অভিযানের গাড়ি নেই নিধিরাম দমকলের
ড় কোনও ঘটনা ঘটলেই শুরু হয় নড়াচড়া। পরিদর্শনের ঘনঘটা, শীঘ্র ব্যবস্থার আশ্বাসবাদ যায় না কিছুই। কিন্তু কিছু দিন কাটতে না কাটতেই ফের এক দশা। অতীতে নানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে রাজ্যের অন্য সব শহরের মতো দুর্গাপুরেও বিভিন্ন বাজার এলাকার অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বুধবার কলকাতার সূর্য সেন স্ট্রিটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে ফের উঠল সেই প্রশ্ন। যথারীতি, নানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মিলল দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাসও। শহরের বেনাচিতি, স্টেশন বাজার এবং মুচিপাড়া বাজারে প্রধান রাস্তার দু’দিকে শ’য়ে শ’য়ে দোকান। দোকানের সামনে আবার পসরা সাজিয়ে বসে হকারেরা। মাথায় পলিথিনের ছাউনি। ঝুলছে জামাকাপড়। গলি দিয়ে ভিতরে ঢুকে বাজার। দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছনোর রাস্তা প্রায় নেই। বেনাচিতি বাজারের রাস্তাঘাট আগের থেকে তবু চওড়া হয়েছে। সেখানে রাস্তায় গাড়ি রেখে ভিতরে পাইপ দিয়ে জল নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু স্টেশন বাজারে সে সুযোগ নেই। ওই সব এলাকায় আবার তেমন জলের উৎসও নেই।
পলিথিন, ছেঁড়া চট সর্বত্র। দুর্গাপুরের মুচিপাড়া বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের শপিংমল বা বড় বাণিজ্যিক ভবনগুলিতে আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পুরনো বাড়িগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বেনাচিতি, স্টেশন বাজার, সগড়ভাঙা প্রভৃতি এলাকায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানবাড়ি রয়েছে। সেগুলিতে ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা অপরিসর। গ্যাস জ্বেলে রান্নাবান্না হয়। আগুন লাগলে নেভানো মুশকিল। পুর এলাকার পাশাপাশি লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও ইদানীং গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল। অভিযোগ, বহু বাড়িতেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা অত্যন্ত দায়সারা। নিয়মমাফিক জলাধার গড়া হয়নি অনেক বহুতলেই। এক বার আগুন লাগলে তা নেভানো বা উঁচুতলা থেকে মানুষজনকে বের করা আদৌ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দমকলের একাংশেরই।
দমকল সূত্রে জানা যায়, এই সমস্ত বহুতল গড়ার আগে অগ্নি নির্বাপক পরিকল্পনা দেখিয়ে দমকলের প্রাথমিক শংসাপত্র নিতে হয়। অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করার পরে চূড়ান্ত শংসাপত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুরে অন্তত ৫০টি বহুতল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত শংসাপত্রের আবেদন একটিও জমা পড়েছে কি না, সে প্রশ্নে দমকলের এক আধিকারিক বলেন, “মনে পড়ছে না।” বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকা দমকলের বিভাগীয় আধিকারিক তুষারকান্তি সেন বলেন, “বেশ কিছু বহুতলে মানুষ বাস শুরু করেছেন বলে খবর পেয়েছি। অভিযান চালানো হবে।”
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে আসানসোল বাজারে তল্লাশি পুলিশের।
কিন্তু অভিযান হবে কী করে? তার জন্য প্রয়োজনীয় গাড়িই তো নেই দমকলের কাছে। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযান বা পরিদর্শনের জন্য মোটরবাইক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্ধমান জেলায় তেমন মোটরবাইক দেওয়া হবে ৪টি। অথচ দমকল কেন্দ্রের সংখ্যাই ৮টি। কাজেই কোন কেন্দ্র মোটরবাইক পাবে আর কে পাবে না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। দুর্গাপুরে ৫টি ইঞ্জিন রয়েছে। তা চালানোর জন্য যত কর্মী-আধিকারিক থাকার কথা, রয়েছেন তার অর্ধেক। আগুন নেভানো, কুয়ো থেকে উদ্ধারের মতো কাজকর্ম নিয়েই তাঁদের ব্যস্ত থাকতে হয়। অভিযানে বেরোনোর জন্য কর্মী-আধিকারিক মিলবে কোথায়? আগুন নেভানোর আধুনিক ইঞ্জিনটি ২০১০-এর ২৫ মার্চ বুদবুদ সেনা ছাউনির বিস্ফোরণের আগুন নেভাতে যাওয়ার পথে লরির সঙ্গে মুখোমুখি সর্ংঘষে পড়ে বিকল হয়। তাতে জলের ট্যাঙ্ক ও ফোমের ট্যাঙ্ক, উঁচু বাড়িতে পৌঁছনোর মই--সবই ছিল। তার বদলে যে ইঞ্জিন এসেছে তাতে ওই সব সুবিধা নেই। বহুতলে আগুন নেভাতে গেলে বা উঁচুতলা থেকে দুর্গতদের বের করার জন্য হাইড্রলিক মই জরুরি। কিন্তু তা নেই দমকলের হাতে। বিভাগীয় আধিকারিক তুষারকান্তিবাবু জানান, ইতিমধ্যে এ সব সমস্যা নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ব্যাপারে যা গাফিলতি রয়েছে, দ্রুত তা ঠিক করার উদ্যোগ হচ্ছে বলে জানান দুর্গাপুরের পুর কর্তৃপক্ষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.