রাষ্ট্রপতি শাসন চাওয়ার পরে এ বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ এনে পাহাড়-সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব পাহাড়ে টানা বন্ধ, সরকারি অফিস অচল করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে মোর্চা নেতাদের আলোচনার বসার ডাক দেন। তবে মোর্চা নেতারা জানিয়ে দেন, তাঁরা এখনই সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনায় যেতে রাজি নন।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদও। সোমবার পরিষদের শীর্ষ নেতারা এক বৈঠকের পরে জানিয়ে দেন, তাঁরা ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটকে সমর্থন করবেন। তাঁরা জানান, তরাই-ডুয়ার্সের কোনও বাগানে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ সমর্থকেরা কাজ করবেন না।
মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রীর অভিযোগ, “জিটিএ চুক্তির পরে একতরফা ভাবে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে সরকার আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই রাজ্যের সঙ্গে এখন কোনও আলোচনায় যাওয়ার প্রশ্নই নেই। তা ছাড়া রাজ্য সরকার লিখিতভাবে আলোচনার প্রস্তাব পাঠায়নি। তাই আমরা পাহাড়ের ব্যাপারে যা কথা বলার কেন্দ্রের সঙ্গেই বলব।” তবে কেন্দ্র ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ডাক দিলে সেখানে তাঁরা যেতে রাজি বলে মোর্চা নেতৃত্ব জানিয়েছেন। মোর্চার প্রচার সচিব বলেন, ‘‘কেন্দ্র ডাকলে আমরা যাব। সেখানে রাজ্যের প্রতিনিধিরা থাকলে তাঁদের সামনেই আমরা প্রমাণ করে দেব, কী ভাবে বারেবারে চুক্তি ভঙ্গ করে আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।”
তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব এখনই হাল ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলেছেন, “আমরা পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে আশাবাদী। মোর্চা নেতাদের বুঝতে হবে, পাহাড়ের মানুষ ওঁদের উন্নয়নের জন্য ভোটে জিতিয়ে জিটিএ-এর দায়িত্ব দিয়েছেন। আন্দোলনের ফলে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাবে।’’ তবে সর্বদল বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়ে গৌতমবাবু বলেছেন, “এটা নিয়ে কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নেই।”
সোমবার মালবাজারে বৈঠক করেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের শীর্ষ নেতারা। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকি বলেন, “ট্রেড ইউনিয়নগুলির দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। এতে চা শ্রমিকদের স্বার্থ যুক্ত। তাই ধর্মঘট সমর্থন করব। তরাই-ডুয়ার্সের কোনও বাগানে আমাদের সমর্থকেরা কাজ করবেন না।” তাঁর ক্ষোভ, “আলাদা গোর্খাল্যান্ডের তরাই-ডুয়ার্সের সংযুক্তির প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের রক্ত ঝরেছে। অথচ তরাই-ডুয়ার্সের সমস্যা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না সরকার। ডাকা হচ্ছে জন বার্লাকে। যিনি মোর্চার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এতদিন চলেছেন।” তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের এই ‘পক্ষপাতের’ বিরুদ্ধে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ প্রচার চালাবে। জন বার্লার অনুগামী চা শ্রমিক নেতা শুক্রা মুন্ডা অবশ্য বলেন “বন্ধ করে উন্নয়ন হয় না। তাই সব বাধা উপেক্ষা করে কাজে যোগ দেব।” একে পাহাড়ের সমস্যা ক্রমশ জটিল হচ্ছে, তার উপরে তরাই-ডুয়ার্সে আদিবাসীরা যুযুধান হলে আসন্ন গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে কী হবে তা নিয়ে জল্পনা চলছে সব মহলেই। |