ফাল্গুনের শুরুতেই হয়ে গিয়েছে এক পশলা বৃষ্টি। সোমবার সকালে আকাশে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি। এরই মধ্যে রেজিনগরের অকাল ভোটের প্রচারে ব্যস্ত কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেদের ‘হাই-প্রোফাইল’ নেতা নেত্রীরা। গালভরা অবাস্তব সব প্রতিশ্রুতির খই ফুটছে তাঁদের মুখে। কিন্তু এ তল্লাটের সব চেয়ে বড় সমস্যা পানীয় জলের সংকট নিয়ে কেতাদুরস্ত সাজে সজ্জিত নেতারা কোনও টুঁ শব্দটি অবধি করছেন না। অথচ ভাগিরথীর দুই পাড়-পূর্ব ও পশ্চিমে পানীয় জলের অভাবে জেরে অনেককে তা বাইরে থেকে কিনতে পর্যন্ত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “কেবল
ভোটের সময়ই এলাকায় পা পড়ে নেতাদের। তারপর সম্বৎসর পাত্তা পাওয়া যায় না তাঁদের। তাঁরা জানেনই না এলাকার সমস্যার কথা।” এই অঞ্চলে কাপাসডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সংকট সবচেয়ে তীব্র। সদ্য দলবদল করে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রধান সাজিবুর রহমান স্বীকারও করলেন সে কথা। তিনি বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট। সমস্যা এতটাই যে মানুষকে জল কিনতে পর্যন্ত হয়। পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। যে কটা রয়েছে সেগুলি আবার সংস্কারের অভাবে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।” পঞ্চায়ত কী করছে? প্রধান বলেন, “সমস্যা মোকাবিলায় গত কয়েক মাসে বসানো হয়েছে ৪টি গভীর নলকূপ। দরকার আরও বেশি। জেলা পরিষদের অচলাবস্থার দরুণ মিটছে না এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা। তবে গরমের আগে কিছুটা হলেও সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।” সিপিএমের বেলডাঙা-২ লোকাল কমিটির সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন, “কাপাসডাঙা ও বেগুনবাড়িতে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। সরকারী কোনও বড় পানীয় জলের প্রকল্প না থাকায় মিটছে না এই সমস্যা। তবে জেলা পরিষদ কাজ করছে। বছর খানেকের মধ্যে দূর হবে সমস্যা।” বেগুনবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের আসারুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা এমনই যে স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির কাছ থেকে এলাকার লোকজনকে ২৫ পয়সা প্রতি লিটার দামে জল কিনতে হয়। তবে বেগুনবাড়ি ও কাপাসডাঙা এলাকায় দু’টি জল প্রকল্পের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়ে গেলেও সমস্যা মিটবে।” তবে বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুখেন হালদারের অভিযোগ, “জল কষ্ট মেটাতে পিএইচই উদ্যোগ নিয়ে দু’টি রির্জাভার তৈরির স্থান বাছলেও সরকারের আর্থিক অসহযোগিতায় সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে না।”
এতো গেল ভাগিরথীর পূর্ব পাড়ের সমস্যার ইতিবৃত্ত। পশ্চিমপাড়ের সোমপাড়া, শক্তিপুর, দোপুকুরিয়া, মিঞা, ঘোল্লা, কাটাইকোনা অঞ্চলে পানীয় জলের আকাল তীব্র। কংগ্রেসের বেলডাঙা-২ (পশ্চিম) ব্লক সভাপতি ইন্দ্রনীল প্রামাণিক বলেন, “গরম না পড়তেই এলাকায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আগামী দিনে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করেন সিপিএমের রেজিনগর লোকাল কমিটির সম্পাদক বদরুউদ্দিন শেখ। তাঁর মত, “ভাগিরথীর পূর্ব পাড়ের পঞ্চায়েতগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা নেই বললেই চলে। বিগত সরকার ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হওয়া জল প্রকল্পের দরুন মানুষের জল কষ্ট মিটেছে। সে সব এলাকায় সেচের কাজে শ্যালো ব্যবহার হয় সেখানে জলে আর্সেনিকের সমস্যা রয়েছে।” পানীয় জল নিয়ে অন্য রকম সমস্যার কথা শুনিয়েছেন মীর্জাপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের জাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ভাগিরথীর পরিশ্রুত পানীয় জল পাওয়া যায় এখানে। তবে অনেক সময় জলের পাইপ ফেটে যায়। চুরিও হয়। তখম সাময়িক সমস্যা হয় মানুষের। অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণেও জল সরবরাহ ব্যাহত হয়। তবে পঞ্চায়েতের তরফে দ্রুত এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।” রেজিনগরের কাশীপুর পঞ্চায়েতে পানীয় জল অপ্রতুল না হলেও রয়েছে আর্সেনিকের থাবা। পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আনিসুর রহমান বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা বলতে মূলত আর্সেনিকের সমস্যা। নলকূপ বিকল হয়ে পড়লে অনেক সময় তা সারাতেও দেরি হয়। তবে সামগ্রিকভাবে হাল ভাল।” পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের টুম্পা মণ্ডল বলেন, ‘‘কর্মীভাবে বিকল নলকূপের মেরামতিতে মাঝেমধ্যে বিলম্ব হয়। তবে সমস্যার আশু সমাধানে আমরা আন্তরিক।” |