রেজিনগর উপনির্বাচনে
‘বেইমানি’র হিসেব নিতে
যুযুধান দুই সেনাপতি
তাঁরা কেউই প্রার্থী নন। কিন্তু বসন্তের এই অকাল ভোটে লড়াইটা আসলে মুর্শিদাবাদের ‘রবিনহুডে’র সঙ্গে নন্দীগ্রামের ‘অগ্নিপুত্রে’র! দু’জনেই রেজিনগর চষে বেড়াচ্ছেন। পোস্টারে, ব্যানারে, দেওয়াল লিখনে দু’জনের উপস্থিতি প্রার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি।
রেজিনগরের উপনির্বাচন এ বার কংগ্রেস ও তৃণমূলের কাছে সম্মানের লড়াই। প্রত্যাশিত ভাবেই দলের মান রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে। মুর্শিদাবাদে যাঁর আর এক পরিচয় ‘রবিনহুড’ হিসেবেই। তাঁর সঙ্গে লড়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেজিনগরে পাঠিয়েছেন নন্দীগ্রামের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারীকে। মুকুল রায়, সুলতান আহমেদের মতো শীর্ষ তৃণমূল নেতারা ময়দানে থাকলেও মূল দায়িত্বে শুভেন্দুই।
রেজিনগরে দলীয় প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীকে জিতিয়ে আনতে পারলে মুর্শিদাবাদে নিজের জমি অটুট রাখা তো বটেই, পঞ্চায়েত ভোটে সারা রাজ্যেই কংগ্রেসকে অক্সিজেন জোগাতে পারবেন অধীর। অন্য দিকে, রেজিনগর দখল করতে পারলে মুর্শিদাবাদের অধীর-সাম্রাজ্যে জব্বর ঘা দিতে পারবেন মমতা। জেলার ২২ কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলের ‘শিবরাত্রির সলতে’ সাগরদিঘির বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুব্রত সাহা যে জন্য বলছেন, “অধীর-দুর্গের দেওয়াল থেকে পাথর খসানোর কাজ আমরা শুরু করেছি। গত বিধানসভা ভোটে আমি জিতেছি। এ বার রেজিনগর থেকে হুমায়ুন কবীরকে জিতিয়ে আর একটা পাথর সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি!”
হুমায়ুন মাস চারেক আগেও ছিলেন অধীরের ‘বিশ্বস্ত’। ছিলেন রেজিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। মমতা তাঁকে ‘ইনাম’ দিয়ে তাঁর সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী করেছেন। আর সেই কারণেই অকাল ভোট হচ্ছে রেজিনগরে।
হুমায়ুনের হয়ে রেজিনগর চষে ফেলছেন শুভেন্দু। একের পর এক সভা করে দলীয় কর্মীদের বোঝাচ্ছেন, অধীর কোনও ‘ফ্যাক্টর’ নন। হুমায়ুনের মতো কংগ্রেসের একাধিক জেলা পরিষদ সদস্য দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন দাবি করে শুভেন্দুর বক্তব্য, জেলায় সংঘঠন ধরে রাখতে পারছেন না অধীর। সুতরাং তাঁকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তমলুকের সাংসদের সেই বক্তব্য খারিজ করে বহরমপুরের সাংসদ পাল্টা জানাচ্ছেন, এখনও জেলার পঞ্চায়েত সমিতি থেকে শুরু করে গ্রাম পঞ্চায়েত, স্কুল কমিটির পরিচালন সমিতি, কলেজের ছাত্র সংসদের সিংহ ভাগই রয়েছে কংগ্রেসের দখলে।
কংগ্রেস-তৃণমূলের এই লড়াইয়ে রুপোলি রেখার আভাস দেখতে পাচ্ছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী, আরএসপি-র সিরাজুল ইসলাম। বিশ মাস আগের ভোটে হুমায়ুনের কাছে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সিরাজুলই হেরেছিলেন ৮,৭৬১ ভোটে। এ বার তাঁদের অবস্থা ভাল দাবি করে তিনি বলেন, “কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের জনবিরোধী নীতিতে মানুষ দিশাহারা। অন্য দিকে, মমতার সরকারের কাজকর্ম যে ভাবে আইনশৃঙ্খলা থেকে শিল্পায়নের সম্ভাবনা চৌপাট করে দিয়েছে, তা দেখে রেজিনগরের মানুষ এ বার পরিবর্তন চাইছেন!”
