জেলার কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদের ভোট আসন্ন। সে কথা মাথায় রেখে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ। যে কর্মসূচির দ্বিমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, পড়ুয়াদের নানা চাকরির পরীক্ষার ব্যাপারে কী ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সেই পরামর্শ দেওয়া এবং সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা। দ্বিতীয়ত, ওই কর্মসূচি রূপায়ণের সময়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে তা আগামী ছাত্র সংসদ ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলিও। পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “সব কলেজে ২ ঘণ্টার সেমিনার হবে। ছাত্র ছাত্রীদের কেরিয়ার কাউন্সিলিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে সচেতন করা হবে।”
কী ভাবে হবে কাউন্সেলিং? ‘ভিডিও স্ক্রিন’ ও ‘প্রোজেক্টর’ নিয়ে ঘুরবেন অফিসাররা। লক্ষ্য, ছাত্রছাত্রীদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া। নানা বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা। ২ ঘণ্টার সেমিনারে ফেসবুকে অশ্লীল ছবি দেওয়া, প্রোফাইল হ্যাক করে অন্যের নামে মন্তব্য করা, বা গোপনীয় তথ্য সর্বজনীন করে দেওয়ার মত ঘটনা রুখতে গোপনীয়তা বজায় রাখার কৌশল জানানো হবে। এ সপ্তাহে ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি কলেজ দিয়ে শুরু হবে এই প্রক্রিয়া। প্রতিটি কলেজেই হবে এই সেমিনার।
জলপাইগুড়ির ১৪টি কলেজে আগামী মাসে একই দিনে নির্বাচন হবে। শাসক দলের সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি জানি। আমরা পুলিশের সঙ্গে সহমত। কলেজে গিয়ে পুলিশ এই সেমিনার করলে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হবে, সংঘর্ষ মোকাবিলায় সুবিধে হবে।” পুলিশের ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলেছেন ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সৌমিত্র বন্দোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “পুলিশের দিক থেকে খুবই ভাল উদ্যোগ। তাঁরা নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেও শাসক দল কী থাকতে দেবে?”
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রদীপ দে মনে করেন, পুলিশের এই উদ্যোগ খুবই ভাল। তাঁর মতে, “আইএএস, আইপিএসের মতো পরীক্ষার পরামর্শ খুব একটা মেলে না, এতে ছাত্র ছাত্রীরা উপকৃতই হবে। তবে, পুলিশ কঠোর হলে এমনিতেই কলেজে গোলমাল এড়ানো যায়।” আরএসপির ছাত্র সংগঠন পিএসইউ জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার পুলিশের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও অন্য প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, “অনেক কলেজে ভোটে বহিরাগতরা গোলমাল পাকায়। বহিরাগতদের কী ভাবে আটকাবে পুলিশ?” পুলিশ দাবি করেছে, কলেজের ছাত্রছাত্রী যখন চেনা হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বহিরাগতকে চিহ্নিত করতে তাঁরা সাহায্য করবেন।
একাধিক কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশের কর্মসূচিতে উৎসাহী। জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজের অধক্ষ্য ধীরাজ বসাক বলেন, “অভিনব ব্যাপার। আমরা সব রকম সাহায্য করব।” |