|
|
|
|
জঙ্গলমহলে তৃণমূল |
মুকুল-শুভেন্দু গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বই মাথাব্যথা |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
তৃণমূলের দুই শীর্ষনেতার অনুগামীদের কাজিয়ায় জঙ্গলমহলের পঞ্চায়েত ভোটে অশনি সঙ্কেত দেখছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য যুব তৃণমূল সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীকে জঙ্গলমহলের দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বিধানসভা ভোটেও শুভেন্দুকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গলমহলের পাঁচটি আসনে দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে নেত্রীর মানরক্ষা করেন তমলুকের সাংসদ।
কিন্তু গত ১৯ মাসে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক বার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের গোষ্ঠীর সঙ্গে শুভেন্দু শিবিরের দ্বৈরথ প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছে গত বুধবার জামবনিতে কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার সভায়। পঞ্চায়েত ভোটের এই প্রাক-প্রচারে সিঙ্গুর থেকে ‘লড়াকু’ নেতাকে এনেও কোন্দল সামাল দেওয়া যায়নি। বিষয়টি অনুধাবন করে কর্মীদের চাঙ্গা করতে খুব শিগগিরই জঙ্গলমহলে আসছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। লালগড়-সহ জঙ্গলমহলের একাধিক জায়গায় তিনি ‘কর্মী সচেতন সভা’ করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, গোষ্ঠী কোন্দলের ফলে জঙ্গলমহলে সিপিএম-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সাংগঠনিক ভাবে ফের শক্তি সঞ্চয় করছে। সেই সঙ্গে, বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ফের মাওবাদীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি লালগড়ে দক্ষিণশোল ও পূর্ণাপাণির জঙ্গলেও মাওবাদীরা গোপন বৈঠক করেছে বলে খবর। পঞ্চায়েত ভোটে মাওবাদীরা তাদের চিরাচরিত অবস্থান অনুযায়ী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে সাহায্য করতে পারে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে একজোট হয়ে লড়তে না পারলে দলের নিচুতলায় ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। সেই কারণেই রাজ্য নেতৃত্বকে দিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানার চেষ্টা হচ্ছে।”
আড়াই মাস আগে জামবনির এক ঝাড়খণ্ডী নেতা তথা জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা অর্জুন হাঁসদা তৃণমূলে যোগ দেন। গত বছর ২ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রামের চন্দ্রি এলাকায় মুকুল রায়ের জনসভায় তিনি প্রকাশ্যে দলবদল করেন। দলের কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের জামবনি ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এতে শুভেন্দু শিবিরের গোসা হয়। যে কারণে গত বুধবার জামবনি ব্লকের বাহিরগ্রামে কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত কৃষি প্রতিমন্ত্রীর জনসভায় মাঠ ভরাতে তাঁরা উদ্যোগী হননি। অথচ ওই দিনই বেলিয়াবেড়ার মহাপালে বেচারাম মান্নার জনসভায় ভাল লোক হয়েছিল।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে শুভেন্দুর হাত ধরে একাধিক ‘প্রাক্তন মাওবাদী’ শাসকদলে যোগ দেন। এক সময়ে যাঁদের বিরুদ্ধে খুন-সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদেরই নেতা হতে দেখে লালগড়ের বৈতা, ধরমপুর ও কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চলে তৃণমূলের জনসমর্থনে কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। মুকুল ও শুভেন্দু অনুগামী দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জেরে জঙ্গলমহলে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা যায়নি বলেও দলের একাংশের দাবি। তুলনায় ‘নিরপেক্ষ’ এক জেলা নেতার বক্তব্য, দলের দুই গোষ্ঠীর ‘তাজা ছেলেদের’ দাপটে ‘কাজের মানুষেরা’ বসে গিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে দলেরই মুখ পুড়ছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এখন রাজ্য নেতৃত্বকে দিয়ে জঙ্গলমহলের সর্বস্তরে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, ‘নিজের নাক কেটে, বিরোধীদের সুবিধে পাইয়ে দেওয়া চলবে না। কাজের মানুষদের সুযোগ দিতে হবে।’ |
|
|
|
|
|