চাকরি চাইছেন জঙ্গলমহলের স্বজনহারারা
‘শহিদ পরিবার’কে হাতিয়ার করে জঙ্গলমহলে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিপিএম। সেই প্রক্রিয়ারই সূচনা হল সোমবার। চাকরির দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিলেন জঙ্গলমহলে মাওবাদী নাশকতায় নিহত সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের পরিজনেরা। আগামীতে তাঁরা মহাকরণ অভিযানও করবেন। এই সব স্বজনহারাদের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, জঙ্গলমহল হাসছে। আসলে জঙ্গলমহল নয়, খুনিরা হাসছে। যাঁরা আমাদের স্বামী-পুত্রকে খুন করল, সেই সব মাওবাদীদের চাকরি দেওয়া হল, তাঁদের ছেলেকে কোলে নিয়ে হাসতে হাসতে মঞ্চে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর, যাঁরা খুন হলেন, তাঁদের বাড়ির লোক কিছুই পেলেন না!”
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মাওবাদী হানায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিন্তু ইন্দ্রাণী মাইতি, মমতা মাইতি, প্রিয়াঙ্কা মাহাতোরা বলেন, “মাত্র ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আতঙ্কে এখনও বাড়িতে থাকতে সাহস হয় না। জমিও কম। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংসার চালাব কী করে?” তাই চাকরির দাবি নিয়ে এ দিন নিহতদের পরিবারের তিরিশ জন সদস্য স্মারকলিপি দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনিকে।
ডিএম অফিসের সামনে নিহতদের পরিজনেরা।
এ দিনের এই কর্মসূচিতে কোনও সিপিএম নেতাকে দেখা যায়নি। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ সমর্থন করছে দল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “এটা তো সঙ্গত দাবি। কেন এই সব শহিদ পরিবার চাকরি পাবে না?” তাহলে কি সামনে থেকে এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেবেন? জবাব এড়িয়ে দীপকবাবুর বক্তব্য, “মাওবাদীদের প্যাকেজ ও চাকরি দেওয়াটাই প্রমাণ করে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ রয়েছে। জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা এখনও রয়েছে। তবে তাঁদের হাতে এখন তৃণমূলের পতাকা। সে জন্যই যারা খুন করল তারা চাকরি পেল, যারা খুন হল তারা পেল না।” চাকরির দাবি নিয়ে মুখ না খুললেও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “যাদের যা পাওনা রয়েছে, জেলা প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে দিয়ে দেওয়া।” অতিরিক্ত জেলাশাসক সাধারণ) জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের টাকা যেমন আসছে, তেমনই মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে চাকরির বিষয়টি জেলা প্রশাসনের হাতে নেই। দাবির কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
দীপকবাবু সরাসরি না মানলেও দলীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলে এই বিষয়টিকেই তুরুপের তাস করতে চাইছে সিপিএম। মাওবাদী নাশকতার পর্বে জঙ্গলমহলে সাড়ে তিনশোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের অধিকাংশই সিপিএম নেতা-কর্মী-সমর্থক। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের পর মাওবাদী হামলায় নিহতদের ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পুলিশের পক্ষ থেকেও ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়। পুলিশের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ। তবে কেন্দ্রের ক্ষতিপূরণের টাকা অনেকেই পাননি। তালিকায় অনুযায়ী মোট ২৭৩ জনের এই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। পেয়েছেন ১২৬ জন। ১১৯ জনের ক্ষতিপূরণের অর্থ চাওয়া হয়েছে। আর ২৮ জনের ক্ষেত্রে নথি সংগ্রহের কাজ চলছে। নথি সংগ্রহ হয়ে গেলেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন জানানো হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। কিন্তু শুধু ক্ষতিপূরণে সন্তুষ্ট নন নিহতদের পরিজনেরা। মাওবাদী হামলায় নিহত যতীন্দ্রনাথ মাহাতোর ছেলে মন্মথ, নিহত কালীশঙ্কর মাহাতোর ছেলে জগদীশদের দাবি, “চাকরি দিতে হবে।” এই দাবি নিয়েই মহাকরণ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জঙ্গলমহলের এই স্বজনহারারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.