রাকেশ ধ্রুবের নাম ভারতীয় ক্রিকেটমহল কতটা শুনেছে? কিংবা জলজ সাক্সেনার নাম? গুজরাতের বত্রিশ ছুঁইছুঁই বাঁহাতি স্পিনার আর মধ্যপ্রদেশের বছর ছাব্বিশের অফস্পিনারকে সামলাতে গিয়েই ফলো-অন খেয়ে বসল অস্ট্রেলিয়া। সেই চেন্নাইয়ে। যেখানে বাহাত্তর ঘণ্টা পরেই ক্লার্ক-বাহিনীকে নামতে হবে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে। চিপকের সম্ভাব্য ঘূর্ণি উইকেটে অশ্বিন-ওঝা এবং খুব সম্ভবত হরভজনদুঁদে স্পিনার ত্রয়ীর বিপক্ষে।
তার আগে এ দিন ভারত ‘এ’-র দুই অনামী স্পিনারকে ন’উইকেট দিল অস্ট্রেলিয়া। ৪৫১-র জবাব দিতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৩৫ রানে মুড়িয়ে যাওয়ার পর ফলো-অন করে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৯৫-৩ তুললে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ মামুলি ড্র হয়ে যায়। কিন্তু উপমহাদেশের উইকেটে স্পিন বোলিং খেলা নিয়ে ক্লার্কের ড্রেসিংরুমে খানিকটা ঠকঠকানি লেগে থাকলে অবাকের কিছু নেই। কোনও এক রাকেশ ধ্রুব-ই তো প্রথম ইনিংসে ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে গেলেন। আর অন্য প্রান্ত থেকে জলজ সাক্সেনা ৬১ রানে তুলে নিলেন ৪ উইকেট। দু’ইনিংসে দুই ওপেনার (ওয়াটসন করেন ৮৪ ও ৬৯ এবং কাওয়ান ৪০ ও ৫৩) বাদে এই অস্ট্রেলিয়ার কোনও ব্যাটসম্যানকে এখনও অবধি এ দেশের উইকেটে স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে না। |
কিন্তু তাতে কী? অস্ট্রেলিয়া শিবির থেকে ভারতের দিকে কথার গোলাগুলি ছোড়ায় ক্ষান্তি নেই। বিখ্যাত ‘অজি মাইন্ড গেম’ অব্যাহত রাখতে এ দিন ডেভিড ওয়ার্নার (যাঁর কি না চোটের জন্য প্রথম টেস্ট খেলাই অনিশ্চিত) বলেছেন, “চাপে তো ভারতই আছে। বিশেষ করে ধোনির দলের সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজে পারফরম্যান্সের পরে। ইংল্যান্ড আর আমাদের দেশে গিয়ে হেরে আসার পরে ওরা ঘরের মাঠেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে। ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানো এখনও বিরাট ব্যাপার জানি। তবে আমাদের দলেও জেতার মতো রসদ আছে। আমাদের পেস বোলিং ভারতের চেয়ে ভাল আর আমাদের ব্যাটসম্যানরা রানের মধ্যে আছে।”
উসমান খোয়াজা অবধি চুপ নেই। চেন্নাইয়ের প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁর রান ১ এবং ৩০ নট আউট। তাতেই বলেছেন, “প্রথম টেস্টে নামার আগে আমরা যথেষ্ট ম্যাচ প্র্যাক্টিস পেয়েছি। ভারতের পিচে ভারতীয় স্পিনারদের খেলতে আমরা তৈরি। ভারতীয় স্পিনাররাই বরং চাপে থাকবে। কারণ টেস্ট সিরিজে উইকেট স্পিন সহায়ক হবে ধরেই নেওয়া যায়। ভারতীয় স্পিনারদের ওপর দেশবাসীর প্রচণ্ড প্রত্যাশা থাকবে। ফলে ওদের উইকেট নিয়ে দেখাতে হবে। সেই চাপকে ওরা কী ভাবে সামলায় দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।” |
অস্ট্রেলীয়দের এ সব কথার থেকে অবশ্য বেশ কয়েকশো মাইল দূরে রয়েছে টিম ধোনি। আজই বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় দলের তিন দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প শেষ হল। শেষ দিন দুপুরে একটা সেশনেই অনুশীলন হয়েছে। এবং ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি পৌঁছেই জাতীয় ক্রিকেটাররা সটান নেটে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনে নেমে পড়েন। এবং পরের আড়াই ঘণ্টা সচিন, কোহলি, রাহানে, বিজয়, সহবাগ, পূজারাদের যে বলই করুন না কেন ভুবনেশ্বর, দিন্দা, ইশান্ত, অশ্বিন বা ওঝাপ্রায় সব শট ‘ভি’-এর মধ্যে খেলতে দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের। তার মধ্যেই সচিনকে দেখা গিয়েছে, তিনটে পৃথক ব্যাট নিয়ে তিনটে আলাদা নেটে আলাদা বোলারদের বিরুদ্ধে খেলতে। তবে সচিন যদি ৪৫ মিনিট ব্যাট করেন আজ, তা হলে হরভজনকে এক ঘণ্টা ব্যাটিং অনুশীলন করতে দেখা গিয়েছে। নেটে আজ তিনি বোলিং করেছেন একেবারে শেষের দিকে। আর ধোনি? প্র্যাক্টিসে হাজির থাকলেও ভারত অধিনায়ককে একবারও নেটে ব্যাট বা কিপিং গ্লাভস হাতে দেখা যায়নি। এ দিকে, ম্যাকগ্রা মনে করছেন, আসন্ন সিরিজে ধোনি আর ক্লার্কদুই অধিনায়কের নেতৃত্ব-মানের লড়াইটাই মুখ্য হয়ে উঠবে। “ধোনি সম্প্রতি টেস্ট সিরিজ হারের জন্য চাপে থাকবে। কিন্তু ও আক্রমণাত্মক ক্যাপ্টেন। প্রচণ্ড ভাবে চাইবে এই সিরিজটা জিতে আগের ব্যর্থতা ভুলতে। অন্য দিকে ক্লার্কের গত বছরটা দারুণ গিয়েছে। ও-ও চাইবে সেই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে। ফলে দুর্দান্ত একটা সিরিজ হতে চলেছে। যেখানে দুই অধিনায়কের মস্তিষ্ক বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে,” বলেছেন প্রাক্তন কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় পেসার।
|