেশন। ভিড় রাস্তা ঠেলে সেখানে যেতেই আধঘণ্টা সময় লেগে যায়। বাজার অঞ্চল এতটাই অপরিসর যে দমকল ঢুকতে পারে না। বহুতলের আগুন আয়ত্তে আনার ‘হাইড্রলিক ল্যাডার’ নেই।
সেলিম জাভেদের মতে, আসানসোল ও আশপাশের অঞ্চলকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে হলে দমকলের পরিকাঠামোর আরও উন্নয়ন দরকার। দমকলের ইঞ্জিনে জল ভরার জন্য রাহা লেন এলাকায় একটি জলাধার তৈরি হয়েছিল বছরখানেক আগে। কিন্তু সেখানকার পরিকাঠামো এতটাই অনুন্নত যে দমকলের ইঞ্জিনে সেখান থেকে জল ভরা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম জাভেদ। কেন সেই পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে না, সে বিষয়েও খোঁজ নেবেন বলে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন।
কোথাও বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই এক বার করে প্রশ্নগুলো উসকে ওঠে। কর্তারাও এক বার করে আশ্বাস দেন। তার পরে যে-কে-সেই। এ বারও তার ব্যত্যয় হবে কি? |