গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবার চোখ যদি ম্যান ইউ-রিয়াল মাদ্রিদ লড়াইয়ের দিকে থাকে, তা হলে এ সপ্তাহে ফুটবলমহলের নজর বার্সেলোনা-এসি মিলান যুদ্ধের দিকে। মঙ্গল-বুধবার মিলিয়ে শেষ ষোলোর আরও তিনটে ম্যাচ আছে। তার মধ্যে মঙ্গলবার রাতেই আর্সেনাল বনাম বায়ার্ন মিউনিখ হাইভোল্টেজ ম্যাচ। সঙ্গে পোর্তো বনাম মালাগা। বুধবার যেমন আছে গালাতাসারে-শালকে। কিন্তু একই সঙ্গে ভারতীয় সময় রাত সোয়া একটায় ইতালির সান সিরো স্টেডিয়ামে যখন লিও মেসির বার্সা মিলানের চ্যালেঞ্জ সামলাতে নামবে, নির্ঘাত অনেক ফুটবলপ্রেমীই উল্টো দিকে খুঁজবেন মারিও বালোতেলিকে। |
তাৎপর্যের ব্যাপার, ম্যাচটা মেসি বনাম মারিও হচ্ছে না। কারণ, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মারিও বালোতেলি ‘কাপ টায়েড’-এর জালে ফেঁসে এই মহাযুদ্ধের বাইরে। আসলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরই বাইরে। বদমেজাজি বালোতেলি ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল মরসুমের মাঝপথে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দেওয়ার পর তিনটে ম্যাচে চার গোল করে তাঁর নতুন দলকে টানা জিতিয়েছেন ইতালিয়ান লিগ সেরি ‘এ’-তে। কিন্তু উয়েফা-র আইনে বালোতেলি একই টুর্নামেন্টে সেই মরসুমেই দু’টো ভিন্ন টিমের হয়ে খেলতে পারবেন না। ফলে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র হয়ে এ মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে খেলার পরে একই মরসুমে সেই টুর্নামেন্টেরই নক আউট পর্বে এসি মিলানের জার্সি পরার অধিকার হারিয়েছেন তিনি।
ফলে মিলান কোচ আলেগ্রি হন্যে হয়ে ‘প্ল্যান বি’-র খোঁজ চালাচ্ছেন। বার্সা বনাম মিলান মহালড়াই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেন গত কয়েক বছরে প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয় এই দুই মেগাটিম লটারিতে একই গ্রুপে পড়েছে। কিংবা নক আউটে মুখোমুখি হয়েছে। আর সেখানে যথারীতি মেসির বার্সার দাপট। শেষ সাতটা লড়াইয়ে মিলান হারাতে পারেনি বার্সাকে। গত মরসুমে গ্রুপ লিগে দু’দলের লড়াই দু’বারই ড্র থাকলেও বার্সা তার আগে চার বার জিতেছে। তার মধ্যে ২০১১-’১২ কোয়ার্টার ফাইনালে এবং ২০০৫-’০৬ সেমিফাইনালে বার্সার হাতে ছিটকে যেতে হয়েছে মিলানকে। এ বার, ২০১২-’১৩ মরসুমে দুই হাইভোল্টেজ টিমের নক আউটের লড়াই আরও আগে। শেষ ষোলোয়। এবং বার্সার হাতে নক-আউট হওয়ার লজ্জার হ্যাটট্রিক আটকাতে মিলান মরিয়া।
ইতালিয়ান টিমের পক্ষে সুখবর, কাতালানদের মাঝমাঠের সেরা গেমমেকার জাভি এই ম্যাচে ঘোরতর অনিশ্চিত। লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়া ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার পর গত শনিবার স্প্যানিশ লিগে গ্রানাডা ম্যাচেও বার্সার স্কোয়াডে রাখা হয়নি জাভিকে। সহকারি কোচ রৌরা বলেছেন, “জাভি নিয়ে সত্যিই আশঙ্কা আছে আমাদের মিলান ম্যাচে।” যেটা বলেননি সেটা হল, মেসি যথারীতি গোল-রথে চড়ে দৌড়লেও, বার্সার ডিফেন্স এই মরসুমে বেশ নড়বড়ে। পুয়োল থাকা সত্ত্বেও ন’টা ম্যাচে বার্সার জালে নিদেনপক্ষে এক বার বল বিপক্ষ ঢুকিয়েছেই। মিলান মিডফিল্ডার ফ্লামিনি আর্সেনালে ফাব্রেগাসের পাশে খেলতেন। |
তিনি বলছেন, “ফাব্রেগাস বার্সায় গিয়ে নিজের ডিফেন্সিভ ভূমিকা ভুলেই গিয়েছে। যেটা ওদের বিপদ ডেকে আনতে পারে।” বার্সার ডিফেন্স-দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে মিলান আক্রমণে তিন জনকে রাখতে পারে। কেভিন বোয়েতেং এবং এম’বায়ে নিয়াং-এর মাঝে পাজিনি। যে সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড পজিশনে গত চারটে ম্যাচে খেলে বালোতেলি ঝড় তুলে দিয়েছিলেন মিলান সমর্থকদের হৃদয়ে। তাৎপর্যের হল, পাজিনি মিলানের শেষ তিন ম্যাচে একটা মিনিটও খেলেননি। তবে তা সত্ত্বেও তিনি এ মরসুমে মিলানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (১০)। ১৫ গোল করা শারওয়ে-র পরেই। শারওয়ে-কে কোচ আলেগ্রি পরিবর্ত হিসেবে ব্যবহার করতে চান এই মহাম্যাচে। যিনি বলেছেন, “বালোতেলি আমাদের টিমে এসে ইব্রাহিমোভিচের ভূমিকা নিয়েছে। যে ‘এক্স ফ্যাক্টর’টা ছিল ইব্রা। তবে পাজিনি-ও বার্সা ম্যাচে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হতে পারে।” |