আবার কংগ্রেস-তৃণমূল-বামেদের বদলে ‘প্রকৃত বিকল্প’ খুঁজতে মানুষ এখন তাঁদের উপরে ভরসা করছে বলে বিশ্বাস রেখে ময়দানে আছেন বিজেপি-র অরবিন্দ বিশ্বাস। কার্গিল যুদ্ধে বাটালিক সেক্টরে কাজ করে আসা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মী অরবিন্দবাবু গত বারও রেজিনগরে ভোট-যুদ্ধে নেমেছিলেন। ভোট পেয়েছিলেন ৪.১২%। এ বার তাঁদের ভোট বাড়বেই বলে দাবি করছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি রাহুল সিংহ থেকে শুরু করে জেলার নেতা মলয় মহাজন। কয়েক মাস আগে জেলার জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি-র ভোট বৃদ্ধিতে উৎসাহিত তাঁরা।
তবে বাম বা বিজেপি নেতারা যা-ই বলুন, মীরজাফরের স্মৃতিবিজড়িত মুর্শিদাবাদের এই কেন্দ্রে সাধারণ মানুষের কাছে যাবতীয় চর্চার বিষয় অধীর-হুমায়ুনের ‘বিচ্ছেদ-বেইমানি’র কাহিনিই! অধীর বলছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। কারণ তিনি আমাকে বেইমানকে (হুমায়ুন) চিনতে সাহায্য করেছেন!”
হুমায়ুনও পাল্টা বলছেন, “অধীর চৌধুরীর ৬ কোটি টাকার ঠিকাদারি ব্যবসা বাড়িয়ে ২৮ কোটি করেছিলাম। আমাকে অপমান করে তার ইনাম দিয়েছেন অধীর চৌধুরী! রেজিনগরের মানুষই রায় দেবেন কে বেইমান আমি, না অধীর চৌধুরী!”

বিষয়আশয়
হুমায়ুন কবীর
২০১৩ ২০১১
• মোট আয় (২০১০-১১) ২,৯০,৯৯৪
• নগদ ৪ লক্ষ
• ব্যাঙ্ক এবং অন্যত্র জমা ৪,৬৮,৩৮৭
• বিমা এবং অন্যান্য ১৫,৫২,৫১৬
• অলঙ্কার ৪,৭৯,৫০০
• স্থাবর সম্পত্তি ১,০৪,০৪,০০০
• মোট সম্পত্তি ১,৪৪,৮৯,৪০৩
• মোট আয় (২০০৯-১০) ২,৯০,৯৯৪
• নগদ ১ লক্ষ
• ব্যাঙ্ক এবং অন্যত্র জমা ৫৭,৫৩৭
• বিমা এবং অন্যান্য ৭,৮৫,২৪০
• অলঙ্কার ১,৬০,০০০
• স্থাবর সম্পত্তি ৩৯,৫০,০০০
• মোট সম্পত্তি ৬৩,৯৯,৭৭৭
স্ত্রী মীরা সুলতানা
২০১১-১২ ২০০৯-১০
• মোট আয় ২,৮৩,৫৯৪
• নগদ ৫০,০০০
• মোট সম্পত্তি ৫৩,৩৩,৮৪৩
• মোট আয় ৬৭,৫৫০
• নগদ ১৫,০০০
• মোট সম্পত্তি ৩৩,৩৯,০০০
ছেলে গোলাম নবি আজাদ
২০১৩ ২০১১
• মোট সম্পত্তি ৩৬,১১,৯১৯ • মোট সম্পত্তি ৫,৪২,০৮৮
মেয়ে নাজমা সুলতানা
২০১৩ ২০১১
• মোট সম্পত্তি ২,০৮,০০০ • মোট সম্পত্তি ৪০,০০০
* হিসেব টাকার অঙ্কে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.